কালিম্পঙে মৃত্যু সিভিক পুলিশের

পাহাড়ে পরের পর বিস্ফোরণ বাড়াল দ্বন্দ্ব

এমনিতেই টানা ৬৮ দিন বন্‌ধে পাহাড়বাসী বিধ্বস্ত। তার উপরে এমন নাশকতার ঘটনায় তাঁদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। তাই শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছে নবান্ন।

Advertisement

কিশোর সাহা ও প্রতিভা গিরি

দার্জিলিং ও শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৭ ০৪:০৫
Share:

দার্জিলিং এবং কালিম্পং-এ পর পর রহস্যজনক বিস্ফোরণ ঘটেছে।

ফের আগুন জ্বলছে পাহাড়ে।

Advertisement

শুক্রবার রাতে দার্জিলিঙের চকবাজার লাগোয়া পুরনো সুপার মার্কেট এলাকায় জোরদার বিস্ফোরণ হয়। তাতে কেউ হতাহত না হলেও শনিবার রাতে কালিম্পং থানার সামনের রাস্তায় হ্যান্ড গ্রেনেড হামলায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন এক আধা সেনা জওয়ান ও এক পুলিশ। পরে সরাসরি থানা লক্ষ করে হ্যান্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে বলেও খবর। শোনা গিয়েছে গুলি চালানোর শব্দও। সেই গুলি পুলিশ চালিয়েছে, না অন্য কেউ, তা স্পষ্ট নয়। শনিবারই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে কালিম্পঙের বনবাংলো। বিস্ফোরণও হয়েছে দার্জিলিঙের বাদামতামের কাছে।

আরও পড়ুন: বৈঠক হবে তো, সংশয়ে পাহাড়

Advertisement

তদন্তে নেমে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের প্রাথমিক সন্দেহ, আলোচনাপন্থীদের রুখতে সরকারের সঙ্গে বড় মাপের সংঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে একটি কট্টরপন্থী গোষ্ঠী। তারাই পাহাড়ে শক্তিশালী ‘ল্যান্ডমাইন’ বানানোর মহড়া দিতে ঘটিয়েছে এই মাঝরাতের বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থল থেকে জিলেটিন স্টিক, ডিটোনেটর, ব্যাটারি উদ্ধার করার পরে এই সন্দেহ জোরালো হয়েছে।

এমনিতেই টানা ৬৮ দিন বন্‌ধে পাহাড়বাসী বিধ্বস্ত। তার উপরে এমন নাশকতার ঘটনায় তাঁদের রাতের ঘুম উবে গিয়েছে। তাই শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরও কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করছে নবান্ন।

শুক্রবারের বিস্ফোরণের পরে পুলিশ-প্রশাসনের সন্দেহ মূলত বিমল গুরুঙ্গ ও তাঁর একান্ত ঘনিষ্ঠ দুই কট্টরপন্থী সতীর্থ যুব মোর্চা সভাপতি প্রকাশ গুরুঙ্গ ও প্রবীণ সুব্বাকে। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদী নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। প্রবীণ আবার মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলাতেও অভিযুক্ত। পুলিশ এই তিন জনের বিরুদ্ধে ইউএপিএ প্রয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু করেছে।

মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের অবশ্য বক্তব্য, এর পিছনে অন্য কোনও হাত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে লেখা এক চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, মোর্চা নেতাদের ফাঁদে ফেলার এই ষড়যন্ত্রে রাজ্যেরও ভূমিকা রয়েছে। তাঁর দাবি, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের অধীনে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হোক। সামিল করা হোক এনআইএ-কে। কারণ, মাঝরাতে ফাঁকা জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানোর আড়ালে গভীর কোনও উদ্দেশ্য, ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।’’ গুরুঙ্গের অভিযোগ, ‘‘যারা গোর্খ্যাল্যান্ড চায় না, তারাই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।’’

পাহাড়ের প্রবীণরা বলছেন, ১৯৮৬ সাল থেকে টানা দু’বছর পাহাড়ে সুবাস ঘিসিঙ্গের আন্দোলন চলাকালীন একাধিকবার ল্যান্ডমাইন ব্যবহার হয়েছে। কার্শিয়াঙে তৎকালীন এএসপি রাজ কানোজিয়ার অফিসে গ্রেনেড হামলা হয়। ডিআইজি আর কে হান্ডার গাড়িতে গ্রেনেড ও বোমা ছোড়া হয়। তাতে জখম হয়েছিলেন ডিআইজি। তখনও ঘিসিঙ্গ দাবি করেছিলেন, হিংসার সঙ্গে তাঁদের সংশ্রব নেই। আড়াই দশক পরে পাহাড়ে সেই ঘিসিঙ্গের গাড়িতেই জঙ্গি হামলা হয়। সেই সময়ে ঘিসিঙ্গকে মানতে হয়, পাহাড়ে গোপনে উত্তর-পূর্ব ভারত-সহ নানা এলাকার জঙ্গি আনাগোনা রয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটেই অতি সতর্ক পুলিশ-প্রশাসন। কারণ, পুলিশের উপরে হামলায় যুক্ত সন্দেহে ইতিমধ্যেই নেপালের এক মাওবাদী ধরা পড়েছেন। পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, মাওবাদী এলাকায় যেমন হয়, এই বিস্ফোরণের সঙ্গে তার খুব মিল আছে। পুলিশের সন্দেহ, রাতের বিস্ফোরণ স্রেফ মহড়া দেওয়ার জন্যও হয়ে থাকতে পারে। আবার কোনও টহলদারি ভ্যানকে নিশানা করারও চেষ্টা হতে পারে। তবে সময় না মেলায় বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। দার্জিলিঙে নিযুক্ত আইজি পদমর্যাদার এক কর্তা বলেন, ‘‘যে বিস্ফোরণ হয়েছে, তার সঙ্গে ল্যান্ডমাইনের খুব একটা ফারাক নেই। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটও মজুত রয়েছে বলে নানা সূত্রে খবর মিলছে। ধারাবাহিক নাশকতার ছক থাকলে তবেই এ সব সামগ্রী মজুত করা হয়। এতে যুক্ত কাউকে ছাড়া হবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন