হাওয়া-কুয়াশার দাপটে শীত জাঁকিয়ে

এ বার ডিসেম্বরের শুরু থেকেই রাজ্য জুড়ে দাপটে ব্যাটিং করছে শীত। কনকনে হাওয়ার সঙ্গে দিনভর কুয়াশা বড়দিনের মরসুমকে শীতল করেছে আরও। চাঁচল সহ লাগোয়া এলাকায় গত দু’দিনে এক বালক সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁচল-২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া এলাকাটি মহানন্দা নদী লাগোয়া। ফলে অনান্য এলাকার তুলনায় ওই এলাকায় ঠান্ডা বেশি থাকে বলেই বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এলাকার দুঃস্থ বাসিন্দাদের মধ্যে শীতের পোশাক বিলি না হওয়াতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:২৮
Share:

কুয়াশা ঢাকা পথ বালুরঘাটে।

এ বার ডিসেম্বরের শুরু থেকেই রাজ্য জুড়ে দাপটে ব্যাটিং করছে শীত। কনকনে হাওয়ার সঙ্গে দিনভর কুয়াশা বড়দিনের মরসুমকে শীতল করেছে আরও। চাঁচল সহ লাগোয়া এলাকায় গত দু’দিনে এক বালক সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁচল-২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া এলাকাটি মহানন্দা নদী লাগোয়া। ফলে অনান্য এলাকার তুলনায় ওই এলাকায় ঠান্ডা বেশি থাকে বলেই বাসিন্দারা জানিয়েছেন। এলাকার দুঃস্থ বাসিন্দাদের মধ্যে শীতের পোশাক বিলি না হওয়াতেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জন্য প্রশাসনকে দায়ী করেছেন মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক। তৃণমূল পরিচালিত স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পঞ্চায়েত সূত্রে জানানো গিয়েছে, মৃতদের নাম আবুল হোসেন (৫৭), মেরাজ আলি(৮) এবং বলরামপুরের বাসিন্দা রেজিয়া বিবি (৪৭)।

Advertisement

চাঁচল-২ ব্লকের বিডিও ঈশে তামাং বলেন, “সকলকে ত্রাণ বিলি করা সম্ভব নয়। তবে যাঁরা ব্লক অফিসে আসেন তাদের ত্রাণ দেওয়া হয়।” তবে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধান পলি কর্মকার বলেন, “পঞ্চায়েতে কোনও ত্রাণ মজুত থাকে না। ব্লকে আবেদন করলে তদন্ত করে ত্রাণ পেতে দু থেকে তিন সপ্তাহ গড়িয়ে যায়।”

স্থানীয় পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত আবুল হোসেন পেশায় দিনমজুর। বুধবার সকালে নিজের বাড়িতেই তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অভিযোগ, ঠান্ডায় কাবু হয়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। ওইদিন সকালে মারা যান যদুপুরের বাসিন্দা ৮ বছরের বালক মেরাজও। তার বাবা আইসক্রিম বিক্রেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “এখন রোজগার নেই। ছেলেটাকে একটাও গরম পোশাক কিনে দিতে পারিনি। কোথা থেকে কোনও সাহায্যও মেলেনি। কয়েকদিন ধরেই রোগে ভুগছিল ছেলেটা।” বলরামপুরের রেজিয়া বিবির বাড়িও মহানন্দা নদীর পাশে। বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয় বলে পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে। মালতিপুরের আরএসপি বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি অভিযোগ করে বলেন, “এলাকায় যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম শীতের পোশাক ও কম্বল বিলি করা হয়েছে। তাই এমন ঘটনা ঘটেছে। পঞ্চায়েত এবং প্রশাসন উভয়ের গাফিলতিতেই ওই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।” চাঁচলের সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ছোটন মণ্ডল বলেন, “শীতে কাহিল রোগীদের জন্য হাসপাতালগুলিতে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে কুমারগঞ্জ থানার মোহনা হাট এলাকায় বারান্দা থেকে এক ব্যক্তির মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে পুলিশ। জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মুন্ডা লাকড়া(৪৫) বাড়ি পুরাতন মালদহে। তিনি মধু সংগ্রহের কাজে মোহনা এলাকায় এসেছিলেন। প্রচন্ড ঠান্ডায় তার মৃত্যু হয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।

মালদহের তিনটি এলাকায় শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে জখম হয়েছেন তিন মহিলা। তাঁরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইংরেজবাজার থানার মধুঘাট এলাকায় শুক্রবার সকালে উনুন বানিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন পূর্ণিমা চৌধুরী(৬০) তাঁর শাড়িতে আগুন লেগে যায়। জখম অন্য দুজনের নাম শম্পা দাস (২৬) এবং লিলুয়া বিবি(২৮)। তাঁদের তিনজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।

বড়দিন থেকে কনকনে ঠাণ্ডা ফিরে এসেছে শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়িতেও। সন্ধ্যের পর থেকে কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে জলপাইগুড়ি। কুয়াশা মুড়েছে শিলিগুড়িকেও।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা একলাফে অন্তত ৩ ডিগ্রি কমে যায়। শুক্রবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ ডিগ্রি। এই সময়ে এটাই স্বাভাবিক তাপমাত্রা বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে।

পশ্চিমী ঝঞ্ঝার টানে উত্তুরে হাওয়া ঢুকতে শুরু করাতেই উত্তরবঙ্গে কনকনে ভাব শুরু হয়েছে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টাতে তাপমাত্রা আরও কমবে বলে পুর্বাভাসে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর।

কুয়াশা এবং কনকনে ঠান্ডার কারণে শুক্রবার সন্ধ্যার পরেই জলপাইগুড়ি শহরের কিছু এলাকা সুনসান হয়ে পড়ে। কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় জাতীয় সড়কও। জাতীয় সড়কে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন