এক সহপাঠিনীকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠল শিলিগুড়ির একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের একাদশ শ্রেণির ৬ জন ছাত্রীর বিরুদ্ধে। প্রহৃত কিশোরীকে ধারালো কিছু দিয়েও আঘাত করা হয়েছে। গত ৩১ জুলাই, বৃহস্পতিবার বিকেলে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানার অদূরে স্থানীয় বাসিন্দারাই ছুটে এসে সহপাঠিনীদের হাত থেকে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই ছাত্রীকে পরে এলাকার একটি নার্সিংহোমে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়। কপালে ব্যান্ডেজও করেন চিকিৎসক। পরে তাকে নিয়ে থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন তার বাড়ির লোকজন। ওই স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ৬ ছাত্রী ও এক ছাত্রকে সাসপেন্ড করেছে।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে পার্টি’-র প্রস্তুতি নিয়েই গণ্ডগোলের সূত্রপাত। শহরের একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের ওই ছাত্রীরা সে দিন স্কুলের বাস থেকে নেমে একটি হোটেলের সামনে জড়ো হয়েছিল। সেখানেই আচমকা এক সহপাঠীকে নিয়ে বচসার জেরে ওই সহপাঠিনীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ওই ছাত্রীদের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় অভিভাবক মহলে তো বটেই, পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরেও আলোড়ন পড়ে গিয়েছে।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সদর) অংমু গ্যামসো লেপচা বলেন, “জখম ছাত্রীটি সুস্থ রয়েছে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে ৬ ছাত্রীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।” তিনি জানান, প্রহৃত কিশোরীর বাড়ির লোকজন দাবি করেছেন, পুরনো শত্রুতার জেরেই মারধর করা হয়েছে। তবে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে পার্টি’ বা ‘বয়ফ্রেন্ড’ সংক্রান্ত বিরোধ নিয়েও পুলিশের কাছে অভিযোগ পৌঁছেছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ ধারালো অস্ত্র ছিল বলে প্রমাণ পায়নি। পুলিশের সন্দেহ, রাস্তায় পড়ে গিয়ে অথবা পেন্সিল, আংটি কিংবা ঠান্ডা পানীয়ের ক্যানের আঘাতে কপালে কেটে যেতে পারে।
এই ঘটনার পরে পুলিশ এবং অভিভাবকদের পক্ষ থেকে শিলিগুড়ির দাগাপুরের পঞ্চনই সেতু লাগোয়া ওই ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কর্তৃপক্ষকে কড়া পদক্ষেপ করার আর্জি জানানো হয়েছে। কিন্তু স্কুলের তরফে গোড়ায় ঘটনাটি চত্বরের বাইরে ঘটেছে বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা হয়। পরে নানা মহল থেকে চাপ বাড়তে থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত ছাত্রীদের ও এক ছাত্রকে ‘সাসপেন্ড’ করার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন। স্কুলের অধ্যক্ষ সত্যপ্রকাশ দাসের বক্তব্য, “শৃঙ্খলারক্ষার স্বার্থে আমরা ওই ৬ ছাত্রী ও ১ ছাত্রকে সাসপেন্ড করেছি।” অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে পরের পদক্ষেপ করা হবে বলে জানান তিনি।
যে হোটেলের সামনে সেদিন মারধর করা হয়, সেখানকার কয়েকজন কর্মী ও স্থানীয় দোকানদাররা জানান, বিকেলবেলায় স্কুল বাস থেকে নামার পরে ওই ছাত্রীরা যখন হোটেলের সামনে জড়ো হয়, একাধিক ছাত্রীর হাতে ঠান্ডা পানীয়ের ‘ক্যান’ ছিল। একজনের হাতে ঠান্ডা পানীয়ের বোতলও ছিল। এক ছাত্রও তাদের সঙ্গে ছিল। ওই ছাত্রীরা হোটেলের সামনে বেশ জোরেই তর্কাতর্কি করছিল। তখন ওই ছাত্রকে দ্রুত নিবেদিতা রোডের দিকে চলে যেতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পরেই এক ছাত্রীকে ঘিরে বাকিরা বেধড়ক কিল-চড় মারতে থাকে বলে অভিযোগ। তার কান্নাকাটি শুনে ভিড় জমে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন পুলিশকে জানিয়েছেন, লোকজন নিষেধ করা সত্ত্বেও ওই ছাত্রীরা প্রথমে নিরস্ত হয়নি। বরং ওই সহপাঠিনীকে রাস্তায় ফেলে মারতে থাকে তারা। শেষ পর্যন্ত এলাকার লোকজন গিয়ে ওই কিশোরীকে রক্ষা করলে তাকে শাসিয়ে বাকিরা চলে যায়। গোলমালের সময়ে তাদের কথাবার্তা শুনেই এলাকাবাসীদের অনেকের সন্দেহ, কোনও এক সহপাঠী ছাত্রকে নিয়েই ওই ছাত্রীদের মধ্যে গোলমাল লেগেছিল। যার জেরে শেষ পর্যন্ত তাদের ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে পার্টি’-ও ভণ্ডুল হয়ে যায়।
পুলিশ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ছাত্রীদের তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা ধাক্কাধাক্কি করার সময়ে ওই সহপাঠিনী পড়ে গিয়ে চোট পায়। এখন সে মিথ্যে অভিযোগ করেছে বলে দাবি অভিযুক্তদের।