শাশুড়ি অসুস্থ, তাই মাকে বাড়িতে ঠাঁই দিল না ছেলে!

দু’কামরার ভাড়াবাড়িতে ছ’জনের সংসার। তার মধ্যে রয়েছেন অসুস্থ শাশুড়িও। তাই অসুস্থ মাকে ‘বাড়িতে রাখতে পারলেন না’ ছেলে। সত্তর বছরের জয়শ্রী বিশ্বাস এখন হাসপাতাল ঘুরে আশ্রয় পেয়েছেন হাকিমপাড়ার ঝিমলি ঘোষের বাড়িতে, যাঁর কাছে চোদ্দো বছর পরিচারিকার কাজ করেছিলেন তিনি।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার 

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩০
Share:

ঝিমলিদেবীর সঙ্গে জয়শ্রী বিশ্বাস (ডান দিকে)। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

দু’কামরার ভাড়াবাড়িতে ছ’জনের সংসার। তার মধ্যে রয়েছেন অসুস্থ শাশুড়িও। তাই অসুস্থ মাকে ‘বাড়িতে রাখতে পারলেন না’ ছেলে। সত্তর বছরের জয়শ্রী বিশ্বাস এখন হাসপাতাল ঘুরে আশ্রয় পেয়েছেন হাকিমপাড়ার ঝিমলি ঘোষের বাড়িতে, যাঁর কাছে চোদ্দো বছর পরিচারিকার কাজ করেছিলেন তিনি।

Advertisement

বিন্নাগুড়িতে নিজেদের জমি-জায়গা ছিল জয়শ্রীদের। স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়ের বিয়ে দিয়ে আর্থিক কষ্টে পড়েন তাঁরা। তখন তার ছেলে পার্থ শিলিগুড়িতেই জয়শ্রীদেবীর দিদির এসটিডি বুথ চালানোর কাজে বহাল হন। পরে তিনি টোটো কেনেন।

জয়শ্রীর কথায়, তার পরেই বউকে নিয়ে আলাদা হয়ে যান পার্থ। নিজের খরচ চালাতে ঝিমলিদের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ নেন জয়শ্রী। তাঁর দাবি, এই সময়ে জমি বিক্রির টাকাও কিছু কিছু করে অ্যাকাউন্ট থেকে তুলে দিতে হয়েছে ছেলেকে। ছ’মাস আগে জয়শ্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যান পার্থ। জয়শ্রীর অভিযোগ, ‘‘তার পর থেকেই ছেলের বউয়ের সঙ্গে অশান্তি শুরু হয়। শেষে ছেলে চম্পাসারিতে তার এক বন্ধুর বাড়িতে রেখে আসে আমায়।’’

Advertisement

সেখানে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন জয়শ্রী। তখন তৃণমূলের কয়েক জন কর্মী তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানেই ঝিমলিদের বাড়ির কথা বলেন জয়শ্রী। ঝিমলিদেবী বলেন, ‘‘ছেলে বের করে দেওয়ার পরে অসহায় অবস্থায় জয়শ্রীদেবী আমাদের কথাই বলছিলেন। খবর পাওয়ার পর আশ্রয় না দিয়ে পারিনি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘বিপদে পড়ে মানুষ নিজের বন্ধুর কথাই মনে করে। জয়শ্রী আমাদের কথা বলেছেন, কারণ এখানে উনি নিজের বাড়ির মতোই ছিলেন।’’ সে বাড়িতে এখন ভালই আছেন জয়শ্রী। তবে বেশি দিন অন্যের হাত তোলা হয়ে থাকতে চান না। বলেন, ‘‘একটু সুস্থ হয়েই বৃদ্ধাশ্রমে চলে যাব।’’ স্থানীয় তৃণমূলের লোকজন তেমনই একটি বৃদ্ধাশ্রমের খোঁজ করছেন।

কেন মাকে বের করে দিতে হল? পার্থর দাবি, রবীন্দ্রনগরে দু’কামরার ভাড়াবাড়িতে তাঁরা এমনিতেই ৬ জন মানুষ। বউ ছাড়াও তিন মেয়ে এবং তাঁর অসুস্থ শাশুড়ি। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘বউয়ের সঙ্গে মায়ের নিত্য ঝামেলা। তিন মেয়ের দুই মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তার পরে মায়ের শরীর ভাল নয়। যখন তখন মলত্যাগ করে ফেলেন। তাই নিয়েও অশান্তি। কী করি!’’ পার্থবাবু দাবি, ‘‘আমার বউও পরিচারিকার কাজ করেই তার মায়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন।’’ মাকে কবে বাড়ি ফেরাবেন? নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারেননি পার্থ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন