হোম থেকে পালিয়ে ধরা পড়ল ৫ কিশোরী

ফের হোম থেকে আবাসিক পালানোর অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়িতে। শহরের একটি বেসরকারি হোম থেকে পাঁচ জন কিশোরী আবাসিক পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। শনিবার ভোর নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বেগুনটারি এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৪ ০০:৪৮
Share:

ফের হোম থেকে আবাসিক পালানোর অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়িতে। শহরের একটি বেসরকারি হোম থেকে পাঁচ জন কিশোরী আবাসিক পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। শনিবার ভোর নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বেগুনটারি এলাকায় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত হোমে। যদিও সকালে নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত দফতর লাগোয়া এলাকা থেকে পলাতক আবাসিকদের উদ্ধার করে পুলিশ চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্যদের হাতে তুলে দেয়।

Advertisement

২০১১ সালে ওই হোম থেকে একইভাবে কয়েকজন আবাসিক পালিয়ে যায়। শুধু বেসরকারি হোম থেকে নয় গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি কোরক হোম থেকে ২২ জন আবাসিক পালায় বলে অভিযোগ। পরপর এ ভাবে আবাসিক পালানোর ঘটনাকে ঘিরে হোমগুলির পরিকাঠামো ও পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। উদ্ধার হওয়ার পরে মেয়েরা জানায়, হোমের একঘেয়ে জীবন ভাল লাগে না। তাই বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করে। বেসরকারি হোম সুপার শিপ্রা রায় বলেন, “মেয়েদের পার্কে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু নিরাপত্তার কারণে সেটা সব সময় সম্ভব হয় না। কিন্তু ওই পাঁচজন সেটা মানতে চায় না। পুলিশ ও চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটিকে তা লিখিত জানানো ছিল।”

বেগুনটারি এলাকার ভাড়া ফ্ল্যাটের পাঁচটি ঘরে থাকে ৩৩ জন কিশোরী। বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া, ভবঘুরে, অনাথ কিশোরীরা হোমে থাকে। এ দিন পলাতক এক কিশোরী জানায়, শনিবার ভোর ৩টা নাগাদ দরজা ও গ্রিলের তালা খুলে পাঁচজন রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে। তাঁদের একজনের আত্মীয় থাকে নগর বেরুবাড়ি এলাকায়। দু’টি রিকশা ভাড়া করে সেখানে পৌঁছে যায়। কিন্তু তাদের কাছে টাকা না থাকায় রিকশা চালকের সঙ্গে মেয়েদের তর্ক দেখে এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেয়। ধরা পরে তাঁরা ফের হোমে ফিরে যাওয়ার জন্য বায়না শুরু করে।

Advertisement

জেলা সমাজ কল্যাণ আধিকারিক বিজয় রায় বলেন, “শনিবারের ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। দফতরের কর্তারা উদ্ধার হওয়া মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছেন।” চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য তথা জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “খুবই উদ্বেগজনক ঘটনা। খাবার অথবা হোম কর্তাদের ব্যবহার নিয়ে তাঁদের কোন অভিযোগ নেই। ওঁরা প্রত্যেকে ঘুরেফিরে বদ্ধ জীবনের অসহ্যতা নিয়ে জানায়। খোঁজ নিয়ে ওঁদের বাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা চলছে।” জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি আশিস রায় বলেন, “মেয়েদের উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথাও বলা হয়েছে।”

কেন হোমের আবাসিকরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে? চিকিৎসক সুমন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাইরের জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে দীর্ঘ দিন এক জায়গায় থাকার ফলে হোমের আবাসিকদের মানসিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ওই কারণে ওঁরা বাইরে পা রেখে চাহিদা মেটাতে চেষ্টা করে।” জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল সুপার সুশান্ত রায় বলেন, “হোমের ছেলেমেয়েদের কাউন্সিলিং জরুরি। কোরক হোমে সেটা শুরু করেছি। বেসরকারি হোমগুলিতে ওই সুযোগ নেই, কিন্তু এটা না করলে পালানোর সমস্যা বাড়বে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন