শীতের কামড় সয়ে শুনানিতে
SIR Hearing

লাইনে বৃদ্ধ, সন্তানসম্ভবা

যেমন ৯৬ বছরের বৃদ্ধ নিখিলচন্দ্র সরকার। তাঁকে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল কোচবিহারের দিনহাটা ১ ব্লক অফিসে। সেখানে বসার জায়গা না থাকায় টোটোতেই ঠায় অপেক্ষায় ছিলেন নবতিপর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৮:৩০
Share:

এসআইআর-শুনানির দ্বিতীয় দিনে। রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে। ছবি: অমিত মোহান্ত।

নির্বাচন কমিশনের শুনানির নোটিস এসেছে। অতএব লাইনে দাঁড়াতেই হবে। রবিবার ছুটির দিনেও তাই উত্তর থেকে দক্ষিণ, রাজ্যের সর্বত্র হাজিরা-লাইনে দাঁড়াতে হল হাজার হাজার নাগরিককে। কনকনে ঠান্ডায় কষ্ট বেশি হয়েছে বয়স্কদের। প্রসব যন্ত্রণা সয়ে হাজিরা দিতে হয়েছে অন্তঃসত্ত্বা তরুণীকেও। একই সঙ্গে শুনানির কাজ শেষ হতে হতে একাধিক জায়গায় সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে।

যেমন ৯৬ বছরের বৃদ্ধ নিখিলচন্দ্র সরকার। তাঁকে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল কোচবিহারের দিনহাটা ১ ব্লক অফিসে। সেখানে বসার জায়গা না থাকায় টোটোতেই ঠায় অপেক্ষায় ছিলেন নবতিপর। তাঁর ছেলে নিমাই সরকারের ক্ষোভ, “বাবার বয়স ৯৬ পেরিয়েছে। দু’বার বড় ধরনের হৃদ্‌রোগ হয়েছে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঠিক মতো হাঁটা তো দূরের কথা, কথাও বলতে পারেন না। অথচ শুনানিকেন্দ্রে বসার জায়গাই ছিল না!”

৮৫ বছরের বেশি বয়সিদের শুনানি সংশ্লিষ্টদের বাড়িতে করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও কোচবিহারের জেলাশাসক রাজু মিশ্র জানান, বাড়িতে শুনানির কোনও নির্দেশ এখনও পর্যন্ত আসেনি। সে বিষয়ে কোনও আবেদনও পাওয়া যায়নি। বয়স্ক বা বিশেষ ভাবে সক্ষমদের ক্ষেত্রে এমন আবেদন পেলে কমিশনে জানানো হবে।

এই কথা বলছে প্রশাসন। ও দিকে, হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রবীণ মানুষজনের ভোগান্তি চরমে। হাওড়ার বাগনান ২ ব্লকের বিশালাক্ষীতলার বাসিন্দা, বছর সত্তরের অষ্ট অধিকারীর শরীরের ডান দিক পক্ষাঘাতগ্রস্ত। এ দিন শুনানিকেন্দ্রে পৌঁছন কষ্ট করে। মেয়ের হাত ধরে সিড়ি ভেঙে তাঁকে উঠতে হয় দোতলায়। তাঁকে ডাকা হয়েছিল বেলা ৩টেয়। শুনানি শেষ হল বিকেল সাড়ে ৫টায়। প্রশাসনের দাবি, কাগজপত্র খুঁটিয়ে দেখার জন্যই দেরি। চুঁচুড়ায় মহকুমাশাসকের কার্যালয়ের শুনানিকেন্দ্রে সিঁড়ি ভেঙে ক্লান্ত অশীতিপর এক বৃদ্ধের কথায়, ‘‘কোমরের ব্যথা। বাড়িতে দোতলায় শেষ কবে উঠেছি, মনে নেই! এই বয়সে টোটোর ঝাঁকুনি সয়ে এখানে এসে সিঁড়িও ভাঙতে হল!’’

উত্তর দিনাজপুরে ইটাহারের শুনানিকেন্দ্রের বাইরে দাঁড়ানো সুলতানা বিবি বলেন, “বৃদ্ধ কাকাশ্বশুরকে নিয়ে এসেছি। অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। চারদিক খোলা জায়গায়, একটা ঘরেরও ব্যবস্থা হয়নি। কাকাশ্বশুর ঠান্ডায় কাঁপছিলেন।” পুরুলিয়া শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, বছর পঁচাশির সনযুতি রাজোয়াড়কে প্রবল ঠান্ডায় শুনানির জন্য হাজির হতে হয়েছিল পুরুলিয়া ১ ব্লক অফিসে। তাঁর ক্ষোভ, বাড়িতে শুনানির ব্যবস্থা হবে বলা হলেও কেন তা কার্যকর হচ্ছে না।

এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা ২ ব্লকে প্রসব যন্ত্রণা নিয়েই হাজিরায় এসেছিলেন এক তরুণী। এ দিনই ছিল তাঁর প্রসবের নির্দিষ্ট দিন। তরুণীর পরিস্থিতি দেখে অবশ্য ব্লক প্রশাসন তাঁকে দ্রুত ছেড়ে দেয়। ঝাড়গ্রামে, মহকুমাশাসকের দফতরে শুনানিকেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়ে এক জন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। মানিকপাড়ার বাসিন্দা ওই যুবক সন্ধিরাম টিকে-কে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান শুনানিকেন্দ্রের মেডিক্যাল টিমের সদস্যেরা।

এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নামখানা ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শুনানি হয়েছে। মৌসুনি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৬৩ জন ভোটারকে শুনানিতে ডাকা হয়েছিল। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুনানি শেষ হতে রাত ১০টা হয়ে যাবে। এর জেরে সমস্যায় পড়েন বহু ভোটার। দীর্ঘ ক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে।

সমস্যায় পড়েছেন এ রাজ্যের অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিকও। শুনানির নোটিস গিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের অনেক পরিযায়ী স্বর্ণশিল্পীর বাড়িতেও। কেউ কেউ বিমানের টিকিট কেটেছেন। আবার অনেকের পক্ষেই কমিশন-নির্দিষ্ট দিনে হাজির হওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাঁরা অন্য দিন দিতে আবেদন করেছেন বিএলও-র মাধ্যমে। যদিও ঘাটালের মহকুমাশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অন্য দিন চাইলেই জানানো সম্ভব নয়। কমিশনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”

সেকেন্দরাবাদের বিজয়‌ওয়াড়া থেকে ট্রেনে তিন দিন কাটিয়ে হাজিরা দিতে রবিবার বালুরঘাটের শুনানিকেন্দ্রে পৌঁছন পতিরাম থানার চকহাই গ্রামের পরিযায়ী শ্রমিক, বছর পঞ্চাশের দীনেশ পাহান। ট্রেন ভাড়ায় মোটা টাকা খরচের জন্য ওই এলাকার একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক শুনানিতে ডাক পেয়েও আসা নিয়ে দুশ্চিন্তায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন