প্রতীকী ছবি।
রাজ্যের সব থেকে বড় সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল অথচ সেখানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য কোনও নির্দিষ্ট চিকিৎসক নেই! রাজ্যে বহু বেসরকারি হাসপাতালে মরণোত্তর অঙ্গদানের উপযোগিতা বোঝানোর জন্য থাকেন না কাউন্সেলরও! পশ্চিমবঙ্গে অঙ্গ দান ও প্রতিস্থাপনকে আরও এগিয়ে যাওয়ার জন্য শনিবার একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অব ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন’। সেখানেই উঠে এসেছে এমন নানা তথ্য।
রাজ্যের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য আন্দোলনে যুক্ত সমাজকর্মীদের অনেকেই মনে করেন, এমন পরিকাঠামোগত ত্রুটির ফলেই এ রাজ্যে অঙ্গদান ও প্রতিস্থাপন তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এসএসকেএম হাসপাতালের আইটিইউয়ের ভারপ্রাপ্ত চিকিৎসক রজত চৌধুরী সভায় জানান, ট্রান্সপ্ল্যান্ট কো-অর্ডিনেটর থাকাটা জরুরি। পাশাপাশি অঙ্গ প্রতিস্থাপনে নিউরোলজি, নিউরোসার্জারির মতো বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় বৃদ্ধিও জরুরি।
ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক সৌরেন পাঁজার মতে, যে সব হাসপাতালের আইটিইউয়ে ১০টির বেশি শয্যা রয়েছে, সেখানে পুর্ণসময়ের কাউন্সেলর প্রয়োজন। এর উপযোগিতা নিয়ে একটি ঘটনাও শুনিয়েছেন তিনি। অসমের এক তরুণী রক্তক্ষরণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং তাঁর ‘ব্রেন ডেথ’ হয়। সে সময় ওই হাসপাতালের কাউন্সেলরই বুঝিয়ে তরুণীর পরিবারকে অঙ্গদানে রাজি করান। সৌরেনবাবু বলেন, ‘‘ওই তরুণীর অঙ্গ থেকে আট জন উপকৃত হয়েছে। এমনকী তাঁর হৃৎপিণ্ড অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।’’
এই পরিকাঠামোর ত্রুটি যে রয়েছে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন এ রাজ্যের অনেক রোগী। পূর্ব কলকাতার বাসিন্দা এক যুবক জানান, তাঁর মায়ের লিভার প্রতিস্থাপন করার জন্য দীর্ঘদিন এসএসকেএম হাসপাতালে হত্যে দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।
অথচ হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নাম নথিভুক্ত করার অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিস্থাপনের জন্য লিভার মিলেছিল। অস্ত্রোপচারের পর ওই যুবকের মা এখন প্রায় সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
স্বাস্থ্য দফতরের অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিভাগের নোডাল অফিসার অদিতিকিশোর সরকার জানান, ১৮ অক্টোবর এসএসকেএম হাসপাতালে ট্রান্সপ্ল্যান্ট কো-অর্ডিনেটরের ইন্টারভিউ হয়েছে। খুব শীঘ্রই নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও ‘ট্রান্সপ্ল্যান্ট কো-অর্ডিনেটর’ নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। মরণোত্তর অঙ্গদানের ক্ষেত্রে কাউন্সেলরের গুরুত্বও মেনে নিয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সমাজকর্মীদের অনেকে এ-ও বলছেন, এখানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য কোনও আঞ্চলিক কমিটি নেই। সে দিকেও যাতে নজর দেওয়া হয় সেই দাবিও এ দিন তুলেছেন অনেকে।