কলেজে ঢুকে দাদাগিরি চলবে না, হুঁশিয়ারি পার্থর

উচ্চশিক্ষা দফতর মন্ত্রীকে এ-ও জানিয়েছে, বিষয় পাল্টে পাল্টে যাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দীর্ঘদিন থেকে যান, ছাত্র ভর্তিতে অনিয়ম এবং বিভিন্ন গোলমালে মূলত তাঁদেরই প্ররোচনা থাকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০১৭ ০৩:৩১
Share:

বৈঠক: শিক্ষামন্ত্রী ও সুব্রত বক্সীর সঙ্গে জয়া দত্ত। —নিজস্ব চিত্র।

কলেজে ছাত্র ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগের বিরাম নেই। এই আবহে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানালেন, একই পড়ুয়া বিষয় পাল্টে একাধিক বার কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন না।

Advertisement

রবিবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে এই বার্তা দেন পার্থবাবু। অভিযোগ উঠেছে, পড়ুয়াদের প্রথমে পাস কোর্সে বা কম চাহিদার অনার্সে ভর্তি করানোর পরে টাকার বিনিময়ে পছন্দসই অনার্স পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাতে নাম জড়িয়েছে টিএমসিপি-র। উচ্চশিক্ষা দফতর মন্ত্রীকে এ-ও জানিয়েছে, বিষয় পাল্টে পাল্টে যাঁরা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দীর্ঘদিন থেকে যান, ছাত্র ভর্তিতে অনিয়ম এবং বিভিন্ন গোলমালে মূলত তাঁদেরই প্ররোচনা থাকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতৃত্বের অধিকাংশই এই কৌশলে দীর্ঘদিন একই ক্যাম্পাসে পড়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। পার্থবাবু তাঁদেরও বার্তা দিলেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও অনেকের বক্তব্য, ইতিপূর্বে অনেক বার্তাই দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু বাস্তব ছবিটা তাতে বদলায়নি।

এ দিন মন্ত্রী বলেন, ‘‘পড়াশোনা শেষ করেও টাকা আদায়ের জন্য কলেজে ঢুকে দাদাগিরি চলবে না। দু’বছরের বেশি কেউ ছাত্র সংসদের কোনও পদে থাকতে পারবে না।’’ ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি নিয়ে এ দিন টিএমসিপি নেতাদের তৃণমূল ভবনে ডেকেছিলেন পার্থবাবু। সেখানেই শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ছাত্রদের জন্য কাজ করাই সংসদের কাজ। নিজেদের পকেট ভরানো নয়।’’ কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত গোলমালে অভিযুক্ত টিএমসিপি-র কলকাতা জেলার কার্যকরী সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আশুতোষ, সুরেন্দ্রনাথ এবং বঙ্গবাসী কলেজ নিয়ে অনেক অভিযোগ উঠছে। আর যেন অভিযোগ না পাই।’’ টিএমসিপি-র আশুতোষ কলেজ শাখাকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করেন পার্থবাবু। তিনি নিজে ওই কলেজেরই প্রাক্তনী।

Advertisement

আরও পড়ুন:হিংসার দায় এড়াতে মোর্চা এখন মরিয়া

পার্থর দাওয়াই

• বারবার একাধিক বিষয় নিয়েরি-অ্যাডমিশন নয়

• ছাত্র সংসদে একই পদে দু’বছরের বেশি নয়

• ছাত্র সংসদের কাজ পকেট ভরানো নয়

• পাশ করার পরেও দাদাগিরি করে টাকা আদায় নয়

• ছাত্র ভর্তির ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা

• মেধার ভিত্তিতে ভর্তি না হলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল

• হেল্প ডেস্ক-এর নাম করে টাকা তোলা যাবে না

• আশুতোষ কলেজের ছাত্র সংসদকে সতর্কবার্তা

বিরোধীদের ব্যাখ্যা অন্য। এসএফআই রাজ্য সভানেত্রী মধুজা সেন রায় বলেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী কার্যত মেনে নিলেন, শিক্ষাঙ্গনে অশান্তির মূল কারিগর টিএমসিপি।’’ ডিএসও-র রাজ্য সম্পাদক সৌরভ ঘোষের কথায়, ‘‘এই নির্দেশ মানতে গেলে টিএমসিপি সংগঠনটাই উঠে যাবে।’’

কলেজে ভর্তিতে দুর্নীতি বন্ধে আগেও নানা ঘোষণা করেছিলেন পার্থবাবু। টিএমসিপি-কে সতর্কও করেছিলেন। পরিস্থিতি বদলায়নি। এ দিনের ঘোষণার পরেও অনেকে তাই সংশয়ী। কবে থেকে এই সব সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে, কারা করবে, নজরদারির দায়িত্ব কে নেবে— উঠেছে সেই প্রশ্নও। শিক্ষামন্ত্রী মুখ খোলেননি। তবে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে কি না তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে টিএমসিপি নেতৃত্বকে। টিএমসিপি দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছেন কি না, নজর রাখবে দল। টিএমসিপি-র সভানেত্রী জয়া দত্ত বলেন, ‘‘আমরা লক্ষ্য রাখব, মন্ত্রীর নির্দেশ যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হয়।’’

অনেকেরই যদিও আক্ষেপ, কলেজে ভর্তিতে স্বচ্ছতা আনার চাবিকাঠি যে কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা, তা নিয়ে সেই নীরবই রইলেন শিক্ষামন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন