সাংবাদিক ও বহিরাগতের প্রবেশ নিষিদ্ধ, নোটিস বিশ্বভারতীতে

ছাত্রী নিগ্রহের বিরাম নেই। কখনও প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপরে সহপাঠীদের যৌন নির্যাতন। কখনও বা অভিযোগের তির খোদ বিশ্বভারতীর ছাত্র কল্যাণ আধিকারিক কিংবা বিভাগীয় অধ্যক্ষের দিকে। ছাত্রী হেনস্থার প্রতিবাদ করাতেও বিপত্তি। সম্প্রতি পড়ুয়াদের প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় ‘ফেল’ করানোর প্রচ্ছন্ন শাসানিরও অভিযোগ রয়েছে কলাভবনের এক বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে। একের পর এক এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমের হাত ধরে প্রকাশ্যে আসায় মুখ পুড়েছিল বিশ্বভারতীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১০
Share:

ছাত্রী নিগ্রহের বিরাম নেই।

Advertisement

কখনও প্রথম বর্ষের ছাত্রীর উপরে সহপাঠীদের যৌন নির্যাতন। কখনও বা অভিযোগের তির খোদ বিশ্বভারতীর ছাত্র কল্যাণ আধিকারিক কিংবা বিভাগীয় অধ্যক্ষের দিকে।

ছাত্রী হেনস্থার প্রতিবাদ করাতেও বিপত্তি। সম্প্রতি পড়ুয়াদের প্রতিবাদে সামিল হওয়ায় এক ছাত্রীকে পরীক্ষায় ‘ফেল’ করানোর প্রচ্ছন্ন শাসানিরও অভিযোগ রয়েছে কলাভবনের এক বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে।

Advertisement

একের পর এক এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমের হাত ধরে প্রকাশ্যে আসায় মুখ পুড়েছিল বিশ্বভারতীর। এ বার তাই ফতোয়া জারি হল সাংবাদিকদের উপরেই। মঙ্গলবার বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার ডি গুনশেখরনের জারি করা এক বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছেবিশ্বভারতীয় শিক্ষাঙ্গনে সাংবাদিক বা চিত্র সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষেধ।

ওই নোটিসে জানানো হয়েছে, বিশ্বভারতীর কোনও দফতর, গ্রন্থাগার, প্রশাসনিক ভবন এমনকী আশ্রমের ‘কোর’ এলাকায় কোথাও বহিরাগত কিংবা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা রেজিস্ট্রারের অনুমতি ছাড়া ঢুকতে পারবেন না। ওই নির্দেশ মেনে চলা হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে প্রতিটি বিভাগের অধ্যক্ষকে সতর্ক নজরদারির নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। শুধু সাংবাদিক নন, ওই বিজ্ঞপ্তিতে ‘বহিরাগত’-দের প্রবেশাধিকারের উপরেও দাঁড়ি টেনে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু বছরভর শান্তিনিকেতন এবং রবীন্দ্র-স্মৃতি বিজরিত আশ্রমের বিভিন্ন এলাকা দেখতে ভিড় করেন পর্যটকেরা। তাঁদের প্রবেশাধিকারও কি বন্ধ হয়ে গেল? বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে এর স্পষ্ট উত্তর নেই। আশ্রমের ‘কোর’ এলাকা বলতে কোন এলাকাগুলিকে বলা হয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্তের সঙ্গে চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। রেজিস্ট্রার এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

বিশ্বভারতীর মিডিয়া ইন্টারফেস কমিটির চেয়ারপার্সন সবুজকলি সেন-এর জবাবেও এর উত্তর মেলেনি। তিনি বলেন, “বিশ্বভারতীতে বেশ কিছু দিন ধরে কিছু অবাঞ্ছিত ঘটনায় কর্তৃপক্ষ ওই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন।” কিন্তু ওই বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্বভারতী তথা শান্তিনিকেতনের খোলামেলা আবহ বিঘ্নিত হচ্ছে না কি?

প্রশ্ন তুলেছেন পুরনো আশ্রমিকরা। তাঁদের অনেকেই জানিয়েছেন, শান্তিনিকেতনের সিংহভাগ এলাকাই বিশ্বভারতীর আওতাধীন। সেখানে বহিরাগত চিহ্নিত করে প্রবেশাধিকার বন্ধ করলে চলবে কী করে? তাঁদেরই এক জনের কথায়, “আশ্রম প্রতিষ্ঠার পরে, রবীন্দ্রনাথ সাপ্তাহিক ছুটির দিন হিসেবে রবিবার নয়, বেছে নেন বুধবার। তার কারণ, কলকাতা বা অন্য এলাকার মানুষ সাধারণত রবিবার, বা ছুটির দিন শান্তিনিকেতনে আসেন। সে দিন শান্তিনিকেতনে ছুটি থাকলে কর্মময় পরিবেশ তাঁরা দেখবেন কী করে?” এখন ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে পর্যটক বা সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করলে শান্তিকেতনের খোলামেলা চরিত্রটাই বাধা পাবে, মত তাঁদের।

শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা, প্রবীণ শিল্পী সনৎ কর বলেন, “আমার বাড়ি বিশ্বভারতী এলাকায়। পরিজন এলে কী করব, তাঁদের কি বহিরাগত বলে ব্রাত্য করে দেব!” বিশ্বভারতী কর্মসমিতিতে রাষ্ট্রপতি মনোনীত সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ও এ খবরে ‘হতাশ’। তিনি বলেন, “এটা বিশ্বভারতীর চরিত্র বিরোধী।” স্থানীয় সাংসদ তৃণমূলের অনুপম হাজরার আক্ষেপ, “এই সিদ্ধান্তে রবীন্দ্র অনুরাগীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে।”

আক্ষেপ রয়েছে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য সুজিতকুমার বসুরও। এমন ফতোয়ার কথা শুনে বিস্মিত সুজিতবাবু বলেন, “শুনে অবাক হচ্ছি। কার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, কী ভাবে নির্দেশ জারি হল, বুঝতে পারছি না।” আর এক প্রাক্তন উপাচার্য রজতকান্ত রায়ের প্রশ্ন, “এমন সিদ্ধান্তে মানুষের অধিকারেই হস্তক্ষেপ করা হল। রবীন্দ্রনাথের অনেক কিছু দর্শনীয় রয়েছে আশ্রমে। পর্যটকরা তা দেখবেন কী করে?” এক প্রবীণ আশ্রমিক বলেন, “রবীন্দ্রনাথ যে আশ্রমের স্বপ্ন দেখতেন, তা উন্মুক্ত, অবাধ। সকলের প্রবেশাধিকার রয়েছে সেখানে।”

বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ সেই রবীন্দ্র ভাবনাকে অবজ্ঞা করতে পারেন কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন