ডেঙ্গি নয়। লিখতে হবে ‘অ্যাকিউট ফেবরাইল ইলনেস’। প্যাথোলজির রিপোর্টেও ‘এনএস১’ বা ‘আইজিএম পজিটিভ’ না লিখে লিখতে হবে ‘সেরোপজিটিভ’। ডেঙ্গির খবর যাতে বাইরে না আসে, সে জন্য সরকারি ডাক্তারদের কাছে হাসপাতাল কর্তাদের তরফে এই নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, ডেঙ্গির পরিবর্তে ‘ফিভার’ লেখাও বারণ। তাতেও নাকি অজানা জ্বরের আতঙ্ক ছড়াচ্ছে সর্বত্র। বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তারা জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশ পৌঁছেছে, ডেঙ্গির কারণে প্লেটলেট কমে গেলে লিখতে হবে, অ্যাকিউট ফেবরাইল ইলনেস উইথ লো প্লেটলেট কাউন্ট। কিন্তু প্লেটলেট কতটা কম? বলা হয়েছে, তার উল্লেখ করার দরকার নেই। তা হলে রোগীকে প্লেটলেট দেওয়া প্রয়োজন কি না সেটা কী ভাবে জানা যাবে? ওই কর্তা বলেন, ‘‘এটা স্বাস্থ্য ভবনে জিজ্ঞাসা করুন।’’
মঙ্গলবারই মুখ্য সচিব মলয় দে দাবি করেছিলেন, ডেঙ্গি সংক্রান্ত কোনও তথ্যই গোপন করা হচ্ছে না। কিন্তু বুধবার রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে যে তথ্য সামনে এসেছে তাতে তথ্য গোপনের অভিযোগই সর্বত্র। ডাক্তারদের একটা বড় অংশ প্রশাসনের এই ‘মিথ্যাচার’-এর প্রতিবাদ করছেন। তাঁদের বক্তব্য, অহেতুক এই গোপনীয়তার কারণেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
কলকাতার একটি নামী ল্যাবরেটরির প্রবীণ কর্ণধার এ দিন বলেন, ‘‘রক্ত বা দেহের যে কোনও নমুনার পরীক্ষা রিপোর্ট কী ভাবে লেখা হয়, তার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। সঠিক তথ্য জানাটা রোগীর অধিকার। এখানে সেটা তো লঙ্ঘিত হচ্ছেই, পাশাপাশি বেআইনি কাজও হচ্ছে।’’
বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা আরও বলছেন, প্রেসক্রিপশনে ‘অ্যাকিউট ফেবরাইল ইলনেস’ লেখা মানে রোগীকে সব রকম ভাবে বিভ্রান্ত করা। কারণ ‘অ্যাকিউট ফেবরাইল ইলনেস’ নানা কারণে হতে পারে। এর পিছনে ডেঙ্গি থাকতে পারে, থাকতে পারে মূত্রনালীর সংক্রমণ, এমনকী ক্যানসারও। প্রশ্ন সেরোপজিটিভ লেখা নিয়েও। ডাক্তারদের অনেকেই জানতে চেয়েছেন, সেরোপজিটিভ মানে রক্তের নমুনা পজিটিভ। কিন্তু কীসের ক্ষেত্রে পজিটিভ তা নির্দিষ্ট করে লেখা না থাকলে রোগীকে অন্য কোথাও রেফার করা হলে সেখানকার ডাক্তার বুঝবেন কী করে? অভিযোগ, এর উত্তরে তাঁদের বলা হয়েছে, বিষয়টি সম্পর্কে সকলেই ওয়াকিবহাল। তাই সেরোপজিটিভ লিখলেই যে কেউ বুঝে যাবেন, ডেঙ্গি পজিটিভ-এর কথাই বলা হচ্ছে।
লিখতে হবে
ডেঙ্গি=অ্যাকিউট ফেবরাইল ইলনেস
ডেঙ্গি, প্লেটলেট অনেক কম=অ্যাকিউট ফেবরাইল ইলনেস উইথ লো প্লেটলেট কাউন্ট
ডেঙ্গির জেরে লিভার অকেজো=অ্যাকিউট ফেবরাইল ইলনেস উইথ লিভার হেপাটাইটিস
ডেঙ্গির জেরে কিডনি বিকল= অ্যাকিউট ফেবরাইউল ইলনেস উইথ কিডনি ফেলিওর
এনএস১ কিংবা আইজিএম পজিটিভ=সেরোপজিটিভ
এ দিন উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি ও হাওড়ার কয়েকটি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হলে তাঁরাও বিষয়টি মেনে নেন। কেন তাঁরা ডাক্তারদের এমন নির্দেশ দিচ্ছেন? হুগলির একটি হাসপাতালের কর্তা বলেন, ‘‘উপরমহল থেকে যে নির্দেশ আসছে, সেটাই করছি।’’ কিন্তু এই কৌশলের জেরে তো বহু সাধারণ মানুষের প্রাণ যেতে পারে। তাঁর উত্তর, ‘‘সেটা হওয়ার কথা নয়। কারণ ডেঙ্গি না লিখলেও আমরা তো চিকিৎসায় কোনও ত্রুটি রাখছি না।’’
আরও পড়ুন: ভিন রাজ্যের মশা ছড়াচ্ছে এ রাজ্যে ডেঙ্গি! তোপ মুখ্যমন্ত্রীর
কী বলছেন স্বাস্থ্য কর্তারা? দফতরের শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে একটা শব্দও উচ্চারণ করব না।’’ প্রেসক্রিপশনে ডেঙ্গি লেখা বন্ধ করে আদতে লাভটা কী হচ্ছে? তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টা এখন লাভ-লোকসানের ঊর্ধ্বে উঠে গিয়েছে।’’