গাড়ি দেখলেই শুঁড় বাগিয়ে ছুটে যাচ্ছে হাতি

কিন্তু সম্ভবত দলটির খোঁজ না পেয়ে হাতির ছানাটি আবার রাস্তার ধারেই ফিরে আসে। ওই এলাকাতেই তাকে দেখা যাচ্ছিল এই দিন সাতেক ধরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:২৯
Share:

রাগ: গাড়ি দেখলেই তাড়া। —নিজস্ব চিত্র।

কখনও শুঁড় গুটিয়ে ছুটে যাচ্ছে। কখনও শুঁড় তুলে। কোনও গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে ছুটছে। আলিপুরদুয়ারের নিমতি চা বাগান থেকে পোরোর জঙ্গলের রাস্তায় খাস জাতীয় সড়কের উপরে একটি বছর পাঁচ-ছয়ের হাতির ছানার জন্য তাই চিন্তায় বন দফতর।

Advertisement

গত সপ্তাহের বুধবার বিকেলে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের একটি বিটের কাছে এই হাতির ছানাটিকে ধাক্কা দেয় একটি বড় গাড়ি। দলের সঙ্গেই তখন ছিল সে। বাকিরা পেরিয়ে গেলেও, তার রাস্তা পার হতে হতে গাড়ি এসে যায়। মাথায় ও পায়ে চোট পেয়ে সে তখন ছিটকে পড়েছিল রাস্তার ধারে। কোনওমতে সরে যায় রাস্তা লাগোয়া জঙ্গলে। সেখানেই পড়েছিল বেশ খানিকক্ষণ। তার দলটি তাকে ফেলেই চলে যায়। বন দফতর খবর পেয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা শুরু করে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অনেকটা সুস্থও হয়ে ওঠে।

আর তার পর থেকেই তার রাগ বাড়তে থাকে। প্রথমে বনকর্মীদের দিকেই তেড়ে যাচ্ছিল। পরে জঙ্গলে ঢুকে যায়। কিন্তু সম্ভবত দলটির খোঁজ না পেয়ে হাতির ছানাটি আবার রাস্তার ধারেই ফিরে আসে। ওই এলাকাতেই তাকে দেখা যাচ্ছিল এই দিন সাতেক ধরে। কেউ কাছে ঘেঁষতে চাইলেই তেড়ে যাচ্ছিল।

Advertisement

কিন্তু তা বলে ব্যস্ত জাতীয় সড়কে উঠে গাড়ি তাড়া করবে, এতটা কেউ ভাবতে পারেননি। দুর্ঘটনার এক সপ্তাহ পরে বুধবার বিকেলে সে গাড়ি দেখলেই তাড়া করতে শুরু করে। নিমতি চা বাগানের কাছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে বিকেল চারটে থেকে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে দাপিয়ে বেড়ায় শাবকটি। অনেকে মোটরবাইক, স্কুটি রাস্তায় ফেলে রেখে দৌড়ে পালান। কিন্তু অন্য গাড়ি মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ারও সময় পাচ্ছে না। সব থেকে চিন্তার কথা হল, এই রাস্তা দিয়ে বেশ জোরেই ট্রাক চলে। হস্তিশাবকটি যে ভাবে আচমকা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গাড়ির দিকে ছুটে যাচ্ছে, তাতে সে আবার আহত হতে পারে। তাই গাড়ি চালকদের সতর্ক করতে শুরু করেছে বন দফতর।

হস্তি বিশেষজ্ঞ পার্বতী বড়ুয়া বলেন, “গাড়ির ধাক্কায় যে সে জখম হয়েছে, সেটা মনে রয়েছে। তাই রাগে, প্রতিশোধ নিতেই গাড়ি দেখলেই ছুটছে হস্তিশাবকটি।’’ তাঁর পরামর্শ, বনকর্মীদের উচিত হাতির অন্য পালের সঙ্গে তাদের ঢুকিয়ে দেওয়া, না হলে তাকে হাতির পিলখানায় রাখতে হবে।

বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের কল্যাণ রাই জানান, পালের সঙ্গেই শাবকটিকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সম্ভবত জখম শাবকটি দলের সঙ্গে তাল রাখতে পারবে না বলেই তাকে আর নেওয়া হয়নি। পালটিও আর ফেরেনি। তবে এ রকম চলতে থাকলে হাতিটিকে ঘুমপাড়ানি গুলি করে জলদাপাড়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।

আপাতত হাতিটিকে জঙ্গলের গভীরে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সে আবার গাড়ির শব্দে ফিরবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা যায়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement