ভোটের আগে রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলির হাতে ঠিকাদারদের বিল মেটানোর বিপুল ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হল। ৭৫ হাজার টাকা থেকে তা বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। বহু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে প্রায় এক বছর আগে পঞ্চায়েতগুলির থেকে ওই ক্ষমতা কার্যত কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গত ১৯ মার্চ একটি নির্দেশিকায় পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর জানায়, এ বার থেকে পঞ্চায়েতগুলি ঠিকাদারদের একটি কাজের জন্য সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত মিটিয়ে দিতে পারবে। তার উপরে অথচ ৪৫ লক্ষ টাকার নীচে— এমন বিল মেটাতে বিডিও-র অনুমতি লাগবে। ৪৫ লক্ষ টাকার উপরে জেলাশাসকের অনুমতি নিতে হবে।
নয়া নির্দেশিকাকে ঘিরে বিতর্ক জমছে। এর মাধ্যমে গ্রামস্তরে শাসকদল ভোট কেনার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করছে সিপিএম। দলের নেতা সুদর্শন রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘সরকারি তহবিল থেকেই তৃণমূল ভোট কেনার আয়োজন করেছে।’’ বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘ওই নির্দেশিকায় নির্বাচনী বিধিভঙ্গ হল কিনা, তা দেখছি।’’ পঞ্চায়েত দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমি সবে দায়িত্বে এসেছি। বিষয়টি এখনও জানা নেই।’’
গত বছরের জুনে তৎকালীন পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই পঞ্চায়েতে ওই ‘আগল’ পরানো হয়েছিল। তার আগে আইএসজিপি (বিশ্বব্যাঙ্কের টাকায় পঞ্চায়েতের সশক্তিকরণ প্রকল্প), রাজ্য অর্থ কমিশন এবং কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের টাকায় যে সব উন্নয়নমূলক কাজ হত, তার বিল মেটানোর ব্যাপারে পঞ্চায়েতের কোনও ঊর্ধ্বসীমা ছিল না। এতে বহু ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তার জেরেই গত বছর দফতর জানিয়ে দেয়, একটি বিলের ক্ষেত্রে পঞ্চায়েতগুলি ঠিকাদারদের ৭৫ হাজার টাকার বেশি মেটাতে পারবে না। ৭৫ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিল মেটাতে হলে অনুমতি লাগবে বিডিওদের। ২ লক্ষ টাকার উপরে মহকুমাশাসকের। নতুন নিয়মে পঞ্চায়েতের ওই ‘আগল’ খুলে দেওয়া হল।
সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘প্রার্থী হওয়ার ফলে আমি পঞ্চায়েতের দায়িত্বেও নেই। তাই নতুন নির্দেশ নিয়ে কিছু বলার জায়গায় নেই।’’
কেন এই নির্দেশ? পঞ্চায়েত কর্তাদের একাংশের ধারণা, গ্রামস্তরে ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রধানদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। তাঁদেরই একটা বড় অংশ ঠিকাদারদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টাকার জোগান দিয়ে থাকেন। কিন্তু বিল মেটানোর ক্ষেত্রে হাত-পা বেঁধে দেওয়ায় তাঁরা বিপাকে পড়ছিলেন। কারণ, ৭৫ হাজার টাকার বিল খুব কম হয়। ফলে, পঞ্চায়েতগুলির বেহিসেবি হওয়ার সুযোগ থাকছিল না। তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েতের প্রধানদের একাংশের মধ্যে কাজে অনীহা এবং ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছিল। যার বহিঃপ্রকাশ নির্বাচনে পড়লে শাসকদল বিপাকে পড়তে পারে, এই আশঙ্কা ছিল।
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কেউ দাবি করেছেন, বিডিও এবং এসডিওদের কাছ থেকে বিল যাচাই করিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। তাতে বেশি সময় লাগছিল। সম্ভবত, সে কারণেই পদ্ধতিটি সরল করা হয়েছে। যদিও ঠিক ভোটের আগেই কেন এই উদ্যোগ, সে প্রশ্ন উঠছে।