বিয়ের পিঁড়িতে আপত্তি, ক্লাসেই ফিরলেন প্রীতি

বিয়ে রুখে কলেজ পর্যন্ত স্বপ্নের দৌড়ে সামিল হলেন বাহারাল গ্রামের প্রীতি সাহা। কন্যাশ্রী দিবসে তাই তাকে কুর্নিশ জানালো মালদহ জেলা প্রশাসন।

Advertisement

জয়ন্ত সেন

মালদহ শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

প্রীতি সাহা

বিয়ে রুখে কলেজ পর্যন্ত স্বপ্নের দৌড়ে সামিল হলেন বাহারাল গ্রামের প্রীতি সাহা। কন্যাশ্রী দিবসে তাই তাকে কুর্নিশ জানালো মালদহ জেলা প্রশাসন।

Advertisement

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে। দু’টি কিডনি বিকল হয়ে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন রতুয়ার পরীক্ষার্থী প্রীতির বাবা। নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারে দিশাহারা হয়ে পড়েন পরিবারের বড় সন্তান অষ্টাদশী ছাত্রীটি। কিন্তু পরীক্ষা দিয়েছেন। পাশাপাশি বাবাকে বাঁচাতে কন্যাশ্রী প্রকল্পে পাওয়া ২৫ হাজার টাকার পুরোটাই তুলে দিয়েছিলেন মায়ের হাতে। তাতে অবশ্য বাঁচানো যায়নি বাবাকে। আর এরপরই আরও কঠিন হয়ে যায় তাঁর লড়াই।

পিতৃহীন মেয়েটিকে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর জন্য আত্মীয়দের তোড়জোর শুরু হয়ে যায়। তা ঠেকিয়ে এখন সামসি কলেজে প্রথম বর্ষের পাঠ নিচ্ছে উচ্চমাধ্যমিকে ৬২ শতাংশ নম্বর পাওয়া প্রীতি। মালদহ জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক অসীম রায় বলেন, ‘‘এক দিকে বাবার মৃত্যু, অন্য দিকে সংসার কী ভাবে চলবে তা নিয়ে মায়ের অসহায় অবস্থা—দুই চাপেই ১৮ বছরেই প্রীতিকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য করানো হচ্ছিল। কিন্তু প্রীতি নিজেই রুখে দাঁড়িয়েছেন।’’

Advertisement

সাইকেলে করে পাঁউরুটি বিক্রি করতেন প্রীতির বাবা সুভাষ সাহা। ছোট ভাই প্রীতম চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। ১৬ ফেব্রয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়েন সুভাষবাবু। আগের দিনই শুরু হয়েছিল প্রীতির উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। আকাশ ভেঙে পড়েছিল পরিবারের মাথায়। প্রীতি বলেন, ‘‘বাবা যে দিন অসুস্থ হন, সে দিনই আমি জানতে পারি, আমার অ্যাকাউন্টে কন্যাশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা এসেছে। ভেবেছিলাম সেই টাকায় পড়াশোনা করব। কিন্তু ওই পরিস্থিতি দেখে আমি কুড়ি হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলাম মায়ের হাতে।’’

প্রায় ১৫ দিন মালদহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি ছিলেন সুভাষবাবু। কিন্তু তাঁর চিকিৎসার খরচ দিন দিন বাড়ছিল। পরিজনেরা একরকম বাধ্য হয়েই বাড়িতে নিয়ে আসেন তাঁকে। ২৫ মার্চ বাড়িতেই মারা যান তিনি।

প্রীতি জানিয়েছেন, বাবার মৃত্যুর পরপরই তাঁর ভাইকে এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসা হয়, আর তাঁর বিয়ে ঠিক করে ফেলেন আত্মীয়স্বজনরা। কিন্তু রুখে দাঁড়িয়ে প্রীতি যে শুধু বিয়ে আটকে কলেজে ভর্তি হয়েছেন তাই নয়, কন্যাশ্রীর বাকি টাকায় বাবার ব্যবসার হাল ধরারও চেষ্টা করছেন। প্রীতির কথায়, ‘‘পড়া শেষ করে চাকরি করব। কিন্তু এখন তো সংসার চালাতে হবে। তাই বাবার ব্যবসাটা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি।’’

এই খবর কানে আসতেই রবিবার কন্যাশ্রী দিবসে মালদহ কলেজ অডিটোরিয়ামে তাঁকে সংবর্ধনা দিল মালদহ জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দেবতোষ মণ্ডলের বিশ্বাস, প্রীতির লড়াই কন্যাশ্রী মেয়েদের মধ্যে চেতনা জাগাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন