সঙ্কটই কাটছে না চা নিলামকেন্দ্রের

সঙ্কট কাটার কোনও লক্ষণ নেই জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির কেন্দ্রে নিলামের জন্য ১৪০৩৬ কেজি চা পাতা এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৯৮৩০ কেজি। নিলামে ২০ ক্রেতা অংশ নিয়েছিলেন। নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ জুন নিলামে ২৩ হাজার কেজি চা এসেছিল জলপাইগুড়িতে। এ দিন সেই পরিমাণ কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০১:৫৯
Share:

সঙ্কট কাটার কোনও লক্ষণ নেই জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের। মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির কেন্দ্রে নিলামের জন্য ১৪০৩৬ কেজি চা পাতা এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৯৮৩০ কেজি। নিলামে ২০ ক্রেতা অংশ নিয়েছিলেন। নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ জুন নিলামে ২৩ হাজার কেজি চা এসেছিল জলপাইগুড়িতে। এ দিন সেই পরিমাণ কমে অর্ধেক হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

জলপাইগুড়ি চা নিলাম কেন্দ্রের এই সঙ্কট জন্মলগ্ন থেকেই। ২০০৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি জলপাইগুড়ি কেন্দ্র উদ্বোধন হয়। তার পর থেকে কোনও বছরই নিলামের নির্ধারিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনি এই কেন্দ্র। জলপাইগুড়ি জেলা ‘চায়ের জেলা’ বলেই পরিচিত। গত কয়েক বছরে চা পাতার সামগ্রিক উৎপাদন কমার তথ্য নেই। জেলায় ৬৫টি বটলিফ কারখানা রয়েছে। এই কারখানা থেকে বছরে গড়ে ৪৫ মিলিয়ন কেজি চা পাতা বের হয়, তাও কমার ইঙ্গিত নেই। তবে জলপাইগুড়ি কেন্দ্রে এই সঙ্কট কেন?

ক্রেতা-বিক্রেতারা সঙ্কটের কারণে পরস্পরের দিকেই ইঙ্গিত করেছে। ক্রেতার দাবি, বিক্রেতারা চা পাঠাচ্ছেন না। অন্য দিকে, বিক্রেতাদের যুক্তি, নিলাম কেন্দ্রে ক্রেতা না থাকলে বেশি পরিমাণে চা পাতা পাঠিয়ে লাভ হবে না। নিলাম কেন্দ্রের ক্রেতাদের অন্যতম রবি অগ্রবালের কথায়, “পর্যাপ্ত চা না আসাটাই সঙ্কট। বিক্রেতাদের সংখ্যা বাড়লে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।” অন্য দিকে, বটলিফ ফ্যাক্টরি মালিক সংগঠনের সভাপতি সঞ্জয় ধানুটিয়া বলেন, “ক্রেতা না পেলে চা বিক্রি কমে যাবে। বেশি পরিমাণে চা পাঠিয়ে কী লাভ হবে?” যদিও সমস্যাটি মূলত পরিকাঠামোর বলে অভিযোগ। কারণ জলপাইগুড়িতে চা রাখার গুদামের সংখ্যা কম। নিলাম কেন্দ্র শুরুর পরে, কোনও বছরই কর ছাড়ের সুযোগ মেলেনি। তাই নতুন ক্রেতা-বিক্রেতাকে কেন্দ্রে টানা যায়নি বলে অভিযোগ। চিরাচরিত শিলিগুড়ি, কলকাতা ছেড়ে কেউ জলপাইগুড়ি আসতে রাজি নন।

Advertisement

সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি নিলাম কেন্দ্রের সচিব নিরঞ্জনকুমার বসু। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠানটি চালু করার জন্য বিশেষ কর ছাড়ের ব্যবস্থা নেওয়া যে জরুরি সেটা সত্যি। অন্তত ১ শতাংশ বিক্রয় কর ছাড়ের ব্যবস্থা হলেও আকর্ষণ বাড়বে। এ জন্য রাজ্য সরকারের কাছেও প্রস্তাব পাঠানো রয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তাঁর কথায়, “কর ছাড়ের জন্য তদ্বির চলছে। প্রতিষ্ঠাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।” নিলাম কেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, চা উৎপাদনকারী বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে।

এই অবস্থায়, সদ্যগঠিত জেলা আলিপুরদুয়ার আরও একটি চা নিলাম কেন্দ্রের দাবি তুলেছে। আলিপুরদুয়ার জেলায় ৬৮টি বাগান রয়েছে। বর্তমানে বাগানগুলির চা শিলিগুড়ি না হলে, জলপাইগুড়ি নিয়ে যেতে হয়। দূরত্বের কারণে যা সমস্যাজনক বলে চা শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের দাবি। পরিবহণ খরচও বেড়ে যায়। সে জন্য আলিপুরদুয়ারেও নিলাম কেন্দ্র চেয়ে সরব বাসিন্দারা।

আলিপুরদুয়ারে চা নিলাম কেন্দ্রের পরিকাঠামোও রয়েছে বলে চা বাগান কর্তৃপক্ষের একাংশের দাবি। মাত্র ৩২ কিমি দূরে কোচবিহার বিমানবন্দর। সেই সঙ্গে নতুন গুদামঘর তৈরিও খুব একটা সমস্যা হবে না বলে শিল্পমহল মনে করছে। ১৭১ কিলোমিটার দূরে শিলিগুড়ি নিলাম কেন্দ্রে পাঠানো হয় চিনচুলা চা বাগানের চা পাতা। ওই বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার রাম পাণ্ডে বলেন, “আলিপুরদুয়ারে নিলামকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ আছে। সরকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন করলে প্রচুর চা সেখানে যাবে। পরিবহণ খরচ অনেকটাই কমবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement