মহকুমা পরিষদের নির্বাচনের প্রস্তুতিতে কর্মিসভা। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ, বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রীও। নিজস্ব চিত্র।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ভোটের জন্য সমতলেও জোটসঙ্গী খোঁজা শুরু করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। তৃণমূল যে ভাবে লোকসভায় জিএনএলএফকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ে ভোট করেছে। সে ভাবেই, সমতলে রাজবংশী সমাজ, আদিবাসী বিকাশ পরিষদের কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে মোর্চা আলোচনা শুরু করেছে। তা নিয়ে বৈঠকও হয়েছে এ দিন রবিবার। শিলিগুড়ির উপকন্ঠে দাগাপুর এলাকার একটি বিনোদন পার্কে লোকসভা ভোট পরবর্তী সমীক্ষা এবং পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতির কর্মিসভা করেছে মোর্চা। ওই সভাতে উপস্থিত ছিলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ, বিধায়ক হরকা বাহাদুর ছেত্রীও। এ দিন কর্মিসভার পরে গুরুঙ্গ বলেন, “মহকুমা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পঞ্চায়েতের ৩ স্তরে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আদিবাসী, রাজবংশী সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রার্থী দিতে চাইছি। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু স্থির হয়নি। দলের ব্লক স্তরের নেতারা এ নিয়ে আলোচনা করবেন।”
এর আগেও মহকুমা পরিষদের ত্রি-স্তরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল, তবে এ বার গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি এবং মহকুমা পরিষদ এই তিন স্তরেই প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোর্চা। আদিবাসী, রাজবংশী সহ নানা আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে জোট করে প্রার্থী দেওয়ার জন্য মোর্চার তরফে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। মোর্চার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কেপিপি এবং আদিবাসী বিকাশ পরিষদের জন বার্লা গোষ্ঠীও। কেপিপির সভাপতি অতুল রায় বলেন, “বিমল গুরুঙ্গের এই সিদ্ধান্তকে আমরা স্বাগত জানাই। ওদের দাবির সঙ্গে আমাদের দাবির চরিত্রগত মিল রয়েছে। তাই সকলে মিলে এক জন প্রার্থী দিতে পারলে ভাল।” অন্য দিকে জন বার্লার কথায়, “মহকুমা পরিষদে মোর্চার সঙ্গে জোট করেই লড়ার প্রস্তুতি শুরু করেছি।” শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদে চম্পাসারি, পাথরঘাটা, শালবাড়ি, বাগডোগরার কিছু অংশ সহ নকশালবাড়ি, মাটিগাড়া ব্লকের বেশ কিছু এলাকায় মোর্চার সংগঠন রয়েছে। মোর্চার দাবি, ওই এলাকাগুলির নেপালি ভাষাভাষীদের মধ্যে দলের প্রভাব রয়েছে। যদিও, একটি বা দুটি আসনে প্রার্থী না দিয়ে পঞ্চায়েত স্তরের সব আসনে প্রার্থী দিতে গুরুঙ্গ আঞ্চলিক সংগঠনগুলির সঙ্গে আলোচনার কৌশল নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও, তেমন হলেও ভোটে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই তৃণমূলের দাবি। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার সভাপতি গৌতম দেব বলেন, “যে কেউ ভোটে দাঁড়াতে পারে। তবে যাদের কথা বলা হচ্ছে, তাদের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই। যারা বাংলা ভাগ করতে চাইছে, তারা মানুষের কোনও সমর্থনই পাবে না। সেটাও ভোটের ফলে প্রমাণ হয়ে যাবে।”
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনও দলই যে কোনও ভোটে প্রার্থী দিতে পারেন বলে জানিয়ে এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্য। তিনি এ দিন বলেন, “আগে তো কংগ্রেস আর তৃণমূলকে সমর্থন করে মোর্চা পঞ্চায়েত ভোটে লড়েছিল। এ বার ভুল বুঝতে পেরেছে। তবে সবার আগে মোর্চার উচিত নিজেদের জন্য একটা সুষ্ঠু নীতি তৈরি করা। তাতে আমাদের কোনও সমস্যা নেই, আমরা বামফ্রন্টগত ভাবে লড়াই করব। সে প্রস্তুতিও চলছে।” আর জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকারের কথায়, “অন্য কোনও দল কী করবে, সে প্রসঙ্গে কোনও রকম মন্তব্য করব না।” লোকসভা ভোটে বিজেপিকে সমর্থন করেছিল মোর্চা। মহকুমা পরিষদের জোটেও বিজেপি থাকবে কিনা এ প্রসঙ্গে অবশ্য গুরুঙ্গ জানিয়ে দিয়েছেন, এই নিয়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে। বিজেপির জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসুও একই ভাবে বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে মোর্চার সঙ্গে জোট নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত হবে।”