অনিশ্চিত: রোগীর দীর্ঘ লাইন আউটডোরে। বুধবার, বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। ছবি: শৌভিক দে।
রোগীর লম্বা লাইনটা এঁকেবেঁকে বহু দূর চলে গিয়েছে। অপেক্ষা করতে করতে ইমার্জেন্সির মেঝেতে শুয়ে পড়েছেন অনেকে। আউটডোরে তিল ধারণের জায়গা নেই। ওয়ার্ডে চলাফেরা করতে গেলে রোগীর গায়ে পা ঠেকে যাচ্ছে। এক রোগীকে দেখে চিকিৎসক ঘাড় ঘোরানোর আগেই সামনে চলে আসছেন আরও অন্তত পাঁচ জন।
ডেঙ্গির দাপটে এটাই যেখানকার নিত্যদিনের অবস্থা, সেখানে ৭৪ শতাংশ কম ডাক্তার-নার্স নিয়ে কাজ চলছে মাসের পর মাস। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল যেন আক্ষরিক অর্থেই রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের দুয়োরানি। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বার বার এ নিয়ে ফাইল চালাচালি হয়েছে। হাসপাতাল কর্তারা নিজেরাই স্বাস্থ্য ভবনে গিয়ে ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু শুধু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই জোটেনি। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘অকারণে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে এখআনে রোগী রেফআর হচ্ছে। ডেঙ্গি রোগীতে যখন হাসপাতাল ছেয়ে যেতে শুরু করল, তখনই আমরা স্বাস্থ্য ভবনে জানিয়েছিলাম, অতিরিক্ত ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে না পারলে পরিষেবা চালানো সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ভবন থেকে নির্দেশ জারি করা হয়, কলকাতার চারটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পালা করে স্নাতকোত্তর স্তরের কয়েকজন মেডিক্যাল পড়ুয়াকে পাঠানো হবে। কিন্তু মাত্র কয়েক দিন কেউ কেউ এসেছিলেন। তার পর ফের যে কে সেই। এ ভাবে যথাযথ পরিষেবা দেওয়া তো সম্ভব হচ্ছেই না, উপরন্তু অধিকাংশ দিনই রোগীদের রোষের শিকার হচ্ছি আমরা।’’ স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ না মেনে কী ভাবে পার পেয়ে যাচ্ছেন সকলে? উত্তর মেলেনি।
প্রশ্ন উঠেছে, চিকিৎসক-নার্সের ঘাটতি তো রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালেই রয়েছে। কিন্তু ৭০ শতাংশেরও বেশি ঘাটতি নিয়ে কী ভাবে দিনের পর দিন চলতে পারে? এ নিয়ে কি সর্বোচ্চ মহলে কোনও প্রশ্ন ওঠে না? হাসপাতালের ওই কর্তার কথায়, ‘‘প্রশ্নটা তুলবে কে? আমরা বার বার সংক্রামক রোগের স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন চালু করার ব্যাপারে আবেদন করছি। কিন্তু স্বাস্থ্য ভবন থেকে সে কথায় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। তার কারণ, সেটা চালু হলেই মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া (এমসিআই)-এর আওতায় আসতে হবে। আর এমসিআই-এর আওতায় এলে শিক্ষক-চিকিৎসকের সংখ্যায় ১৫ শতাংশের বেশি ঘাটতি থাকা কোনওভাবেই চলবে না।’’
আইডি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৬৬০। এই মুহূর্তে ভর্তি রয়েছেন এর দ্বিগুণেরও বেশি রোগী। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় রাজ্যের সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে ডায়রিয়া, জলাতঙ্কের পাশাপাশি ডেঙ্গি, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু-র মতো রোগেরও চিকিৎসা হয়। রোগীর সংখ্যা ও রোগগত বৈচিত্রের কারণে পঠনপাঠন ও গবেষণার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান এই হাসপাতাল। কিন্তু তার যথাযথ ব্যবহারই হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না? সে নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে নারাজ স্বাস্থ্যকর্তারা। এমনকী হাসপাতালের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্রকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এটা অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ নিয়ে বাইরে কথা বলব না।’’
শূন্য পদের খতিয়ান
কোন পদ আছেন অনুমোদিত পদ
• শিক্ষক-চিকিৎসক ০৬ ২২
• মেডিক্যাল অফিসার ১৪ ৩১
• নার্স ১২০ ২৮৬