West Bengal News

উপনির্বাচনে বিপুল জয় তৃণমূলের, মন্তেশ্বরে ব্যবধানের রেকর্ড

মন্তেশ্বরে মাত্র ৭০৬টি ভোটে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ২০১৬-র সেই সাধারণ নির্বাচনের পর ছ’মাস কেটেছে। তার মধ্যেই মন্তেশ্বরে যে ভাবে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বেড়ে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪২৩-এ পৌঁছে গিয়েছে, তাতে রাজনৈতিক পণ্ডিতরাও বেশ হতচকিত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৬ ১৯:৪১
Share:

—ফাইল চিত্র।

মন্তেশ্বরে মাত্র ৭০৬টি ভোটে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ২০১৬-র সেই সাধারণ নির্বাচনের পর ছ’মাস কেটেছে। তার মধ্যেই মন্তেশ্বরে যে ভাবে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বেড়ে ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪২৩-এ পৌঁছে গিয়েছে, তাতে রাজনৈতিক পণ্ডিতরাও বেশ হতচকিত। শুধু মন্তেশ্বরেই নয়, গত ছ’মাসে যে রাজ্যের অন্যান্য এলাকাতেও বিরোধীদের প্রায় ‘ধুলিসাৎ’ করে দিয়েছে তৃণমূল, উপনির্বাচনের ফলে তাও স্পষ্ট। কোচবিহার এবং তমলুক লোকসভা আসনেও তৃণমূল ‘ঝড়ে’ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার মুখে বাম-কংগ্রেস। বিজেপি অবশ্য বোট বাড়িয়েছে।

Advertisement

বিরোধী দলগুলি উপনির্বাচনের বেশ কিছু দিন আগে থেকেই শাসকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলছিল। বিরোধী কণ্ঠস্বরের সব অস্তিত্বই মুছে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছিল। ভোটগ্রহণের দিন মাঝপথেই মন্তেশ্বর কেন্দ্র থেকে প্রার্থী প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কংগ্রেস। উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে বিরোধীদের বক্তব্য, তাঁদের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন ছিল না, তা ভোটের ফল দেখেই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

আশির দশকের শেষ দিক থেকে নিজেদের প্রতিটি জয়ের বিষয়ে বামফ্রন্টের নেতারা যে ধরনের প্রতিক্রিয়া দিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন, এই উপনির্বাচনের পর তৃণমূল নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়াও সে রকমই। মানুষ বিরোধীদের প্রত্যাখ্যান করেছেন, রাজ্যবাসী উন্নয়নের পক্ষে ভোট দিয়েছেন, সাংগঠনিক দুর্বলতাতেই বিরোধীদের এই বিপর্যয়— কোচবিহার, তমলুক, মন্তেশ্বরে তৃণমূল নেতাদের প্রতিক্রিয়া এই রকমই।

Advertisement

তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের দিব্যেন্দু অধিকারী ৪ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫২৫ ভোটে জয়ী হয়েছেন। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী তমলুক থেকে যত ভোটে জিতেছিলেন, তার দ্বিগুণেরও বেশি ব্যবধানে জয়ী হলেন ভাই দিব্যেন্দু। তমলুক লোকসভার অন্তর্গত সবক’টি বিধানসভা কেন্দ্রে বিরোধীদের পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল। মাত্র ছ’মাস আগের বিধানসভা নির্বাচনে যে হলদিয়া বিধানসভা আসনে কংগ্রেস সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী ২১ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন, সেই হলদিয়াতেই এ বার ১ লক্ষেরও বেশি ভোটে এগিয়ে গিয়েছে শাসক দল।

জয়ের পর শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিধানসভা নির্বাচনে যেটুকু খামতি ছিল, লোকসভা নির্বাচনে তা পূরণ করে নিয়েছি। এখন থেকে বলে রাখলাম, দক্ষিণ কাঁথি বিধানসভা কেন্দ্রে দিদি যাঁকেই প্রার্থী করবেন, তাঁর জয়ের ব্যবধান অন্তত ১ লক্ষ হবে। আমাদের লড়াই চলছে।’’

দিব্যেন্দু অধিকারী এত দিন দক্ষিণ কাঁথির বিধায়ক ছিলেন। তমলুক লোকসভা কেন্দ্র থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ায় বিধায়ক পদ থেকে তাঁকে ইস্তফা দিতে হবে। ফলে দক্ষিণ কাঁথি কয়েক মাস পর উপনির্বাচনের মুখোমুখি হবে।

কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী পার্থপ্রতিম রায় এ বার জয়ী হয়েছেন ৪ লক্ষ ১৩ হাজারেরও বেশি ভোটে। ২০১৪-র নির্বাচনে সেখানে তৃণমূল জিতেছিল ৮৭ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। এ বারের ভোটে বাম-কংগ্রেসের জামানত জব্দ হয়েছে কোচবিহারে। তবে বিজেপির ভোট কোচবিহারে অনেকটা বেড়েছে।

মন্তেশ্বরে ইভিএম খুলতেই দেখা গিয়েছে ‘সবুজ ঝড়’। বামেদের জামানত জব্দ, বিজেপির জামানত জব্দ, কংগ্রেসের জামানত জব্দ। ১ লক্ষ ২৭ হাজার ৪২৩ ভোটের ব্যবধানে সেখানে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী সৈকত পাঁজা। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সাধারণ নির্বাচন হোক বা উপনির্বাচন, কোনও দিনই কোনও কেন্দ্রে কোনও দল এতটা ব্যবধানে এর আগে জয়ী হয়নি।

উপনির্বাচনের ফলাফলে স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত তৃণমূলনেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছেন, ‘‘এই রায় নোট সঙ্কটের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহের রায়। হিটলারি কায়দায় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার বিরুদ্ধেই মানুষ রায় দিয়েছেন।’’ ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। দলনেত্রীর সুরে তিনিও বলেছেন, ‘‘গণবিদ্রোহ হয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে।’’

কোনও আসনেই জয় না পেলেও, নির্বাচনের ফলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিজেপিও। রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছেন, ‘‘বিজেপির ভোট তিন গুণ বেড়েছে। নোট বাতিলের সিদ্ধান্তকে যে মানুষ সমর্থন করছেন, নির্বাচনের ফলাফলেই তা স্পষ্ট।’’ বিজেপির এই দাবি অবশ্য নস্যাৎ করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর ইঙ্গিত, বিজেপি যে ভোট পেয়েছে, তা পুরোপুরি বিজেপির ভোট নয়। বাম-কংগ্রেস তৃণমূলকে হারানোর চেষ্টায় বিজেপিকে ভোট হস্তান্তর করেছে বলে পার্থবাবুর প্রচ্ছন্ন কটাক্ষ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধীদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে তৃণমূলের এই জয় কিন্তু অনিল বসু, নন্দরানি দলদের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিচ্ছে। বাম আমলে আরামবাগ, গোঘাট, পুরশুড়া, খানাকুল, কেশপুর, গড়বেতা বার বার শিরোনামে এসেছে শাসকের তীব্র সন্ত্রাসের অভিযোগে। ওই সব এলাকায় সে যুগে বামেদের জয়ের ব্যবধানও এই রকমই হত। বাম নেতারা সহাস্যে বলতেন— বিরোধীদের সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে, মানুষ ওঁদের প্রত্যাখ্যান করেছেন, উন্নয়নের পক্ষে মানুষ ভোট দিয়েছেন। আজ ওই সব এলাকায় আর ঢুকতেই পারেন না বামেরা। এই ভোটের ফল দেখে তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিছুটা সতর্ক হতেই হবে, বলছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। নেপথ্যে অন্য অঙ্ক রয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা উচিত দলনেত্রীরই, মত তাঁদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন