তাপসের ইস্তফাই দাবি বিরোধীদের

দিদির কাছে ক্ষমা চেয়ে হয়তো পার পেয়ে গেলেন দাদা। কিন্তু বিরোধীরা মুখিয়ে আছেন তাঁর সাংসদ পদটিকে শূলে চড়ানোর জন্য। সংসদে এমনিতেই শতাব্দী-বিনা বন্ধু নেই তাপস পালের। জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থাও অনেকটা সে রকম। বন্ধুহীন। সেই তৃণমূলের এক তারকা-সাংসদের কুকথায় এ বার তেড়েফুঁড়ে উঠেছে সব রাজনৈতিক দল। দল নির্বিশেষে দাবি উঠেছে, মহিলাদের প্রতি যাঁর এই মনোভাব, তাঁর জনপ্রতিনিধি হয়ে থাকার কোনও যোগ্যতাই নেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৪ ০৩:২২
Share:

তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে ডেরেক ও’ব্রায়ান। ছবি: প্রদীপ আদক

দিদির কাছে ক্ষমা চেয়ে হয়তো পার পেয়ে গেলেন দাদা। কিন্তু বিরোধীরা মুখিয়ে আছেন তাঁর সাংসদ পদটিকে শূলে চড়ানোর জন্য।

Advertisement

সংসদে এমনিতেই শতাব্দী-বিনা বন্ধু নেই তাপস পালের। জাতীয় রাজনীতিতে তৃণমূলের অবস্থাও অনেকটা সে রকম। বন্ধুহীন। সেই তৃণমূলের এক তারকা-সাংসদের কুকথায় এ বার তেড়েফুঁড়ে উঠেছে সব রাজনৈতিক দল। দল নির্বিশেষে দাবি উঠেছে, মহিলাদের প্রতি যাঁর এই মনোভাব, তাঁর জনপ্রতিনিধি হয়ে থাকার কোনও যোগ্যতাই নেই। বাম-বিজেপি-কংগ্রেস সকলেরই দাবি, স্পিকার নিজে উদ্যোগী হয়ে তাপস পালের সাংসদ পদটি বাতিল করুন। একই দাবি জানিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। যদিও স্পিকারের দফতর সূত্রে খবর, এক সপ্তাহ পরেই সংসদ খুলবে। শুরু হবে বাজেট অধিবেশন। ধরে নেওয়া যায়, তখন বেশ কিছু দল তাপসের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনবে। বিষয়টি তখন স্বাধিকার ভঙ্গ কমিটির কাছে পাঠানো হবে। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ করবেন স্পিকার।

অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিধান দেওয়ার এই প্রক্রিয়াটি যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। তাই তৃণমূলের উপর লাগাতার চাপ বজায় রাখতে আজ তাপসের সেই ফুটেজের সিডিটি স্পিকারের কাছে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। একই সঙ্গে আজ বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত চাওলা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে অবিলম্বে তাপসকে দল থেকে বহিষ্কার ও গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, “এ ধরনের মানসিকতা যাঁর, তাঁর কোনও রাজনৈতিক দলেই জায়গা হতে পারে না।” একই বক্তব্য কংগ্রেসের। মহিলা কংগ্রেসের সভাপতি শোভা ওঝা বলেন, “ওই সাংসদের বিনা বাক্যব্যয়ে ইস্তফা দেওয়া উচিত। আর রাজ্য সরকারের উচিত তাঁকে গ্রেফতার করা।”

Advertisement

তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগে সরব বাম শিবির। এখন তাপসের ওই বক্তব্যের সূত্র ধরে গত তিন বছর ধরে রাজ্যে বাম সমর্থকেরা কী ভাবে হুমকির রাজনীতির শিকার হচ্ছেন, সেটাই তুলে ধরতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের কথায়, “রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী দলগুলিকে এ ভাবে আতঙ্কিত করে রাখার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। এই ঘটনা তারই প্রমাণ।” লোকসভার স্পিকারকে নিজে থেকে তাপস পালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন সেলিম। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “কী ভাবে ওই সাংসদের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনা যায়, দেখা হচ্ছে।”

উস্কানিমূলক বক্তব্য পেশ করা, ভয় দেখানো এবং মহিলাদের প্রতি অশালীন মন্তব্য করায় তাপসবাবুকে কেন গ্রেফতার করা হল না সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্য জুড়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন বিরোধী দলের সদস্যেরা। কংগ্রেস এবং বিজেপির তরফে কলকাতার শ্যামপুকুর থানা, নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানা এবং বিধানননগর উত্তর থানায় গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূলের যে সব নেতা আগেও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন তাঁদের প্রসঙ্গও ফের তুলতে চাইছে সিপিএম। বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, “এটা তো এক জনের ব্যাপার নয়। আগে যাঁরা এমন কথা বলেছেন, তাঁরা কি ক্ষমা চেয়েছেন? আর এতে তো ব্যাপারটা থামছে না! আজও বাঁকুড়া থেকে আরও এক জনের (অরূপ চক্রবর্তী) খবর এসেছে!”

ফরওয়ার্ড ব্লকের জাতীয় সম্পাদক জি দেবরাজন দাবি করেছেন, তাপস যে ধরনের মন্তব্য করেছেন, তার জন্য তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত। কারণ, তাঁর নির্বাচকদের আস্থার মর্যাদাও সাংসদ রাখেননি। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়ার বক্তব্য, “ক্ষমা চেয়েছেন ঠিকই। তবে তাপস নানা অশালীন কথা আগেও বলেছেন। এ বার ক্ষমা করা উচিত কি না, মানুষই ঠিক করবেন!” তাপস পালের বিষোদগার নিয়ে এ দিন বিধানসভায় আলোচনা চেয়ে কংগ্রেসের আনা মুলতবি প্রস্তাব খারিজ করে দেন স্পিকার। প্রতিবাদে কংগ্রেস বিধায়কেরা ওয়াক আউট করেন। মহিলা কংগ্রেসের সদস্যরা বিধান ভবনের সামনে তাপসবাবুর কুশপুতুল দাহ করেন।

তাপসবাবুর মন্তব্যের প্রতিবাদে তিন দিন ধরে বামফ্রন্ট রাজ্যের সর্বত্র ধিক্কার মিছিল করবে বলে জানান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু। সব শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে প্রতিবাদে যোগ দিতে বলেছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন