‘মেঘে ঢাকা তারা’র সন্ধানে এক বিধায়ক এবং এক মন্ত্রী

এক জন ভেবেছেন, সংসার বাঁচাতে লড়াই করেছিলেন নীতা। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নায়িকা। আর রাজ্যে ‘বদল’ আনতে লড়াই করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা।

Advertisement

সঞ্জয় সিংহ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৬
Share:

‘মেঘে ঢাকা তারা’ নাটকে নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিক ও পৌলমী বসু।—নিজস্ব চিত্র।

এক জন ভেবেছেন, সংসার বাঁচাতে লড়াই করেছিলেন নীতা। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র নায়িকা। আর রাজ্যে ‘বদল’ আনতে লড়াই করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা।

Advertisement

অন্য জন ভেবেছেন, কালজয়ী সিনেমা থেকে সরাসরি নাটক মঞ্চস্থ করে তিনি বাংলা নাটকে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন।

প্রথম জন নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। দ্বিতীয় জন রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্য নির্দেশক ব্রাত্য বসু। এই দু’জনের যুগলবন্দিতে ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ এ বার মঞ্চে নামছে। নতুন বছরের দ্বিতীয় দিন থেকেই প্রতি শনিবার নাটকটি নিয়মিত অভিনীত হবে ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট মঞ্চে। নাটকটির প্রযোজক পার্থ এবং ব্রাত্য। কারণ, ‘ব্রাত্যজন (নৈহাটি)’ এই দু’জনের সংগঠন। পার্থ নিজে নীতার গায়ক দাদা শঙ্করের ভূমিকায় অভিনয়ও করছেন।

Advertisement

ভোটের ঠিক আগে শাসক দলের এক বিধায়ক এবং এক মন্ত্রী হঠাৎ ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নিয়ে কেন আসরে? এর আগেও বাংলা রঙ্গমঞ্চে ‘মেঘে ঢাকা তারা’ দেখা গিয়েছে। কিন্তু তা সরাসরি ঋত্বিকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ থেকে নাটক নয়। ব্রাত্যর কথায়, ‘‘অন্য রাজ্যে হলেও, বাংলা নাট্য মঞ্চে সরাসরি বাংলা চলচ্চিত্র থেকে নাটক হয়নি। এটা একটা দৃষ্টান্ত হবে।’’ কিন্তু এই নাটকের নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের মতে, ‘‘নাটকের মূল চরিত্র নীতা। ঝরে যাওয়া, পচে যাওয়া জীবনে সে যে বাঁচার লড়াই করেছিল, তা নিয়ে ঋত্বিক বানিয়েছিলেন কালজয়ী ছবি। নাটকের মধ্যে দিয়ে আমরা সেই চলচ্চিত্রকারের উদ্দেশে কুর্নিশ জানিয়েছি।’’ পার্থ অবশ্য স্বীকার করেছেন, এখানে নীতার বাঁচার লড়াইয়ের সঙ্গে তাঁদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সংগ্রামের মিল খুঁজে পেয়েছেন তিনি। পার্থবাবু বলেন, ‘‘আসলে নীতা এবং আমাদের নেত্রী দু’জনের লড়াইয়ের জায়গাটা আলাদা হলেও, দু’জনেই সাধারণ বাঙালি মেয়ে। আমাদের মনে হয়েছে, নীতার সংগ্রাম মঞ্চে দেখতে দেখতে দিদির সংগ্রামের কথাও দর্শকদের মনে ঘা মারবেই।’’

এমনকী, পার্থবাবুদের মনে এমন প্রশ্নও এসেছে, সেই সময়ে পূর্ববঙ্গ থেকে ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের এ বাংলায় থিতু হতে অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছিল। কিন্তু এখন হলে কি তা হত? নীতার যক্ষ্মা হয়েছিল। তার ফুটবলার ছোট ভাই মন্টুকে দুর্ঘটনায় একটা পা হারাতে হয়েছিল। ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে আলাপচারিতায় পার্থবাবুরা এমনও বলেছেন, এখন মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালে বিনা পয়সায় চিকিৎসা, ‘ফেয়ার প্রাইস শপে’ সস্তায় ওষুধের ব্যবস্থা করেছেন। সেই সময়ে এমন হলে নীতাকে কি অকালে ঝরে যেতে হত? এ সব প্রশ্ন মানুষের মনে আসবেই। আর তার ফলে ভোটের প্রচারে তাঁদের সুবিধে হবে।

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং সিপিএমের উদ্বাস্তু আন্দোলনের নেতা কান্তি বিশ্বাস অবশ্য মনে করেন, বাস্তব পরিস্থিতি এত সহজ নয়। তাঁর কথায়, ‘‘ব্রাত্যবাবুরা ‘মেঘে ঢাকা তারা’ নিয়ে নাটক করতেই পারেন! কিন্তু ওঁদের তৃণমূলের সরকারের আমলে উদ্বাস্তুদের উন্নয়ন ও পুর্নবাসনের কাজ কিছুই হয়নি। সেটা আবার নতুন করে মানুষের মনে পড়বে।’’ তাঁর দাবি, বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ৬২ লক্ষ উদ্বাস্তু পরিবারকে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছিল। আর এখন ১৭০০ কলোনির উদ্বাস্তু পরিবার পাট্টা না পেয়ে সমস্যায় পড়েছেন। তবে কান্তিবাবুর অভিযোগ মানতে নারাজ রাজ্যের বর্তমান ত্রাণ ও পুর্নবাসন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বাম সরকারের আমলে অন্যায় ও বেআইনি ভাবে জমির পাট্টা দেওয়া হয়েছে। যাদের পাট্টা পাওয়ার কথা নয়, তাদেরও দেওয়া হয়েছে।’’ উল্টে তাঁর দাবি, মমতা-সরকারের আমলে আইনমাফিক পাট্টা দেওয়া হচ্ছে। গত ৮ মাসেই তাঁরা প্রায় ১০ হাজার পরিবারকে পাট্টা দিয়েছেন। তবে এই পাট্টা দেওয়াকে কেন্দ্র করেই কয়েক দিন আগে সাবিত্রীদেবীর সঙ্গে মালদহ জেলারই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীর কাজিয়া প্রকাশ্যে এসেছিল।

ফলে, ভোটের আগে ব্রাত্যদের ‘মেঘে ঢাকা তারা’ রাজনীতি সচেতন দর্শকের মনে কোন স্মৃতি উস্কে দেবে, তা অনুমান সাপেক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন