কম্পিউটারে পরীক্ষা দিচ্ছে পড়ুয়ারা। — নিজস্ব চিত্র।
নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা যখন দুর্যোগে পিছিয়ে যাচ্ছে, তখন সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীরা কিন্তু পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। কম্পিউটারের মাধ্যমে পরীক্ষা। মাদ্রাসায় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রকল্পের নজরদারি করার দায়িত্বে থাকা একটি সংস্থার কর্ণধার অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়কে উপেক্ষা করে কয়েক হাজার পড়ুয়া অনলাইনে পরীক্ষা দিয়েছে।’’ প্রাথমিক পাঠের পরীক্ষায় ভাল ফল-করা পড়ুয়াদের সংশ্লিষ্ট দফতর আরও প্রশিক্ষণ দেবে বলে জানা গিয়েছে।
গত আট মাসে রাজ্যের ২৪৪টি মাদ্রাসায় চালু করা গিয়েছে কম্পিউটার ক্লাস। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা এই প্রকল্পের আওতায় নিখরচায় কম্পিউটার শিক্ষার সুযোগ পাবে। ইতিমধ্যে ৭২ হাজার পড়ুয়ার নাম নথিভুক্ত হয়ে গিয়েছে। আরও ৩৭০টি মাদ্রাসার ৯৮ হাজার পড়ুয়ার নাম নথিভুক্ত করার কাজ চলছে।
রাজ্যের সংখ্যালঘু ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিষয়ক দফতর সূত্রে খবর, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ উদ্যোগে এই কম্পিউটার শিক্ষা প্রকল্প চালু হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ দিচ্ছে কেন্দ্র, বাকিটা রাজ্য। গত বছর ৭ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা বোর্ডের সচিব নুরুস সালাম মাদ্রাসাগুলিকে প্রকল্প রূপায়ণের নির্দেশ দেন। প্রথম পর্যায়ে মোট ৩৯ ঘণ্টা কম্পিউটারের প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হবে। তাতে যারা ভাল ফল করবে, তাদের আরও প্রশিক্ষণের সুযোগ মিলবে। ৩০ ঘণ্টার সেই প্রশিক্ষণে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ মিলবে। কেন্দ্রেরা অধীন একটি সংস্থা প্রকল্পের নজরদারি করছে।
কম্পিউটার মিলছে কোথা থেকে? মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলির সাহায্য নিচ্ছে। দফতরের এক কর্তা জানান, মাদ্রাসার নিকটবর্তী তথ্যমিত্র কেন্দ্রের কম্পিউটারগুলিকে সাময়িক ভাবে মাদ্রাসায় নিয়ে গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের টাকায় কিছু মাদ্রাসা কম্পিউটার কিনে নিচ্ছে। প্রশিক্ষণে তা ব্যবহার করা হচ্ছে।
নদিয়ার চাপ়ড়ার বেলতলা হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আকবর আলি শেখ বলেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসার নিজস্ব ছ’টি কম্পিউটার রয়েছে। মাদ্রাসার ৫০০ পড়ুয়া এই প্রকল্পে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।’’ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ৩৬ হাজার ৮৯৬ জন পড়ুয়ার প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে। তাদের অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার প্রক্রিয়াও চলছে। নদিয়ার একটি হাই মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক আবুল হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাদের মাদ্রাসার বেশির ভাগ পড়ুয়ারাই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। তারা বাড়িতে কম্পিউটারের পাঠ নেওয়ার সুযোগ পায় না। মাদ্রাসায় এই সুযোগ মেলায় তারা উপকৃত হবে।’’ নদিয়ার পলাশি হাই মাদ্রাসায় নবম শ্রেণির ছাত্র হাসান শেখের বক্তব্য, ‘‘মাদ্রাসায় বাইরের শিক্ষকরা এসে আমাদের কম্পিউটার শেখাচ্ছেন। এখন আমরা কম্পিউটারে লিখতে ও হিসেব করতে পারি। আগে এ সব ভাবতেই পারতাম না।’’