গাড়ি ছেড়ে বন্যার্তদের পাশে মমতা

সোমবার দুপুরে মালদহ ও দুই দিনাজপুর জেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোথাও নিজের হাতে ত্রাণ বিলি করলেন, কোথাও বা বাসিন্দাদের ডেকে ত্রাণ মিলছে কি না খোঁজ নিলেন।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১০
Share:

স্নেহ: ইটাহার ব্লকের জয়হাটে খুদেকে কোলে তুলে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র

মহানন্দা ও সুঁই এই দুই নদীর জলে ডুবে গিয়েছে ঘর। দু’বছরের মেয়ে রূপসীকে নিয়ে তাই জাতীয় সড়কে উঠে এসেছেন ফুলমণি কিস্কু। সেখানেই ত্রিপল দিয়ে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের জয়হাট গ্রাম পঞ্চায়েতের কুচিয়ামারির এই বাসিন্দা। বেলা দেড়টা নাগাদ মেয়েকে নিয়ে তাঁবুতে শুয়েছিলেন। বন্যা পরিস্থিতি দেখতে তখন সে পথেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

মা ও মেয়েকে দেখে গাড়ি থেকে নেমে সটান কোলে তুলে নিলেন রূপসীকে। এরপর তাঁর মায়ের কাছে এলাকার পরিস্থিতির খোঁজ নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রূপসীর চোখের সমস্যা রয়েছে জানতে পেরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। শুধু তাই নয়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফুলমনির ঘর মেরামতিরও প্রতিশ্রুতি দিলেন।

সোমবার দুপুরে মালদহ ও দুই দিনাজপুর জেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কোথাও নিজের হাতে ত্রাণ বিলি করলেন, কোথাও বা বাসিন্দাদের ডেকে ত্রাণ মিলছে কি না খোঁজ নিলেন। মালদহের নারায়ণপুরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর দিয়ে বয়ে চলা এক হাঁটু জলে নেমে দেখলেন মানুষের দুর্দশার ছবি। তবে তিন ঘণ্টার পরিদর্শনে দুই দিনাজপুরের সামান্য অংশেই গেলেন তিনি।

Advertisement

বন্যা পরিস্থিতি দেখতে কলকাতা থেকে ধনধান্য এক্সপ্রেসে বহরমপুরে নেমে রবিবার রাতেই মালদহে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। রাতে গৌড়ভবনে থেকে এ দিন বেলা ১২টা নাগাদ পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবকে সঙ্গে নিয়ে করে বেড়িয়ে পড়েন তিন জেলার বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। দু’কিলোমিটার এগোতেই পুরাতন মালদহের নলডুবিতে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর তখন জলের স্রোত। কনভয় যাচ্ছিল ধীরগতিতে। গাড়িতে বসেই পরিস্থিতি দেখে নিচ্ছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন:ফের বন্যা নিয়ে তোপ দিল্লিকে

নারায়ণপুর হয়ে গাজোলের কদুবাড়ি মোড় হয়ে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে চলে যান পাঁচপাড়ায়। সেখানে নেমে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে বন্যা পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন। ত্রাণ নিয়ে সমস্যা রয়েছে কি না জেনে নেন তাও। ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে তাঁর কনভয় পৌঁছায় গাজোলের আড়োহায়। সেখানে জাতীয় সড়কের দু’পাশে তাঁবু খাটিয়ে রয়েছেন কয়েক হাজার বানভাসি পরিবার। মুখ্যমন্ত্রী যখন পৌঁছোন তখন সেখানে বানভাসিদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিলি করছিলেন গাজোলের বিধায়ক দিপালী বিশ্বাস। দলের বিধায়কের এই ভূমিকায় খুশি হয়ে দিপালীকে ধন্যবাদ জানালেন। এক বানভাসির হাতে নিজের হাতে খাবারও তুলে দিলেন।

এরপর মালদহের গাজোলের ময়না পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় ঢোকে উত্তর দিনাজপুরে। ইটাহার ব্লকের জয়হাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে আশ্রয় নিয়েছেন কয়েক হাজার পরিবার। সেখানেই তিনি কথা বলেন ফুলমনির সঙ্গে। সমস্যা শোনেন অন্য বানভাসি মানুষদের। কথা বলেন সেখানে উপস্থিত জেলাশাসক আয়েষা রানির সঙ্গেও। সেখান থেকে কনভয় ফের ঘোরে গাজোলের অভিমুখে। গাজোল বাজার পেরিয়ে ৫১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় থামে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হরিরামপুরের মেহেন্দিপাড়া গ্রামে। সেখানেও স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও জনপ্রতিনিধি ও জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদীর সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই ফেরেন মালদহে। গৌড়ভবনে তিন জেলার জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করে বেলা ৪টে নাগাদ সড়ক পথে রওনা দেন কলকাতার উদ্দেশে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement