আজ থেকে ডেঙ্গি বুলেটিন
Dengue

জ্বর সারলেও হাসপাতালে রাখার নির্দেশ

স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা নিজে ইতিমধ্যেই বারাসত হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন। হাবরা, বরানগর, দমদম। সল্টলেক, শিলিগুড়ি সর্বত্র স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ দল যাচ্ছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪৫
Share:

ভিড়: মালদহ মেডিক্যালে রোগীদের শয্যায় পরিজনেরা। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

রাজ্যে ডেঙ্গি পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয় বলে বৃহস্পতিবারই দাবি করেছে রাজ্য সরকার। বেসরকারি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিগুলিকে কাঠগড়ায় তুলে বলা হয়েছে, চটজলদি রিপোর্ট দিয়ে তারা বিভ্রান্ত ছ়ড়াচ্ছে। প্রকাশ্যে এ কথা বললেও ডেঙ্গি নিয়ে স্বাস্থ্য ভবন যে নড়েচড়ে বসেছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে শুক্রবার। জানা গিয়েছে, স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা নিজে ইতিমধ্যেই বারাসত হাসপাতাল ঘুরে এসেছেন। হাবরা, বরানগর, দমদম। সল্টলেক, শিলিগুড়ি সর্বত্র স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ দল যাচ্ছে। কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে জ্বরের প্রকোপ যে অস্বাভাবিক, একান্ত আলোচনায় তা মেনে নিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

Advertisement

তবে এ দিনও প্রকাশ্যে তাঁরা দাবি করেছেন, সংবাদমাধ্যম পরিস্থিতি যতটা খারাপ বলে তুলে ধরছে, বাস্তবে ততটা নয়। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘সরকার কোনও অবস্থাতেই অস্বীকারের মনোবৃত্তি দেখাচ্ছে না। কিন্তু পরিস্থিতি যে ভাবে দেখানো হচ্ছে তা ঠিক নয়। যাবতীয় ধোঁয়াশা কাটাতে শনিবার থেকে রোজ স্বাস্থ্য ভবন রাজ্যের ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা, নমুনা পরীক্ষা, গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে।’’

স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে এক জনেরও ডেঙ্গিতে ম়ৃত্যু হয়নি। উত্তর ২৪ পরগনার জ্বর কবলিত এলাকায় বিভিন্ন হাসপাতালে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন করে ৬৩৪ জন ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৩৮ জনের জ্বর ছিল। ৫২ জনের ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। এ ছাড়া, বরানগর এলাকা থেকে ১১ জন নতুন করে জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। সল্টলেক, দমদমের পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভাল। শিলিগুড়িতে ১৮ জন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল, নতুন করে আরও এক জন জ্বর নিয়ে ভর্তি হয়েছেন।

Advertisement

শুক্রবার দিনভর পর্যালোচনার পর স্বাস্থ্যকর্তারা দেখেছেন, এ বারে ডেঙ্গির নতুন ভাইরাসই গোলমাল পাকাচ্ছে বেশি। ডেন-১ এবং ডেন-৩ জাতীয় ডেঙ্গি ভাইরাসে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁদের ভোগান্তি কম। এই দুই ভাইরাসের কবলে পড়ে জ্বর হচ্ছে, প্লেটলেটস কমছে ঠিকই, কিন্তু চিকিৎসার পর আক্রান্তরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরছেন। কিন্তু গোলমাল দেখা যাচ্ছে ডেন-২ এবং ডেন-৪ ভাইরাস নিয়ে। রাজ্যে যা মৃত্যু হয়েছে, তার অধিকাংশই এই দুই ভাইরাসের কবলে পড়ে। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের জ্বর সেরে যাচ্ছে। তারা বাড়ি ফিরে যাওয়ার পর প্রাণঘাতী হয়ে ফিরছে ডেঙ্গির থাবা।

স্বাস্থ্য ভবন সে কারণে রাজ্যের সমস্ত হাসপাতালে নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দিয়েছে, ডেঙ্গির উপসর্গ বা জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া রোগীদের জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পরও ৪৮ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক ভাবে হাসপাতালে রাখতে হবে। পাশাপাশি জ্বর হলে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো হবে। এত দিন চার-পাঁচ দিন দেখার পর ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো হতো। স্বাস্থ্য ভবন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সরকারি হাসপাতালে এখন থেকে দু’তিন দিনের জ্বরেও ডেঙ্গি পরীক্ষা করানো হবে।

এ দিন স্বাস্থ্য কর্তারা প্লেটলেটসের জোগান ও চাহিদা নিয়েও পর্যালোচনা করেন। এক স্বাস্থ্যকর্তা জানাচ্ছেন, প্লেটলেটসের চাহিদার উপরই বোঝা যায় ডেঙ্গির প্রকোপ কেমন। সরকারি-বেসরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে যে তথ্য আসছে তাতে এই চাহিদা গত বারের মতোই। ফলে ডেঙ্গির প্রকোপ সাঙ্ঘাতিক, এ কথা মানতে চাইছেন না
সরকারি কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন