—প্রতীকী চিত্র।
সরকারি ধান কেনায় ফড়েদের দাপাদাপি বন্ধ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার নবান্নে চলতি মরসুমের গণবণ্টন ব্যবস্থার জন্য ধান সংগ্রহের অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক ছিল। সেখানেই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-অফিসারদের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার নির্ধারিত সহায়ক মূল্য চাষিরা যাতে পান, তা দেখা সরকারের কাজ। মাঝখানে ফড়েরা ঢুকে পড়ে যে ভাবে চাষিদের কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য করছে, তা নবান্ন বরদাস্ত করবে না।
এই মরসুমে সরকার ৫২ লক্ষ টন ধান সংগ্রহে নেমেছে। অক্টোবর থেকে ধান কেনা শুরু হলেও নভেম্বরের শেষে আমন ধান ওঠার পরই চাষিরা ধান বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এখনও পর্যন্ত সাত লক্ষ টন ধান কেনা হয়েছে। গত বছর এই সময় পর্যন্ত ৫ লক্ষ টনের কিছু বেশি ধান সংগ্রহ হয়েছিল। কিন্তু এ বার যে ভাবে ধান কেনা হচ্ছে, তাতে খুশি নন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা চাই চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনতে। মাঝখানে কিছু লোক ঢুকে যায়। যারা ভুল বুঝিয়ে প্রতি কুইন্টালে ২০০-৩০০ টাকা কম দিয়ে চাষিদের বঞ্চিত করে। সেটা করতে দেব না। চাষিরা ধান দিলে সঙ্গে সঙ্গে চেক দেওয়া হবে।’’
কেন অখুশি মুখ্যমন্ত্রী?
নবান্নের খবর, এ বার কেন্দ্রীয় সরকার ধানের সহায়ক মূল্য কুইন্টাল প্রতি ২০০ টাকা বাড়িয়েছে। তার সঙ্গে রাজ্য ২০ টাকা বোনাস ঘোষণা করেছে। সব মিলিয়ে সরকারের কাছে সরাসরি ধান বিক্রি করলে চাষিদের কুইন্টাল প্রতি ১৭৭০ টাকা পাওয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বিভিন্ন জেলায় ফড়েরা চাষিদের কাছ থেকে প্রতি কুইন্টাল প্রতি ১৪০০-১৪৫০ টাকায় ধান কিনে তা সরকারি কেন্দ্রে বিক্রি করে যাচ্ছে। ফলে এক শ্রেণির ফড়ে লাভ করলেও চাষিরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না।
এ দিনের বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, সরকার মূলত স্বরোজগার দল, প্রাথমিক কৃষি সমবায় সমিতি এবং কিসান মান্ডিগুলিতে সরাসরি চাষিদের থেকে ধান কিনবে। সে জন্য অন্তত ২০০০টি জায়গায় ধান ক্রয় কেন্দ্র খুলবে রাজ্য। এখন ৩৪৩টি কিসান মান্ডি ছাড়াও ৫৫০টি সমবায় সমিতি ধান কিনছে। কিন্তু তা যথেষ্ঠ নয় বলে মনে করছে নবান্ন। এ ছাড়াও জেলাশাসকদের সরাসরি ধান কেনার তদারকিতে নামতে বলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার কথা মাথায় রেখে প্রয়োজনে পুলিশের উপস্থিতিতেও ধান কেনা হতে পারে। এখন ধান বিক্রির পর সরাসরি চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, ১৫ দিন পরেও সেই টাকা অনেক ক্ষেত্রে চাষিরা পাচ্ছেন না। এমন গুরুতর অভিযোগ শুনে সরকার টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া বদলে দিয়েছে। মুখ্যসচিব মলয় দে বলেন, ‘‘চাষিদের ধান বিক্রি কেন্দ্রেই চেক দিয়ে দেওয়া হবে। এর প্রস্তুতিতে চার-পাঁচ দিন সময় লাগবে।’’ তবে ধান বিক্রি কেন্দ্রে চাষিদের পরিচয় পত্র দেখানোর নিয়ম এখনই চালু করছে না সরকার।
বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উঠেছে কোথাও ফড়ে, কোথাও সরকারি সমবায় সমিতিকে শিখণ্ডি খাড়া করে চালকল মালিকেরা ধান কেনার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছেন। তাতেই চাষিরা দাম পাচ্ছেন না। মুনাফা লুটছেন এক শ্রেণির চালকল মালিক ও স্থানীয় ‘দাদা’। যদিও খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘চালকল মালিকেরা কোথাও ধান কেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। ধান কেনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ৭টি সমবায় সংস্থাকে। সঙ্গে ব্লক স্তরে ৩৪৩টি কিসান মান্ডিতে চলছে সরাসরি ধান কেনার কাজ।’’