— ফাইল চিত্র।
রোগী বা তাঁদের পরিবারের সঙ্গে নার্সদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আকছার ওঠে। ঠিক যে ভাবে ডাক্তারদের ‘মানবিক’ হওয়ার ওপরে ইদানিং জোর দেওয়া হচ্ছে, সে ভাবেই নার্সদের ‘মানবিক’ হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও উঠে আসছে নানা ঘটনায়। বিশেষত এ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের নার্সদের ব্যবহার এবং ধৈর্য্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। কখনও অস্ত্রোপচারের পরে রোগীর কী কী নিয়ম মেনে চলা উচিত তা সঠিক ভাবে বোঝাতে না পেরে বিপত্তি, কখনও আবার রোগী মৃত্যুর খবর পরিজনকে দেওয়া নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড বাধে হাসপাতালে। এই সমস্যা দূর করতে এ বার উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
সরকারি হাসপাতালের নার্সদের আচরণ নিয়ে এ বার প্রশিক্ষণ শুরু করেছে স্বাস্থ্য দফতরের অধীন ইনস্টিটিউট অব হেলথ এ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার। স্বাস্থ্য দফতরের একটি দল বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ঘুরে এই কাজ শুরু করেছে।
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে এসএসকেএম হাসপাতালের নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর পরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নার্সদের প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হবে। ধাপে ধাপে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের নার্সদের সরাসরি প্রশিক্ষণ দেবে স্বাস্থ্য দফতর। আবার সেই সব প্রশিক্ষিত নার্সেরা রাজ্যের বাকি হাসপাতালগুলিতে প্রশিক্ষণ পর্ব চালাবেন।
কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে? স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, মূলত তিনটি বিষয় শেখানো হচ্ছে। রোগীর মৃত্যু হলে কী ভাবে পরিজনেদের খবর দেওয়া হবে। অনেক সময়ে রোগী মৃত্যুর খবর পেয়ে পরিজনেরা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। কী ভাবে আরও সংবেদনশীল হয়ে এই মৃত্যুর খবর দেওয়া যায়, সেটাই হাতেকলমে তাঁদের সেখানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: মনুয়া এমন? বিশ্বাস হচ্ছে না মামার
এ ছাড়াও ভেন্টিলেশনে থাকা রোগীকে পরিজনেরা দেখার সুযোগ না। কিন্তু তাঁদের উদ্বেগটা থেকেই যায়। তখন তাঁরা নার্সদের থেকে বারবার খবর নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরিজনদের মানসিক অবস্থা বুঝে সহজ ভাবে রোগীর শারীরিক পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে তাঁদের। সবচেয়ে জরুরি, হাসপাতালে রোগীর পরিজনেরা অনেক সময়ে কর্মীদের উপরে চড়াও হন। সেই পরিস্থিতি কী ভাবে সামলাতে হবে, শেখানো হচ্ছে তা-ও।
বিষয়গুলি বুঝিয়ে বলার পাশাপাশি চলছে অডিও-ভিস্যুয়াল পর্বও। নাটকের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে পরিস্থিতি কেমন হয়, আর সেখানে কী ধরনের আচরণ প্রয়োজন। কোনটা সংযত, কোনটা সমস্যা তৈরি করতে পারে।
নার্সদের ইউনিয়নের তরফ থেকে জানানো হচ্ছে, এ রাজ্যের বহু হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় নার্সের সংখ্যা যথেষ্ট কম। তার ওপরে আবার একেকটি ওয়ার্ডে যত জন রোগী থাকার কথা, থাকেন তার চেয়ে অনেক বেশি, সেই চাপটা গিয়ে পড়ে নার্সদের ওপরেই। ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পাশাপাশি চাহিদার সঙ্গে নার্সদের সংখ্যার সামঞ্জস্যের দিকেও নজর দিলে সার্বিক পরিস্থিতি আরও ভাল হবে।
ইনস্টিটিউট অব হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার-এর অধিকর্তা কৃষ্ণাংশু রায় বলেন, ‘‘কর্মীদের আচরণে উন্নতি হলে হাসপাতালের পরিবেশ আরও ভাল হবে। কিছু হাসপাতালের নার্সদের স্বাস্থ্যকর্তারা সরাসরি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। নার্সেরা নিজেরা প্রশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি যাতে অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দিতে সমর্থ হন, সে দিকটিও দেখা হচ্ছে।’’
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রাজ্যের সব হাসপাতালের নার্সেরা যাতে এই প্রশিক্ষণ পান, সে দিকে খেয়াল রাখা হবে। আচরণ ঠিক রাখার প্রশিক্ষণ পেলে সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে যে ধরনের অভিযোগ ওঠে, তা-ও অনেক কমবে বলে আমরা আশাবাদী।’’