অম্বিকানগরের ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা

১০টি সিম পাল্টেও পুলিশের জালে অভিযুক্ত

দু’দিনে ১০টি সিম কার্ড বদলে ফোন করেও শেষরক্ষা হল না। পুলিশের হাতে ধরা পড়ল দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত তারই এক সহপাঠী। ওই ছাত্রীর অশ্লীল ছবি মোবাইল ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল অভিযুক্ত যুবক। তারপরেই ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০২:০২
Share:

দু’দিনে ১০টি সিম কার্ড বদলে ফোন করেও শেষরক্ষা হল না। পুলিশের হাতে ধরা পড়ল দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীর আত্মহত্যার জন্য অভিযুক্ত তারই এক সহপাঠী। ওই ছাত্রীর অশ্লীল ছবি মোবাইল ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিল অভিযুক্ত যুবক। তারপরেই ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করে। ওই ছাত্রীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় অভিযুক্ত যুবককে শুক্রবার দুপুরে শিলিগুড়ির কাছে বেলাকোবা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্ত তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেসে দক্ষিণবঙ্গের দিকে পালানোর মতলব কষেছিলেন। গোপন সূত্রে খবর পেয়েই তাকে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়ির পুলিশ সেখান থেকে গ্রেফতার করে। যদিও ওই যুবক দাবি করেছে, তিনি নির্দোষ।

Advertisement

শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার জগমোহন বলেন, “অভিযুক্তকে জলপাইগুড়ির বেলাকোবা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে শনিবার জলপাইগুড়ি আদালতে পেশ করা হবে। ধৃতের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হয়েছে।” তবে অভিযুক্তের মোবাইলে ওই ছাত্রীর কোনও ভিডিও কিংবা স্থির ছবি তোলা ছিল কি না তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ দিন সকালে ওই যুবকের কয়েকজন বন্ধুকে জেরা করেই ওই যুবকের খোঁজ পায় পুলিশ। এই ঘটনায় অভিযুক্ত যুবক এবং মৃত ছাত্রীর একজন বান্ধবীর খোঁজও পেয়েছে পুলিশ। তাকেও প্রয়োজনে জেরা করা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সকালে মৃতার বাড়ি থেকে একটি চিঠিও উদ্ধার করে পুলিশ। তাতে লেখা রয়েছে, “আমি ভুল করেছি। বাই বাই”। হাতের লেখাটি ওই ছাত্রীরই কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিন সকালে অম্বিকানগরে যায় নিউ জলপাইগুড়ি পুলিশের একটি দল। তাঁরা ওই যুবকের বন্ধুদের ফোনেও নজর রাখছিল। সেই সূত্রে তাঁরা জানতে পারে, বৃহস্পতিবার রাতে, সাড়ে দশটা নাগাদ এবং সাড়ে এগারোটা নাগাদ দু’বার এক বন্ধুকে দু’টি আলাদা সিম থেকে ফোন করে অভিযুক্ত যুবক। দুটি নম্বরই তার পরে ‘সুইচড অফ’ হয়ে যায়। তবে ‘সিম’টি রাজগঞ্জ এলাকা থেকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে পুলিশ টের পায়। এদিন সকালে রাজেশকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তাকেই জেরা করে জানতে পারে কলকাতা বা ওদিকে কোথাও গা ঢাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে অভিযুক্ত। সেই অনুযায়ী পুলিশ খোঁজ করতে শুরু করে। দুপুর নাগাদ খবর আসে, রাজগঞ্জের বেলাকোবা স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে পালানোর ছক কষছেন তিনি। দ্রুত পুলিশ গিয়ে তাঁকে গ্রেফতার করে।

Advertisement

তবে এই ঘটনায় অপর এক যুবতীর নামও উঠে এসেছে পুলিশি তদন্তে। ওই ছাত্রী যেদিন গায়ে আগুন দেন, ওই দিন সকালে তাঁর সঙ্গে ওই যুবতীর কথা কাটাকাটি হয়। পরে ওই একই দিন রাতে সেই যুবতীও নিজের বাড়িতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে তিনি আপাতত সুস্থ আছেন বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে।

গত মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ির অম্বিকানগরে নিজের ঘরে গায়ে আগুন দেন ওই ছাত্রী। বুধবার বিকেলে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওইদিনই রাতে নিউ জলপাইগুড়ি ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করেন মৃতার বাবা। তাঁর মেয়েকে ওই যুবক মোবাইলে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ছবি তুলে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় ঘটনাটি ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ দায়ের করেন। সেদিন থেকেই ফেরার ছিল অভিযুক্ত যুবক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন