না-সম্ভব কিছুই না, বুঝিয়ে দিল ওরা

মাধ্যমিকের ফলে পরিজনের মুখে হাসি ফোটাল তারা। শুধু ভাল ফল নয়, অনেকে জায়গা করে নিল পর্ষদের মেধা তালিকাতেও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৭ ০৪:০৮
Share:

লড়াইটা শুধু ভাল ফলের জন্য ছিল না। লড়তে হয়েছে আরও অনেক কিছুর সঙ্গে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা, বা়ড়ির অনটন বা মারণরোগ— কোনও কিছুই অবশ্য দমিয়ে রাখতে পারেনি। এ সবের সঙ্গে যুঝেও মাধ্যমিকের ফলে পরিজনের মুখে হাসি ফোটাল তারা। শুধু ভাল ফল নয়, অনেকে জায়গা করে নিল পর্ষদের মেধা তালিকাতেও।

Advertisement

গিরিধরের লক্ষ্য

Advertisement

জন্মের পর থেকেই দুই পা অকেজো। দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। ঠিকমতো কথাও বলতে পারে না সিউড়ির সুরেন ব্যানার্জী স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র গিরিধর মণ্ডল। প্রায় ৮০ শতাংশ শারীরিক প্রতিবন্ধী গিরিধর পেল ৬৬১ নম্বর, যা ৯৪ শতাংশেরও বেশি। গিরিধরের বাবা নারায়ণবাবু মুদি দোকানের কর্মী। এ বার পড়া চালাতে হলে অন্তত চার কিলোমিটার দূরের স্কুলে যেতে হবে গিরিধরকে। তার দাদু ষষ্ঠীধরবাবু বলেন, ‘‘পড়া বন্ধ হতে দেব না। আমিই ওকে স্কুলে পৌঁছে দেব।’’

অনির্বাণের চিন্তা

বাবা ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি। অভাবের সংসার থেকেই ৬৮৯ পেয়ে মাধ্যমিকে দ্বিতীয় হল হুগলির তারকেশ্বরের জগজীবনপুর গ্রামের অনির্বাণ খাঁড়া। এ বার বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে চিকিৎসক হওয়া তার লক্ষ্য। কিন্তু বাবা স্বদেশবাবুর কপালে চিন্তার ভাঁজ। তিনি বলেন, ‘‘আমার আয়ে ছেলের পড়াশোনার খরচ আর চালানো অসম্ভব। জানি না কী হবে!’’

সুকান্তর স্বপ্ন

কারখানার ঠিকা শ্রমিক বাবা বাড়ির খরচ জোগাতেই হিমসিম খান। তবু মেধাবী ছেলের ভাল পড়াশোনার জন্য বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটি থেকে বড়়জোড়ায় চলে এসেছিলেন প্রণব মণ্ডল। কম ভাড়ায় তাঁদের থাকতে দেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ষষ্ঠীকুমার নন্দী। বইপত্র কিনে দেন বড়জোড়া হাইস্কুলের শিক্ষকেরা। ৬৮৪ পেয়ে মাধ্যমিকে সপ্তম হল প্রণববাবুর ছেলে সুকান্ত। ফল বেরনোর পরে সুকান্ত বলে, ‘‘ডাক্তার হওয়াই স্বপ্ন।’’

নাসলিনের হাসি

দু’বছর ধরে বাবা নিখোঁজ। সংসার টানতে মাদ্রাসায় রাঁধুনির কাজ করেন মা। অভাবের সংসারে ৬৭০ পেয়ে মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছে পাঁশকুড়া ব্র্যাডলি বার্ট হাইস্কুলের ছাত্রী নাসলিন শেখ। টালির ছাউনির ঘরে বসে তার মা মমতাজ বেগম জানান, স্বামী নিখোঁজ হওয়ার পরে তাঁকে অনেকেই মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিতে বলেন। তিনি কান তোলেননি। তারই ফল পেলেন।

সুরভির লড়াই

তার যখন আড়াই বছর বয়স, সরকারি চাকুরে বাবা মারা যান রক্তের ক্যানসারে। সেই চাকরি পান মা। খানিকটা সামলে উঠতে না উঠতেই ফের ঝড় এল। দশম শ্রেণিতে ওঠার পরপরই কৃষ্ণনগরের হোলি ফ্যামিলি গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী সুরভি গঙ্গোপাধ্যায়ের রক্তেও ক্যানসার ধরা পড়ে। এই কয়েক মাসের মধ্যে ১২টা কেমোথেরাপি এবং ১৭ বার রেডিয়েশন নিতে হয়েছে তাকে। তার ফাঁকেই যতটা সম্ভব প়ড়াশোনা করেছে সুরভি। মাধ্যমিকে সে পেয়েছে ৫৯২।

জয়ী স্যমন্তক

চার বছর বয়সে ধরা পড়েছিল জটিল রোগটা। তার পরে সময়ের সঙ্গে অকেজো হতে শুরু করে শরীরের নানা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। কাঁধের নীচ থেকে প্রায় গোটা শরীরটাই এখন অসাড়। ‘ডুসেন মাস্কুলার ডিসট্রফি’তে আক্রান্ত করিমপুরের জগন্নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র স্যমন্তক সরকারকে কোলে করে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দিতেন বাবা। দাঁতে দাঁত চেপে তিন ঘণ্টা বসে রাইটারের সাহায্যে পরীক্ষা দিয়ে ৩৭৪ পেয়ে উত্তীর্ণ হলো সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন