হুজুর সাহেবের মেলার পথে ভোগান্তি রেলে

কোনও স্টেশনে ভিড়ের চাপে টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেল, কোনও স্টেশনে ট্রেন ছাড়ল নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। হুজুর সাহেবের মেলায় যাতায়াতের ভিড় সামলাতে বিশেষ ট্রেন চালানো অথবা হলদিবাড়িতে প্যাসেঞ্জারে অতিরিক্ত কামরা জুড়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সে বিষয়ে রেল কোনও পদক্ষেপ না করায় বুধবার যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি ও হলদিবাড়ি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:২১
Share:

ট্রেনে ব্যাপক ভিড়। তা এড়াতে মেলায় অনেকে এ ভাবে ঝুঁকি নিয়েই গেলেন। জলপাইগুড়িতে সন্দীপ পালের তোলা ছবি।

কোনও স্টেশনে ভিড়ের চাপে টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেল, কোনও স্টেশনে ট্রেন ছাড়ল নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। হুজুর সাহেবের মেলায় যাতায়াতের ভিড় সামলাতে বিশেষ ট্রেন চালানো অথবা হলদিবাড়িতে প্যাসেঞ্জারে অতিরিক্ত কামরা জুড়ে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল বিভিন্ন মহল থেকে। সে বিষয়ে রেল কোনও পদক্ষেপ না করায় বুধবার যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

এ দিন সকাল থেকেই হলদিবাড়িগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলিতে ভিড় উপচে পড়ে। বিকেলের পরে হলদিবাড়ি থেকে ফেরার ট্রেনগুলিতেও ভিড় বাড়তে থাকে। কামরায় জায়গা না পেয়ে গার্ডের কামরা এমনকী কয়েকটি কামরার ছাদেও যাত্রীরা উঠে বসে বলে অভিযোগ। ভিড় এড়াতে অনেকে ছোট মালবাহী গাড়িতেও ঝুঁকি নিয়ে ভিড় করে যান।

বুধবার হুজুর সাহেবের প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্ম সম্মেলন (ইসালে সওয়াব) উপলক্ষে হলদিবাড়িতে এ দিন থেকে মেলা বসেছে। এ দিন সকাল থেকেই ট্রেনে বাসে করে মেলায় যেতে শুরু করেন পুণ্যার্থীরা। ভিড়ে গাদাগাদি অবস্থায় সকাল ৯টা ২০ মিনিটের হলদিবাড়িগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ছাড়ে। আমবাড়ি স্টেশনেও প্রচুর পুণ্যার্থী ট্রেনের অপেক্ষায় ভিড় করে ছিলেন। ট্রেন স্টেশনে পৌঁছনোর পরে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। এমনকী, ভয়ঙ্কর ভিড়ের চাপে টিকিট কাউন্টারও বন্ধ হয়ে যায় স্টেশনে। যার জেরে বহু যাত্রী টিকিট পর্যন্ত কাটতে পারেননি। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনেও যাত্রীদের ওঠানামার জন্য নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছাড়তে পারেনি বলে অভিযোগ। যদিও নিউ জলপাইগুড়ির সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার পার্থসারথি শীলের দাবি, “ভিড় হয়েছিল, তবে কোনও বিশৃঙ্খলা হয়নি। সব যাত্রীদের ওঠানোর পরেই ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে।”

Advertisement

অতিরিক্ত কামরা বা বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা না করায় রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করেছে নিউ জলপাইগুড়ি নিত্যযাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের দাবি, মেলার দীর্ঘদিন আগেই বিশেষ ট্রেন অথবা অতিরিক্ত কামরার ব্যবস্থা করার আর্জি জানানো হয়েছিল। সংগঠনের সভাপতি দীপক মোহান্তি অভিযোগ করে বলেন, “রেল কর্তৃপক্ষকে আগাম জানিয়েও কোনও ফল মেলেনি। ভিড়ের চাপে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। আমবাড়িতে টিকিট কাউন্টারই বন্ধ করে দেয় রেলকর্মীরা। তাতে অনেক যাত্রী টিকিটও কাটতে পারেননি। পুরো বিষয়টি জানিয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করা হবে।”

এ দিন মেলায় এসে হলদিবাড়ির হুজুর সাহেবের মাজার লাগোয়া এলাকায় দর্শনার্থীদের থাকার জন্য ডরমেটরি তৈরির সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “হুজুর সাহেবের এখানে সমস্ত ধর্মের মানুষ আসেন। তাদের থাকার জন্য ডরমেটরি তৈরি করে দেওয়া হবে। বন দফতর থেকে এখানে সাত হাজার চারাগাছ লাগানোর সিদ্ধান্তও হয়েছে।” গৌতমবাবু ছাড়াও বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন এবং জলপাইগুড়ির সাংসদ বিজয়চন্দ্র বর্মন এ দিন মেলায় এসেছিলেন।

মেলা উপলক্ষে দু’দিন প্রচুর জনসমাগম হয় হলদিবাড়িতে। ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাসিন্দারা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সারারাত ধরে ধর্ম সন্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইসালে সওয়াব কমিটি সুত্রে জানা গিয়েছে, মেলায় ২ হাজার ১৭৩টি দোকান হয়েছে। নজরদারির জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে ছ’টি নজরমিনারও হয়েছে। বিএসএফের পক্ষ থেকেও একটি নজর মিনার তৈরি হয়েছে। মেলা কমিটির সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, “পুলিশকে সাহায্য করার জন্য ৪৬৮ জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন