ভোট করাতে মাঠের দখল নিল ‘সৈনিক’রা

দুপুর থেকেই এলাকায় চক্কর কাটছে গাড়িগুলো। ভিতরে নির্লিপ্ত মুখের জনা চার-পাঁচেক ছেলে। বয়স ২০ থেকে ২৫। জিনস আর টি-শার্ট পরা ছেলেগুলো অবশ্য কেউই এসইউভি থেকে নামছে না। তাদের নিয়ে গাড়িগুলো বিভিন্ন এলাকায় শুধু ঘুরপাক খেয়েছে দিনভর। বেলা যত গড়িয়েছে, গাড়ির সংখ্যা তত বেড়েছে। বেড়েছে অচেনা মুখের সংখ্যাও। এ ভাবেই শুক্রবার, পুরভোটের আগের দিন দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলা, বজবজ, রাজপুর-সোনারপুর ও বারুইপুর এলাকার দখল নিল বহিরাগতরা। শনিবারের পুরভোটে ওরা রাজনৈতিক দলগুলোর বড় অস্ত্র!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪০
Share:

দুপুর থেকেই এলাকায় চক্কর কাটছে গাড়িগুলো। ভিতরে নির্লিপ্ত মুখের জনা চার-পাঁচেক ছেলে। বয়স ২০ থেকে ২৫।

Advertisement

জিনস আর টি-শার্ট পরা ছেলেগুলো অবশ্য কেউই এসইউভি থেকে নামছে না। তাদের নিয়ে গাড়িগুলো বিভিন্ন এলাকায় শুধু ঘুরপাক খেয়েছে দিনভর। বেলা যত গড়িয়েছে, গাড়ির সংখ্যা তত বেড়েছে। বেড়েছে অচেনা মুখের সংখ্যাও। এ ভাবেই শুক্রবার, পুরভোটের আগের দিন দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলা, বজবজ, রাজপুর-সোনারপুর ও বারুইপুর এলাকার দখল নিল বহিরাগতরা। শনিবারের পুরভোটে ওরা রাজনৈতিক দলগুলোর বড় অস্ত্র!

দিনভর চক্কর কেটে এলাকা চেনার পরে জেলা এবং শহরতলির বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ওই ভাড়াটে সৈনিকরা সন্ধ্যা হতেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েছে বলে অভিযোগ আসতে শুরু করেছে। সেখানে গিয়ে বাছাই করা কিছু বাড়ির সামনে গাড়ি নিয়ে ঘুরে যাচ্ছে তারা। তবে কারও বাড়িতে ঢুকছে না। কথাও বলছে না কারও সঙ্গে। সে কাজটা করছে অন্যরা। অভিযোগ, স্থানীয় সিন্ডিকেট বাহিনী ও এলাকার পরিচিত ‘দাদা’রাই বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে নরমে-গরমে সতর্ক করে দিচ্ছে শনিবার ভোটকেন্দ্রের আশেপাশে না যাওয়ার জন্য। বারুইপুরের এক তৃণমূল নেতা রসিকতার সুরে বললেন, ‘‘ওরা এখন কিছুই করবে না। আপাতত এলাকা চিনে নিচ্ছে। রাতটা বিয়েবাড়ি বা কমিউনিটি হলে বিশ্রাম নেবে। কাল সকাল থেকে কাজে নামতে হবে তো!’’

Advertisement

সিপিএম-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, পুরভোটের আগের দিন বাইরে থেকে আনা এই ভাড়াটে সৈনিকদের হাত ধরেই ‘দুর্বল’ ওয়ার্ডগুলোকে কব্জা করতে চাইছে তৃণমূল। কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে দক্ষিণ শহরতলি লাগোয়া ওয়ার্ডগুলিতে এই কাজের জন্য ভাঙড় থেকে থেকে লোক এসেছিল। অভিযোগ, শাসক দলের এক দাপুটে নেতার বাহিনীই শহরতলির বিভিন্ন ওয়ার্ডে দাপিয়ে বেড়িয়েছিল ভোটের দিন। এ বারও বাহিনী ‘সাপ্লাই’ করছে ভাঙড়। সেখানকার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘প্রত্যেককেই নির্দিষ্ট কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ কাজটা কি? কিছু কিছু এলাকায় ভোটাররা যাতে ভোটের দিন বাড়ি থেকে বার না হন, তা নিশ্চিত করা ওই ‘সৈনিক’দের কাজ, জানিয়েছেন ওই তৃণমূল নেতা।

সিপিএমের অভিযোগ, বারুইপুর ও রাজপুর-সোনারপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিষ্ণপুর, ভাঙড় ও জীবনতলা এলাকার তৃণমূলের নেতাদেরই দেখা যাচ্ছে। বজবজ ও মহেশতলায় আবার লোক ঢুকেছে কলকাতার নানা এলাকা থেকে। তৃণমূল সূত্রের খবর, ভোটের দিন সকালে আরও এক দল ‘অতি দক্ষ’ লোককে এ কাজে নামানো হবে ওই সব এলাকায়। ভবানীপুরের এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘খুব ভোরে আমরা বেরবো। টার্গেট মহেশতলা।’’

বজবজ ও মহেশতলা পুরসভা নির্বাচনের দায়িত্বে আছেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য তথা প্রাক্তন সাংসদ শমীক লাহিড়ী। এই দু’টো পুরবোর্ড দখল করতে তৃণমূল এ দিন সকাল থেকেই বহিরাগতদের এলাকায় ঢুকিয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় সিপিএম নেতাদের। শমীকের কটাক্ষ, ‘‘অতিথিরা এসেছেন! এখন বিশ্রাম নিচ্ছেন! কাল সকালে খেল দেখাবেন! এখন সিন্ডিকেট চমকে বেড়াচ্ছে!’’ পুলিশকে জানাননি? শমীক হাসতে হাসতে বলছেন, ‘‘পুলিশ নিজের চাকরি বাঁচানোর জন্যই নিষ্ক্রিয়। কাকে কী বলব?’’ মহেশতলায় তৃণমূলের বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যান দুলাল দাসের যদিও দাবি, ‘‘বিরোধীদের পায়ের তলায় মাটি নেই। ওরা অপপ্রচার করে বিভ্রান্ত করছে।’’

এর মধ্যেই শুক্রবার সন্ধ্যার পর বজবজে বিরোধীদের পোস্টার-ব্যানার ছিঁড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের বিদায়ী বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান গৌতম দাশগুপ্ত অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘কয়েক ঘণ্টা পরেই তো ভোট। এখন কেউ পোস্টার ছিঁড়বে কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন