তার কেটে সিগন্যালের সবুজ আলো লাল করে ট্রেন থামিয়ে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সোনার গয়না এবং নগদ টাকা লুঠের অভিযোগ উঠল মালদহে। শনিবার সকালে কালিয়াচকের জামিরঘাটা স্টেশনের কাছাকাছি লাল সিগন্যাল দেখে ট্রেন থামান নিউ জলপাইগুড়ি থেকে হাওড়াগামী শতাব্দী এক্সপ্রেসের চালক। অভিযোগ, সেই সময় পাশের আমবাগানে অপেক্ষা করে থাকা সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা ট্রেনে উঠে মালদহ সদরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী সুনীল সরকারের কাছে থেকে ওই সোনা ও টাকা লুঠ করে। কিন্তু দিনের আলোয় দুষ্কৃতীরা কী ভাবে তার কেটে কাজ হাসিল করল, তা ধন্দে ফেলেছে রেল পুলিশকে।
পূর্ব রেলের ডিআরএম (মালদহ) রাজেশ অর্গাল বলেন, “দুষ্কৃতীরা সিগন্যালের তার কেটে দিয়েছিল। তার কাটলে সবুজ সিগন্যাল লাল হয়ে যাবে। ওরা সে-ই সুযোগটাই নিয়েছে।” কিন্তু যে এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে, জামিরঘাটা স্টেশন সেখান থেকে বড়জোর ২০০ মিটার দূরে। এলাকাটি জনবিরলও নয়। তা ছাড়া, রেল সূত্রের দাবি, সিগন্যালের তার কাটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার এবং এ ধরনের কাজে পেশাদারি দক্ষতা লাগে। সেই সব সূত্র ধরেই মালদা টাউন স্টেশনের রেল পুলিশের আইসি কৃষ্ণগোপাল দত্ত বলেন, “এ ভাবে তার কেটে সিগন্যাল বদলানো সাধারণ কাজ নয়। এই ঘটনায় রেলের কেউ জড়িত রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পূর্ব রেলের আর একটি সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ট্রেনে থাকা রেলকর্মীদের একাংশ কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন, শতাব্দী এক্সপ্রেসের ‘চেন’ও টানা হয়েছিল। তদন্তে সে-ই বিষয়টিও মাথায় রাখছে রেল পুলিশ। রেল পুলিশ সুপার (শিলিগুড়ি) দেবাশিস সরকার বলেন, “সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীরা ব্যবসায়ীর গতিবিধি নজরে রাখছিল বলেই মনে হচ্ছে।”
মালদহ সদরের ঝলঝলিয়ার বাসিন্দা সুনীলবাবুর শহরে বড় সোনার দোকান রয়েছে। রেল পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, ‘হলমার্ক’ বসানোর জন্য তিনি এ দিন সোনার গয়না নিয়ে কলকাতায় যাচ্ছিলেন। মালদহ থেকে শতাব্দী এক্সপ্রেসের সি-৩ কামরায় (চেয়ারকার) ওঠেন। ৬৪ নম্বর আসনটি ছিল তাঁর। জামিরঘাটা স্টেশনের আগে ট্রেন থামার মিনিট পাঁচেক পরে, আগ্নেয়াস্ত্র ও ছুরি নিয়ে পাঁচ-ছ’জন যুবক কামরায় ওঠে। তারা স্থানীয় উচ্চারণে বাংলাতেই নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। ওই ব্যবসায়ীর অভিযোগ, “ওরা সোজা এসে আমাকে চড়থাপ্পড় মারতে শুরু করে। দু’জন আমার গলায় রিভলভার ঠেকিয়ে সোনার গয়না ভর্তি ব্যাগটা দেখিয়ে দিতে বলে। ভয়ের চোটে বাধা দিইনি। ওরা ব্যাগ ও টাকা নিয়ে চম্পট দেয়।” তাঁর ক্ষোভ, পরিস্থিতি দেখে বা তাঁর চিৎকার শুনেও কোনও সহযাত্রী এগিয়ে আসেননি। কামরাতে রেল পুলিশেরও কেউ ছিল না। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “দুষ্কৃতীরা কামরায় অন্য কারও কিছু নেয়নি। এমনকী, ওই ব্যবসায়ীর ঘড়ি, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগও নেয়নি। শুধু সোনার ব্যাগটি কেড়ে নেয়।”
রেল সূত্রের খবর, প্রায় ২০ মিনিট ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েছিল শতাব্দী এক্সপ্রেস। পরে রেলকর্মীরা এসে তার মেরামত করার পরে সিগন্যাল চালু হতে ট্রেনটি ছাড়ে। ট্রেন ফরাক্কা স্টেশনে পৌঁছলে সুনীলবাবু রেল পুলিশের কাছে করা লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, সব মিলিয়ে তাঁর কাছ থেকে প্রায় ২০ কুড়ি ভরি সোনা এবং নগদ ২ লক্ষ টাকা লুঠ করা হয়েছে।
দিনের আলোয় ট্রেন থামিয়ে এ ধরনের লুঠের ঘটনায় চিন্তিত মালদহের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একাংশ। ‘বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী ও স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতি’র মালদহ জেলা সভাপতি উজ্বল বিশ্বাস বলেন, “দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করে দ্রুত লুঠ হওয়া গয়না এবং টাকা উদ্ধার করুক রেল পুলিশ। না হলে ব্যবসা বন্ধ করে আন্দোলনেও নামতে পারি আমরা।”