তখনও চিঠি চালাচালি চলছে তুষারকান্তি ভট্টাচার্যকে নিয়ে। তার মধ্যেই দল ছেড়ে দিলেন রবিউল আলম চৌধুরী। তাঁকে নিয়ে আবার ফাইলপত্র খুলতে না খুলতেই বিদায় নিলেন মানস ভুঁইয়া। তার জন্য চিঠির বয়ান ছাপানো হচ্ছে। সেটা শেষ হওয়ার আগেই শাসক দলের পতাকা হাতে নিয়ে নিলেন কানহাইয়ালাল অগ্রবাল এবং হাসানুজ্জামান হাসান!
দলবদলের ধাক্কা এবং তার জন্য কারণ দর্শানোর চিঠি তৈরি করতে গিয়েই স্বাভাবিক কাজ এখন মাথায় উঠেছে বিধানসভায় বিরোধী দলের সচিবালয়ে! দল ছেড়ে যাওয়া বিধায়কদের প্রথমে চিঠি দিতে হচ্ছে। উত্তর না এলে ‘রিমাইন্ডার’ দিয়ে আবার চিঠি। বিধায়ক জবাব দিলে তার বিষয়বস্তুর নিরিখে হয় তাঁর কাছে ফের কিছু কৈফিয়ৎ চাওয়া। নয়তো স্পিকারের কাছে আবেদন পাঠানো। শুধু চিঠি চালাচালিই নয়। নতুন দলে যোগদানের সময়ে কোন বিধায়ক কী বলছেন, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ সংবাদমাধ্যম থেকে সংগ্রহ করে তার ক্লিপিংস সযত্ন পাঠাতে হচ্ছে স্পিকারের দফতরে। সেই সঙ্গে আছে আদালতে মামলার প্রস্তুতি। অন্য কাজ আর হবে কখন?
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সচিবালয়েই দলবদলের অভিঘাত বেশি। বামেদের দিকে গাজোলের দীপালি বিশ্বাস ছাড়া কেউ এখনও দল ছাড়েননি। চিঠিচাপাটি তাই তাঁকে নিয়েই সীমিত। কিন্তু বামেদের পরিষদীয় ঘরে আবার সংস্কারের কাজ চলছে বেশ কিছু দিন। কর্মী-আধিকারিকদের বসার জায়গারই ঠিক নেই! অগত্যা কাজ বলতে প্রায় যেটা না করলেই নয়। পুজোর ছুটি পড়া পর্যন্ত বিধানসভায় দুই বিরোধী দলের সঙ্গে সংযুক্ত সচিবালয় তাই রীতিমতো জর্জরিতই ছিল!
কংগ্রেসের সচিবালয় থেকে বিধায়ক এবং স্পিকারের কাছে গত এক মাসেই চিঠি গিয়েছে অন্তত এক ডজন। তা-ও সর্বশেষ দলত্যাগী দুই বিধায়কের জন্য কাগজ তৈরি করতে করতেই ছুটি পড়ে গিয়েছে! বিরোধী দলনেতার সচিব (ইএ) প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সকালে অফিসে এসে থেকে সন্ধ্যায় বেরোনো পর্যন্ত এই করতেই সময় চলে যাচ্ছে! অন্য কিছু নিয়ে ভাবারই সময় নেই।’’ বিধায়কদের জবাব ফাইল করে রাখা হচ্ছে তো বটেই। বিশেষ পরিস্থিতিতে এবং আসন্ন মামলার কথা মাথায় রেখে বিধায়কদের পাঠানোর আগে বিরোধী দলনেতার চিঠির বয়ান প়ড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে এক বিশিষ্ট আইনজীবীকে দিয়ে, কলকাতা হাইকোর্ট সংলগ্ন তাঁর দফতরে গিয়ে। সেটাও বাড়তি কাজ!
বিধানসভায় কোন বিষয়ে কী আলোচনা হবে, কী বলতে হবে, কোন ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে বা বিরোধী দলনেতার সঙ্গে কারা দেখা করতে আসবেন, কোথায় তাঁকে যেতে হবে— এ সব গুছিয়ে রাখাই সচিবালয়ের নৈমিত্তিক কাজ। এখন সে সবই প্রায় শিকেয়। কংগ্রেসের এক বিধায়কের মশকরা, ‘‘তৃণমূল আমাদের দল তো ভাঙছেই। বিধানসভায় আমাদের অফিসটাও নিয়ে নিয়েছে!’’