জীবদ্দশায় ঘটে না সব, আশাই ভরসা সিপিএমে

বিপ্লব করা হয়নি। দেখাও হয়নি। কিন্তু বিপ্লবের স্মৃতির আঁচে গা সেঁকতে তো আপত্তি নেই! নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষে কলকাতার রাজপথে হেমন্তের বিকালে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে তাই গা গরম করে নিলেন রণক্লান্ত হাজারখানেক কমরেড!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৮
Share:

মিছিলের মুখ। সোমবার সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি।

বিপ্লব করা হয়নি। দেখাও হয়নি। কিন্তু বিপ্লবের স্মৃতির আঁচে গা সেঁকতে তো আপত্তি নেই! নভেম্বর বিপ্লবের শতবর্ষে কলকাতার রাজপথে হেমন্তের বিকালে কয়েক কিলোমিটার হেঁটে তাই গা গরম করে নিলেন রণক্লান্ত হাজারখানেক কমরেড!

Advertisement

দুনিয়া কাঁপানো বিপ্লবের শতবর্ষ মানে দেশে দেশে সমাজতন্ত্র-প্রেমীদের শিহরিত হওয়ার সময়। বিশ্ব জুড়ে নানা অনুষ্ঠানে-উৎসবে জারতন্ত্রের পতন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পত্তনের স্মৃতি মেদুরতা। এ দেশের এবং রাজ্যের কমিউনিস্ট পার্টিও তার বাইরে নয়। গোটা বিশ্বে বছরভর নানা কর্মসূচি সেরে আগামী বছর ৭ নভেম্বর মস্কোয় সব ধরনের কমিউনিস্ট ও সমাজবাদী দলের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে শেষ হবে বিপ্লবের শতবর্ষ পালন। ভি আই লেনিন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের অতুল কীর্তির ব্যাজ বুকে সেঁটেই অতএব সোমবার কলকাতার রাস্তায় মিছিল হল সিপিএমের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে, সঙ্ঘ পরিবারের রমরমার প্রতিবাদে পথে নামতে যতই জড়তা থাকুক, যে মিছিল করার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের কোপে পড়তে হবে না, তাতে পা মেলাতে কারওই তো দ্বিধা নেই!

ধর্মতলার লেনিন মূর্তি থেকে সিআইটি রোডের রামলীলা ময়দান পর্যন্ত মিছিল শেষে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র নভেম্বর বিপ্লবের তাৎপর্য ও প্রাসঙ্গিকতা ব্যাখ্যা করেছেন। তার মাঝেই সমাজতন্ত্রের স্বপ্ন বোঝাতে গিয়ে যা বলেছেন, তার আড়ালে দলের বর্তমান কর্মী-সর্থকদের জন্য বার্তা পড়ে নিতে পারছেন অনেকে। সূর্যবাবুর কথায়, ‘‘জীবদ্দশায় বিপ্লব এসে পড়বে, এ ভাবে ভাবলে হয় না। ছোটবেলায় একটা ভুল করতাম। ভাবতাম, পুঁজিবাদের বিপদ সমাসন্ন এবং সমাজতন্ত্র আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা! কিন্তু শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম দীর্ঘস্থায়ী।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘পুঁজিবাদ এমনি এমনি ভেঙে পড়বে না। তাকে ভাঙতে হবে। এটা ৩৪ বছর বা ৭২ বছরের ব্যাপার নয়। মতাদর্শের জোরে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে।’’ দলেরই একাংশ মনে করছে, বিপ্লবের প্রতীক্ষার মোড়কে আসলে কর্মী বাহিনীর মনোবল ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন রাজ্য সম্পাদক। তিনিও জানেন, লালকেল্লায় রক্তপতাকা ওড়ানোর স্বপ্ন এত সহজে সাকার হওয়ার নয়! নবান্ন থেকে তৃণমূল উৎখাতের স্বপ্নও কত দিন অধরা থাকবে, কেউ জানে না! তাই হতাশ না হয়ে দিন বদলের আশায় কাজ করে যাওয়ার পরামর্শ দিতে হয়েছে রাজ্য সম্পাদককে। কেউ কেউ অবশ্য তির্যক সুরে বলছেন, ‘‘এমনিই পথে নামতে এত আড়ষ্টতা। অনন্তের অপেক্ষায় থাকতে হলে তো আরও কেউ বেরোবে না!’’

Advertisement

আপাতত বছরভর বিপ্লবের বাণী নিয়ে চর্চাই চলবে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম যদিও বলছেন, ‘‘আমরা একশো বছরের চর্বিত চর্বণ করছি না। আগামী দিনে দেশের, রাজ্যের কী হবে, বুঝে নিতেও চাইছি।’’ সমালোচকদের কটাক্ষ, বিপ্লব আসলে আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ! আর সাংগঠনিক পরিভাষায় দলের সর্বক্ষণের কর্মীরা তো ‘পেশাদার বিপ্লবী’ হয়েই আছেন। ‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই লেনিন’— এই ভাবখানা নিয়ে সামনের এক বছর তাই ব্যাজ এঁটে মিছিল আর বক্তৃতা!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement