ক্লাস এইট, তবুও ডাক্তার মুক্তার

হাতের কাছে কোনও ঠিকঠাক হাসপাতাল নেই। শরীর খারাপ হলে বা প্রসব বেদনা উঠলে ছুটতে হয় অন্তত ১৫ কিলোমিটার দূরে পড়শি রাজ্যের কিষানগঞ্জে। নিজের জেলায় নিকটতম হাসপাতাল ইসলামপুরে, যা কি না গোয়ালপোখর থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার দূরে। আর সেই সুযোগে গজিয়ে উঠেছে অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়া মহম্মদ মুক্তারের ‘নার্সিংহোম’। তিনিই সেখানে ডাক্তার হয়ে প্রসব করান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ইসলামপুর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৯
Share:

মহম্মদ মুক্তার। — নিজস্ব চিত্র

হাতের কাছে কোনও ঠিকঠাক হাসপাতাল নেই। শরীর খারাপ হলে বা প্রসব বেদনা উঠলে ছুটতে হয় অন্তত ১৫ কিলোমিটার দূরে পড়শি রাজ্যের কিষানগঞ্জে। নিজের জেলায় নিকটতম হাসপাতাল ইসলামপুরে, যা কি না গোয়ালপোখর থেকে ৩৫-৪০ কিলোমিটার দূরে। আর সেই সুযোগে গজিয়ে উঠেছে অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়া মহম্মদ মুক্তারের ‘নার্সিংহোম’। তিনিই সেখানে ডাক্তার হয়ে প্রসব করান।

Advertisement

মঙ্গলবার সেই ‘নার্সিংহোমে’ হানা দিয়ে প্রসূতিদের উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা। সেখানে তাঁদের সব চেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান রোগীর আত্মীয়েরাই। তাঁরা প্রশ্ন তোলেন, এই যদি অবস্থা হয়, তা হলে প্রসব বেদনা উঠলে প্রসূতিরা যাবেন কোথায়? শেষ অবধি অবশ্য যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে প্রসূতিকে স্থানান্তর করা সম্ভব হয়। কিন্তু ধরা যায়নি ‘ডাক্তার’ মহম্মদ মুক্তারকে। হানা দেওয়া হয় সকাল ১১টায়। আর এফআইআর হয় বিকেল পাঁচটায়। এই ছ’ঘণ্টার মধ্যে সে গা ঢাকা দিয়েছে বলেই অভিযোগ।

গোয়ালপোখরের মজলিসপুরের বাসিন্দা, একদা ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অ্যাম্বুল্যান্স চালক মুক্তারের এই নার্সিংহোম কিন্তু একাধিক প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রই বলছে, ‘মিশন মাতৃকা একশো’ ইত্যাদি প্রকল্প চালু থাকলেও হাসপাতালে প্রসবের হার গোয়ালপোখরে খুবই কম। চিকিৎসার উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবেই যে এই পরিস্থিতি, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিডিও রাজু শেরপা।

Advertisement

যে প্রসূতির পরিবারের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় স্বাস্থ্যকর্তাদের, তিনি ইয়ামসিনা বেগম। এই জেলারই চাকুলিয়ার বাসিন্দা। সোমবার রাত ২টোয় প্রসব বেদনা নিয়ে তাঁকে পনেরো কিলোমিটার দূরে লোধন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আনা হয়। অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো না থাকায় তাঁকে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালে রেফার করা হয়, যা আরও প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে। ফলে ওই অবস্থায় পরিবারের লোকেরা হাতের কাছে ওই হাতুড়ের নার্সিংহোমেই চিকিৎসা করাবেন বলে ঠিক করেন।

নার্সিংহোমটি গোয়ালপোখর থানার লোধন প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পিছনে দু’টি ঘর নিয়ে তৈরি। উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (৩) শ্যামল বিশ্বাস বলেন, ‘‘নার্সিংহোমে গিয়ে দেখা যায় নিজেকে যিনি চিকিত্সকের পরিচয় দিচ্ছেন, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি।’’ আর মুক্তার নিজে কী বলছেন? তাঁর কথায়, অ্যাম্বুল্যান্স চালানোর সময় চিকিৎসকদের দেখেই প্রসব করানো ‘শিখে’ নেন। ‘‘তার পরই যোগাযোগ করে আরএমপি(এএম)-র একটি সার্টিফিকেট জোগাড় করি। সামান্য টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা করে থাকি,’’ স্বীকারোক্তি মুক্তারের। ওই সার্টিফিকেটের আদৌ কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে জানান শ্যামলবাবু।

এর পরে নার্সিংহোমটি ‘সিল’ করে দেওয়া হয়। কিন্তু এফআইআর হতে হতে বিকেল। তত ক্ষণে গা ঢাকা দেয় অভিযুক্ত মুক্তার। এখন প্রশ্ন উঠছে সমস্যা চিহ্নিত করার পরে অভিযোগ জানাতে এত সময় লাগল কেন?

শ্যামলবাবু জানান, ‘‘প্রসূতিকে উদ্ধার করে অন্য হাসপাতালে পাঠাতে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করতেই অতটা সময় পেরিয়ে যায়।’’ অভিযান চালানোর সময়ে হাতুড়েকে পেয়েও পুলিশ তাকে আটক করল না কেন, উঠছে সে প্রশ্নও। এসডিপিও প্রদীপকুমার যাদব বলেন, ‘‘যে হেতু পুরোটাই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে হয়েছে, ফলে তাদের নির্দেশ পাওয়ার আগে আমরা কিছু করতে পারি না। তবে অভিযুক্ত শীঘ্রই ধরা পড়বে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন