ভিজল জেলা, শান্তিবারির আশায় কলকাতা

দহনের বিরাম নেই কলকাতায়। তবে নিষ্ঠুর এপ্রিল ফুরোতেই পূর্বাভাস আংশিক সত্যি করে নদিয়া-সহ কয়েকটি পড়শি জেলায় ঝড়বৃষ্টি নেমেছে। আজ, সোমবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বলে হাওয়া অফিসের আশ্বাস।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৬ ০২:১১
Share:

গরমে সুনসান। ধর্মতলায় রবিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দহনের বিরাম নেই কলকাতায়। তবে নিষ্ঠুর এপ্রিল ফুরোতেই পূর্বাভাস আংশিক সত্যি করে নদিয়া-সহ কয়েকটি পড়শি জেলায় ঝড়বৃষ্টি নেমেছে। আজ, সোমবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় ঝড়বৃষ্টি হতে পারে বলে হাওয়া অফিসের আশ্বাস।

Advertisement

আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, রবিবার কলকাতায় ফের তাপপ্রবাহ বইলেও নাকাল করা গরম থেকে রেহাই মেলার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। সেই সম্ভাবনা তৈরি করেছে একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। তার প্রভাবেই ধেয়ে আসতে পারে ঝড়। নামতে পারে বৃষ্টি। সব মিলিয়ে আগামী অন্তত দু’তিন দিন গরমে কিছুটা রাশ পড়বে।

এপ্রিলে তিন-চারটি কালবৈশাখীই স্বস্তি দেয় গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গকে। কিন্তু এ বার একটিও কালবৈশাখীর দেখা মেলেনি ওই মাসে। এপ্রিল অবসানের আশায় থাকতে বলেছিলেন আবহবিদেরা। রেডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে তাঁরা জানান, রবিবার, ১ মে-র দুপুরেই ওড়িশার লাগোয়া পূর্ব মেদিনীপুরে এবং মুর্শিদাবাদ-নদিয়ার উপরে আলাদা আলাদা ভাবে দু’টি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। তা থেকে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগনার একাংশে ঝ়ড়বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়বৃষ্টি পেয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েকটি জায়গাও। কিছু কিছু এলাকা থেকে শিলাবৃষ্টির খবরও এসেছে। হাওয়া অফিসের খবর, বজ্রগর্ভ মেঘ যে-সব এলাকা দিয়ে বয়ে গিয়েছে, স্বস্তির ঠান্ডা হাওয়া মিলেছে তার আশপাশের জেলাগুলিতেও।

Advertisement

নাকাল করা গরম দেখে এ বার তো অনেকে এমন ঝড়বৃষ্টির আশা কার্যত ছেড়েই দিয়েছিলেন। ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের অন্তর্জালেও ছড়িয়ে পড়ছিল নানান আকুতি। তা সে শিশুমুখে বসানো ‘কালবৈশাখী নয়, আজবৈশাখী’র আর্জি হোক বা আকাশ থেকে আঁকশি দিয়ে মেঘ টেনে নামানোর কার্টুন। মহানগরে বৃষ্টি না-হোক, লাগোয়া জেলায় এ দিন দহন থেকে সাময়িক স্বস্তি মিলতেই লোকজন অন্তর্জালে ছড়িয়ে দিয়েছেন বৃষ্টির ছবি, ভিডিও। যেমন বনগাঁর এক তরুণী ফেসবুকে ঝড়ের মাতনের ভিডিও আপলোড করে লিখেছেন, ‘বিকেলে বোশেখের ঝড়’। হাবরার এক বাসিন্দা আবার শিলাবৃষ্টির ছবি দিয়ে শৈশবের স্মৃতি হাতড়েছেন।

জেলায় জেলায় ঝড়বৃষ্টি দেখে অন্তর্জালে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ধরনের ‘পূর্বাভাস’-ও। আর সেগুলো দেখে দমদম এলাকার এক তরুণীর আশা, ‘সোমবার বৃষ্টি হবেই। এ দিনের আকাশ দেখেই আমি তা বুঝতে পেরেছি।’ কেউ কেউ আবার গত কয়েক বছর ২ মে বৃষ্টি হয়েছিল কি না, সেই সমস্ত স্মৃতি হাতড়ে আশার পূর্বাভাসে মেতে উঠেছেন।

যাদের আশ্বাসের জন্য মুখিয়ে থাকেন মানুষ, পিছিয়ে নেই সেই হাওয়া অফিসও। স্বস্তির পূর্বাভাস দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তিনি বলছেন, ‘‘ঝড়বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কয়েক দিন স্বস্তি মিলতে পারে।’’

এ বছর তো ফেব্রুয়ারির শেষ থেকেই গরমের রমরমা। গোটা এপ্রিলে বৃষ্টি হয়নি। বরং রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে নাগাড়ে তাপপ্রবাহ বয়েছে। ঝাড়খণ্ডের ‘লু’ বা গরম হাওয়ার দাপটে নাকাল হয়েছে মহানগরীও। এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি। আবহবিজ্ঞানের পরিভাষায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ ডিগ্রি বেশি হলেই সেটা তাপপ্রবাহ। সেই অর্থে কলকাতাতেও এ দিন ফের তাপপ্রবাহ বয়েছে। বাঁকুড়ার তাপমাত্রা উঠে গিয়েছে ৪৫ ডিগ্রিতে। সেটাও স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি বেশি। অর্থাৎ তাপপ্রবাহ সেখানেও। কলকাতা-বাঁকুড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাপপ্রবাহের কবলে বীরভূমও।

তা হলে দক্ষিণবঙ্গেরই কয়েকটি জেলায় এমন ঝড়বৃষ্টি হল কী ভাবে?

আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিহার থেকে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিস্তৃত রয়েছে। তার প্রভাবে সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে হুড়মুড়িয়ে। সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করছে। দ্রুত ঠান্ডা হয়ে মেঘের ভিতরে জলকণা জমে বরফকণাও তৈরি হচ্ছে। এ দিন যে-শিলাবৃষ্টি হয়েছে, জলীয় বাষ্প দ্রুত ঠান্ডা হওয়াটাই তার কারণ বলে অনেক আবহবিদের অভিমত।

স্বস্তির ঝড়বৃষ্টি মিললেও কেউ কেউ কিন্তু একটা অস্বস্তির কথা তুলছেন। তাঁরা বলছেন, মেঘ-ঝড়-জলে তাপমাত্রা বাড়তে পারবে না ঠিকই। কিন্তু বাতাসে বাড়তি জলীয় বাষ্পের জন্য আর্দ্রতা মাথাচাড়া দেবে। ফলে প্যাচপেচে ঘাম সইতে হবে।

প্রাণ ওষ্ঠাগত করে দেওয়া গরম থেকে রেহাই পেতে সেই অস্বস্তিকে অবশ্য আমল দিচ্ছেন না অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন