পানে দাম না পেয়ে হতাশ চাষি

টানা গরম। মাঝে হঠাৎ করে শিলাবৃষ্টি। তারপরে ফের গরম। সম্প্রতি প্রাক্‌ বর্ষা ও নিম্নচাপের বৃষ্টি— এমন খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পান চাষ। করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতি সূত্রে খবর, করিমপুর ১ ও ২ ব্লকের প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে পান চাষে যুক্ত।

Advertisement

কল্লোল প্রামাণিক

করিমপুর শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০১:০৩
Share:

পানের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষি। করিমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

টানা গরম। মাঝে হঠাৎ করে শিলাবৃষ্টি। তারপরে ফের গরম। সম্প্রতি প্রাক্‌ বর্ষা ও নিম্নচাপের বৃষ্টি— এমন খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে ক্ষতির মুখে পান চাষ।

Advertisement

করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতি সূত্রে খবর, করিমপুর ১ ও ২ ব্লকের প্রায় ১২০০ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। এলাকার প্রায় দশ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ভাবে পান চাষে যুক্ত। তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণে কোথাও রোদের তাপে শুকিয়ে গিয়েছে পানের পাতা। কোথাও টানা বৃষ্টিতে পানের লতায় পচন ধরেছে।

উদ্যান ও কৃষি দফতরের হিসেব, এলাকা থেকে ফি-বছর ভিন্ রাজ্যে প্রায় কুড়ি কোটি পান রফতানি করা হয়। করিমপুর উদ্যান ও কৃষি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বিশ্বনাথ বিশ্বাসের আশঙ্কা, ‘‘বিরূপ আবহাওয়ার কারণে চলতি বছরে সেই অঙ্ক পাঁচ কোটি টাকা হবে কি না সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে।’’ এমনটা হলে, পানচাষিরা সমস্যায় পড়বেন তাতে সন্দেহ নেই।

Advertisement

এমন আবহাওয়ার সঙ্গে যুঝতে সেরা দাওয়াই হতে পারে ‘শেড নেট’ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে চাষ করা যায়। দুই চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুরের পান চাষিরা এই পদ্ধতি মেনে চাষ করে এমন ক্ষতি অনেকটাই এড়াতে পেরেছেন বলে কৃষি আধিকারিকদের দাবি।

নদিয়া জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক কৃষ্ণেন্দু ঘড়াই জানান, ছোট ছোট শিলা বরজের পানের মাথাকে ফাটিয়ে দেয়। তাতে পানের কোষ নষ্ট হয়। সেই পচা পান থেকে ক্ষতিকর ছত্রাকের জন্ম হয়। শিলাবৃষ্টিতে পানের পাশাপাশি লতাতেও আঘাত লাগে। খালি চোখে দেখা না গেলেও গাছের ‘ভাস্কুলার সিস্টেম’ বন্ধ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে পান গাছ শুকিয়ে যায়।

ওই আধিকারিকের কথায়, পান গাছের শিকড় মাটির খুব গভীরে যায় না। টানা বৃষ্টি না হলে রোদের তাপে শুকিয়ে যাওয়া মাটি থেকে রস টানতে পারে না। সেচ দিলেও দীর্ঘক্ষণ থাকে না। তিনি বলেন, ‘‘টানা গরমের পর বর্ষার বৃষ্টিতে আবহাওয়া কিছুটা ঠান্ডা হবে। তখন বরজে এক ধরনের ছত্রাক জন্মাবে। যা পান চাষের ক্ষতি করবে। তা ঠেকাতে রাজ্যের সকল পান চাষিকে বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ‘শেড নেট’ পদ্ধতিতে পান চাষের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’’

যমশেরপুরের পান চাষি নবি মালিথ্যা বা কুতুব শেখ জানান, “ঠান্ডা বা গরম কম-বেশি হলে পানের ক্ষতি হয়। এ দিকে খারাপ আবহাওয়ার জন্য প্রায় সকলের বরজের পানের লতা পচে যাচ্ছে। কারও আবার পানে পুড়ে যাওয়ার মত দাগ রয়েছে।’’ সব মিলিয়ে বাজারে কমেছে পানের দাম।

তাঁরা জানাচ্ছেন, যে পানের দাম গত বছর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তা মাত্র ১৫০ টাকায় বিকোচ্ছে। শিকারপুরের পান চাষি সুবোধ বিশ্বাস বলেন, “শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পান চাষিরা ব্লক সহ কৃষি আধিকারিকের কাছে আবেদন করার পরেও ক্ষতিপূরণ পাননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন