Smuggling

Wildlife Poaching: বাড়ছে পথে পাচার, ধরা পড়ছে পাখি

মহাজনের কাছে দাদন নিয়ে তাই দ্বিগুণ ‘মাল’ (পাখি) তুলে দিতে হচ্ছে তাদের। রেলপথ বন্ধ। অতিমারির থাবায় পাখি-পাচারের উপায়ও গিয়েছে বদলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ওদের হরেক নাম— পাখমারা, ফান্দিয়া, পাখিলা, স্থান-কাল-ভাষা ভেদে সরতে সরতে কোথাও বা তারা বেদিয়া কিংবা হরবোলা। সজল গ্রাম বাংলা থেকে রুখু রাঢ়বঙ্গ, নাম বদলে গেলেও তাদের রুজি বদলায় না, পাখি ধরা। লকডাউনের স্তব্ধতায় যাদের ‘কাজকম্মের’ সুযোগ বেড়ে গেলেও আয় গিয়েছে পড়ে।

Advertisement

মহাজনের কাছে দাদন নিয়ে তাই দ্বিগুণ ‘মাল’ (পাখি) তুলে দিতে হচ্ছে তাদের। রেলপথ বন্ধ। অতিমারির থাবায় পাখি-পাচারের উপায়ও গিয়েছে বদলে। পাচারকারীরা এখন বাস-ট্রাকের মাথায় আর পাঁচটা ঝাঁকার সঙ্গে লুকিয়ে পাখি পাচার করার অবিরল চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর, তা করতে গিয়ে ধরাও পড়ছে।

বন দফতরের হিসেব বলছে, দক্ষিণবঙ্গে জাতীয় সড়ক কিংবা রাজ্য সড়কে অভিযান চালিয়ে লকডাউনের গত দেড় বছরে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার টিয়া-চন্দনা-পাহাড়ি ময়না-বুলবুলি কিংবা বদ্রিকা পাখি আটক করা হয়েছে। লকডাউনের আগে সংখ্যাটা এর সিকি ভাগও ছিল না। বন দফতরের চিফ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন দেবল রায় বলেন, ‘‘রুজির টানে পাখি ধরা হয়তো বেড়েছে। তবে বন দফতরের সতর্কতায় ধরাও পড়ছে আগের থেকে অনেক বেশি।’’

Advertisement

পক্ষীপ্রেমী বেসরকারি সংগঠন ‘সেভ দ্য উইংস’-এর পক্ষে নীলেশ মহাপাত্র বলছেন, ‘‘রুজির সব পথ বন্ধ হলেও পাখমারারা পাখি ধরছে অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি। কিন্তু তা পাইকারের হাতে তুলে দিয়ে আয় হচ্ছে পাখি প্রতি ১০-১২ টাকা, কখনও বা তারও কম।’’ তবু পেটের দায়ে তাদের পাখি ধরার বিরাম নেই। কারণ, নীলেশের কথায়, ‘‘গ্রামের অবস্থাপন্ন মহাজনের কাছে এই সব হরবোলা বা পাখমারারা দাদন বা টাকা ধার নেন, কেউ হাজার কেউ বা দু’হাজার টাকা। রফা হয়, বিনিময়ে দিতে হবে দুশো বা আড়াইশো পাখি। মহাজন সেই পাখি পাইকারের কাছে প্রায় তিন গুণ দামে বিক্রি করেন।’’ কিন্তু কলকাতার পাইকার সেই সব টিয়া-ময়না গ্যালিফ স্ট্রিটের রবিবারের হাটে বিক্রি করে দাঁও মারেন ২৫০-৩০০ কখনও বা ৫০০ টাকা। কলকাতার এক পক্ষী-কারবারি কবুল করছেন, ‘‘টিয়া-চন্দনার বড় বাজার বাংলাদেশের ঢাকায়। কখনও বা তা তাইল্যান্ড হয়ে পাড়ি দিচ্ছে হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরে। সে ক্ষেত্রে লাভের অঙ্ক বহু গুণ বেড়ে যায়!’’

পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম— রাজ্যের এই তিন জেলার শাল জঙ্গল টিয়া-চন্দনার আঁতুরঘর। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, টিয়া, চন্দনা, রাজ-টিয়ার ঘর বাঁধার সময়। এই সময় বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর, ঝাড়গ্রাম কিংবা মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গাছের কোটর কিংবা পুরনো পরিত্যক্ত আবাসে ঘর বাঁধে টিয়া। নিঃশব্দে সেখানেই পা পড়ে পাখমারাদের। সদ্য ডিম ফোটা ছানা তুলে এনে তাকে দু’থেকে তিন মাস লালন করে পাইকারের হাতে তুলে দেওয়াই চলতি রেওয়াজ। ময়না-বুলবুলি-মুনিয়া-কণ্ঠী ঘুঘু ধরার রীতি অবশ্য ফাঁদ পেতে। ঝাড়খণ্ড কিংবা ওড়িশা থেকেও দেদার ধরা হচ্ছে পাখি। তার পর ঢাউস ঝাঁকার আড়ালে বাসের মাথা কিংবা ট্রাকের ডালায় উঠে পড়ছে পাখি বোঝাই ঝাঁকা। বন দফতরের হিসেব বলছে, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে বরাবর অভিযান চালিয়ে ইতিমধ্যেই প্রায় সাত হাজার পাখি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। দেদার পাখি ধরা পড়ছে খড়্গপুর, মেদিনীপুর বন বিভাগ এলাকাতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন