শিলিগুড়িতে রামধনু জোট, উধাও বর্গি

ভোটের দিন কলকাতা-মডেলে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গেও ‘বর্গি হানা’র আশঙ্কা করেছিল বিরোধী শিবির। আর শাসক দলের আশঙ্কা ছিল, বাম-কংগ্রেস-বিজেপি ‘রামধনু জোট’ করে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেষ অবধি, শনিবার, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ দুই শহরের পুরভোটে শাসক দলের সঙ্গে সমানে-সমানে পাল্লা দিল বিরোধীরা। অনেক জায়গায় এই ‘জোট’ পুলিশকে একরকম বাধ্য করেছে সন্দেহভাজন বহিরাগতদের তাড়িয়ে দিতে। তবে তৃণমূল শিবিরের দাবি, ‘রামধনু’ জোটের ধাক্কা সামলে দুই শহরে বোর্ড গড়বে তারাই।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩০
Share:

শেষ হাসি হাসবেন কি? শনিবার ভোট তদারকির পরে অশোক ভট্টাচার্য। বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

ভোটের দিন কলকাতা-মডেলে শিলিগুড়ি সহ উত্তরবঙ্গেও ‘বর্গি হানা’র আশঙ্কা করেছিল বিরোধী শিবির। আর শাসক দলের আশঙ্কা ছিল, বাম-কংগ্রেস-বিজেপি ‘রামধনু জোট’ করে প্রত্যাঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। শেষ অবধি, শনিবার, শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির মতো গুরুত্বপূর্ণ দুই শহরের পুরভোটে শাসক দলের সঙ্গে সমানে-সমানে পাল্লা দিল বিরোধীরা। অনেক জায়গায় এই ‘জোট’ পুলিশকে একরকম বাধ্য করেছে সন্দেহভাজন বহিরাগতদের তাড়িয়ে দিতে। তবে তৃণমূল শিবিরের দাবি, ‘রামধনু’ জোটের ধাক্কা সামলে দুই শহরে বোর্ড গড়বে তারাই।

Advertisement

কলকাতা পুরভোটের পর থেকেই শিলিগুড়ি পুরভোট নিয়ে ক্রমশ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছিল। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘শিলিগুড়ি আমার চাই’ বলে বার্তা পাঠিয়েছিলেন বলে তৃণমূল শিবিরের দাবি। তাতেই তাতছিল শহর। বাড়ছিল ভোটের মুখে শহর জুড়ে অচেনা মুখের আনাগোনাও। পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় বাড়ছিল ক্ষোভ। অথচ সে সব আশঙ্কা প্রায় উড়িয়ে অনেকটাই যেন নিস্তরঙ্গ হল শিলিগুড়ি সহ উত্তরের পুরভোট। ভূমিকম্পের সময়টুকু ছেড়ে দিলে নির্বিঘ্নেই মিটল উত্তরের ১২ পুরসভা ভোট পর্ব। তাতেই প্রশ্ন উঠেছে, রাতারাতি কোন জাদুতে উবে গেল আশঙ্কার সব মেঘ? কী ভাবেই বা শাসক দলের সঙ্গে পাল্লা দিল বাম-কংগ্রেস-বিজেপি শিবির?

বাম-কংগ্রেস-বিজেপি সূত্রের খবর, শাসক দলের ‘বহিরাগত’দের রুখতে ভোটের ২০ ঘণ্টা আগেই রাজ্যের বিরোধী শিবিরের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির কয়েক জন শীর্ষ নেতার মধ্যে কথাবার্তা শুরু হয়েছিল। দলীয় সূত্র বলছে, দফায়-দফায় কথা চালাচালির পরে তৈরি হয়ে যায় সমঝোতা সূত্রও। তা এরকম— ভোটের প্রচারে যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে। এবার যে যাঁর ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতে অলিখিত জোট করলে ক্ষতি কী! ফলে, রাতেই মধ্যেই ‘সেই বার্তা রটি গেল’ যথাস্থানে। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলেন নানা কারণে তৃণমূল ছেড়ে নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন, এমন বেশ কয়েক জন প্রার্থীও।

Advertisement


ভোটের ফাঁকে। শিলিগুড়ি গার্লস স্কুলের সামনে গৌতম দেব। ছবি: রাজকুমার মোদক।

সেই ‘জোটে’র সুবাদেই শনিবার শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ির পুরভোটে তৃণমূলকে অনেক জায়গায় কোণঠাসা করা গিয়েছে ভেবে উচ্ছ্বসিত বিরোধী শিবির। এমনকী, শিলিগুড়িতে বোর্ড দখলের স্বপ্ন প্রায় হাতের মুঠোয় বলে ভাবছেন বাম নেতা অশোক ভট্টাচার্যও। তা বলে কংগ্রেস-বিজেপি-নির্দলের সঙ্গে জোট? অশোকবাবুর যুক্তি, ‘‘এটা কোনও জোট নয়। কলকাতার ভোটের পর মানুষকে বুথে গিয়ে ভোট দেওয়ার অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লড়াই ছিল। সে জন্য জোট বাধলে অন্যায় হয় না।’’

তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলার জন্য গোড়া থেকেই পৃথক ভাবে নানা চেষ্টা করে চলেছেন দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার ও বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়াও। শঙ্করবাবু বলছেন, ‘‘বিরোধীরা একজোট হলে শাসক দলকে কোণঠাসা করাটা কতটা সহজ সেটা সকলেই জানেন। আগামী দিনে তা আরও স্পষ্ট হবে।’’

বিরোধীদের এই ‘জোট’ যে তাঁদের বেশ কিছু আসনে কোণঠাসা করে দিয়েছে, তা একান্তে মেনে নিয়েছেন অনেক তৃণমূল নেতাও। ঘটনাক্রমও সে কথা আরও জোরদার করছে। যেমন, শিলিগুড়িতে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চোপড়া থেকে বিহারের নম্বরের গাড়িতে চেপে ঘোরাঘুরি করা ১২ জনকে প্রায় তাড়া করে হটানো হয়। বাম-কংগ্রেস-নির্দল শিবির মিলে পুলিশকে বাধ্য করে তাঁদের ধরতে। ওই ওয়ার্ডে সিপিএমের প্রার্থী খোদ অশোকবাবুই। জলপাইগুড়ি-শিলিগুড়ির অন্তত ২০টি ওয়ার্ডে বিরোধী শিবিরের সমবেত প্রতিরোধের কাবু হয়ে পিছু হটেছে শাসক দল। পুলিশকে দেখা গিয়েছে, শাসক দলের ‘বহিরাগতদের’ সরিয়ে নিয়ে যেতে। সরকারি ভাবে ‘বাইরের লোক
কী কাজে এসেছিলেন’ বলে দায় সেরেছে পুলিশ।

তবে তৃণমূলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেবের দাবি, ‘‘বহু জায়গায় কংগ্রেস-সিপিএম ও বিজেপি-সহ বিরোধীরা একযোগে অশান্তি, জবরদখল, রিগিং করার চেষ্টা করেছে। তবে বাসিন্দারা সেই চেষ্টা রুখে দিয়েছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘দলের ফল ভাল হবে।’’ গৌতমবাবুর সংযোজন, ‘‘শিলিগুড়িতে অন্তত ৮টি ওয়ার্ডে বিরোধীরা একজোট হয়ে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছে।’’

দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ, ‘‘ভোট লুঠ করার যে পরিকল্পনা তৃণমূল করেছিল, তা সফল হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন