দিশারী: মেদিনীপুরে সভায় কানহাইয়া কুমার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
যখন হাত নাড়াচ্ছেন, পুরো সভাঘর হাততালিতে ফেটে পড়ছে। যখন কথা বলছেন, মুগ্ধ হয়ে শুনছেন শ্রোতারা। তাঁকে ঘিরে সই শিকারিদের ভিড়, সেলফি তোলার হিড়িকও চোখে পড়ার মতো।
রাজনীতির দুনিয়ার তরুণ একজন নেতাকে ঘিরে মেদিনীপুরের মতো মফস্সলে কবে এমন উন্মাদনা দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না বহু প্রবীণ মানুষও। সোমবার সেই অপরিচিত ছবিই ফ্রেমবন্দি হল কানাহাইয়া কুমারকে ঘিরে। উৎসাহীদের ভিড়ে এমন অনেকেই ছিলেন, যাঁদের সঙ্গে বাম রাজনীতি তো বটেই, কোনও ধরনের রাজনীতির সম্পর্ক নেই। কলেজ পড়ুয়া সৌরভ দাস, মুনমুন চট্টোপাধ্যায়রা প্রকাশ্যেই মানছেন, “রাজনীতি করি না। কোনও দিন করবও না। শুধু কানহাইয়ার কথা শোনার জন্যই এসেছি।”
সিপিআইয়ের ছাত্র-যুব সংগঠন এআইএসএফ এবং এআইওয়াইএফের ডাকে এ দিন মেদিনীপুরের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে এক সভায় বক্তব্য রাখেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি কানহাইয়া। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায়, সহজ ভাষায় ধর্মান্ধতা, জাতপাত, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ঋণনির্ভর পুঁজিবাদের ব্যাখ্যা দেন কানহাইয়া। সুর চড়ান বিজেপির বিরুদ্ধে।
বিজেপিকে রুখতে বিরোধীদের একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন এই বিরোধী জোটের পক্ষে সওয়াল করেছেন কানহাইয়াও। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি জানি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কাজকর্ম নিয়ে এ রাজ্যে অনেক অসন্তোষ রয়েছে। কিন্তু দেশে এখন গণতন্ত্র বিপন্ন। বিজেপি এবং সঙ্ঘের হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। বড় লাইন (বিরোধী জোট) টানতে হবে। মনে রাখতে হবে, দিল্লিতে রক্ত ঝরলে সেই রক্ত বাংলায় এসেও পৌঁছবে।” তাঁর মতে, “গণতন্ত্রকে বাঁচাতে একহাতে লালঝান্ডা, অন্য হাতে তেরঙ্গা ঝান্ডা নিয়ে লড়তে হবে।’’
এ দিন মেদিনীপুরে কানহাইয়াকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে বিজেপি। তাঁকে লক্ষ করে ডিম, কালি ছোঁড়েন দলের কর্মীরা। বিক্ষোভ থেকে যুব মোর্চার জেলা সভাপতি অরূপ দাস-সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ দিন জেলার চন্দ্রকোনায় এসে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও কানহাইয়ার বিরুদ্ধে পথে নামার পক্ষে সওয়াল করেন। কানহাইয়া অবশ্য এই বিক্ষোভ নিয়েও বিজেপিকে বিঁধেছেন। তাঁর কথায়, “ওদের ধারণা কালো। তাই ওরা আমাদের গায়ে কালো কালি লাগাতে চাইছে।” এই যুব নেতার বক্তব্য, “কোনও প্রশ্ন তুললেই ওরা দেশবিরোধী তকমা দিয়ে দেয়। আমরা দেশের বিরুদ্ধে স্লোগান তুলি না। সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সরব হই। পার্থক্যটা বুঝতে হবে।”
‘ভারত বাঁচাও, ভারত বদলাও’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে দেশ জুড়ে ‘লং মার্চ’-এর ডাক দিয়েছে সিপিআইয়ের ছাত্র-যুব সংগঠন। এ রাজ্যে কর্মসূচির সূচনা হল এ দিন। ওড়িশা সীমানা পেরিয়ে সোনাকোনিয়া দিয়ে ‘লং মার্চ’ পশ্চিম মেদিনীপুরে ঢোকে। দাঁতন, বেলদা, খড়্গপুর হয়ে মেদিনীপুরে পৌঁছয়। এই কর্মসূচিতেই এসেছিলেন কানহাইয়া। তাঁর বক্তৃতা শেষে আজাদির স্লোগান দিতে দেখা যায় সিপিআইয়ের ছাত্র-যুব নেতাদের। সিপিআইয়ের জেলা সম্পাদক সন্তোষ রাণা বলছিলেন, “কানহাইয়া তারুণ্যের প্রতীক। ওঁকে ঘিরে আবেগ-উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা স্বাভাবিক।”