স্নাতকে কেন্দ্রীয় অনলাইনে পার্থ নারাজ এখনও

যেটা দুর্নীতি ঠেকানোর মহৌষধ, সেই কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতি স্নাতকোত্তরে চালু করার সিদ্ধান্ত হলেও কলেজে এখনও তা হয়নি। স্নাতক স্তরে কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থায় সায় মিলছে না শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৮ ০৪:৫৭
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়াকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কিছু কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু যেটা দুর্নীতি ঠেকানোর মহৌষধ, সেই কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতি স্নাতকোত্তরে চালু করার সিদ্ধান্ত হলেও কলেজে এখনও তা হয়নি। স্নাতক স্তরে কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থায় সায় মিলছে না শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের।

Advertisement

অথচ শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অনলাইন চালু না-হলে স্নাতক স্তরে ভর্তিতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা আসবে না। নির্ধারিত আসনের থেকে বেশি পড়ুয়া ভর্তির ঘটনা গত কয়েক বছরে বারবার ঘটেছে বিভিন্ন কলেজে। এ বার স্নাতকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতিদিন ক’জন ভর্তি হল, তার হিসেব দিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্তা জানান, এত দিন ভর্তির পরে হিসেব নেওয়া হত। কিন্তু এ বার থেকে দিনের দিন ভর্তির হিসেব নেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, এর মূলে রয়েছে আনন্দমোহন কলেজের গত বছরের সমস্যা। সেখানে বাড়তি পড়ুয়া ভর্তি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় তাঁদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেয়। তার পর থেকে কলেজে বেশ কয়েক বার বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অভিভাবকদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারস্থ হন সেই পড়ুয়ারা। এমন বিড়ম্বনা এড়াতেই এই পদক্ষেপ। কোন কলেজে নতুন অনার্স চালু হচ্ছে এবং কতগুলো আসন রয়েছে, সেটাও জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ছাত্র সংগঠনের প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৃহস্পতিবারের কড়া বার্তার ফলে ভর্তি প্রক্রিয়া এ বার নির্বিঘ্নে মিটবে বলে কলেজ-কর্তৃপক্ষের আশা। তবে অনেক অধ্যক্ষেরই বক্তব্য, স্নাতক স্তরে গোটা বিষয়টিকে দুর্নীতিমুক্ত করতে কেন্দ্রীয় অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করাটাই চূড়ান্ত দাওয়াই।

Advertisement

২০১৪ সালে ব্রাত্য বসু শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন কেন্দ্রীয় অনলাইনে কলেজে ভর্তি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু পরে রাজ্য সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে। শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইনে ভর্তির প্রস্তাব বাতিলকরে কলেজ-ভিত্তিক অনলাইনে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এই প্রক্রিয়ায় টাকার বিনিময়ে ভর্তি মোটেই আটকানো যায়নি।
গত বছর অনেক ক্ষেত্রেই মেধা-তালিকায় স্থান পাওয়া ছাত্রছাত্রীরা শাসক দলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র বাধায় ভর্তির জন্য কলেজে ঢুকতে পারেননি।

এ বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁদের অধীন কলেজগুলিতে ভর্তি-দুর্নীতি ঠেকাতে উদ্যোগী হওয়ায় বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষেরা খুশি। কারণ ভর্তির মরসুমে অনেক অধ্যক্ষকেই অসম্ভব চাপের মুখে কাজ করতে হয়। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, আসল দাওয়াই কেন্দ্রীয় অনলাইন। কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু করলে তবেই ভর্তি নিয়ে দুর্নীতি নির্মূল করা সম্ভব। জয়পুরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ অশোক মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু হলেই সব থেকে বেশি স্বচ্ছতা বজায় রাখা সম্ভব।’’ চিত্তরঞ্জন কলেজের অধ্যক্ষ শ্যামলেন্দু চট্টোপাধ্যায়ও জানান, স্নাতক স্তরে কেন্দ্রীয় ভাবে ভর্তি চালু করা অত্যন্ত জরুরি।

কিন্তু শিক্ষামন্ত্রী এ দিনও জানান, কলেজে ভর্তিতে কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থার কথা তাঁরা ভাবছেন না।

অধ্যক্ষেরা মনে করছেন, এটাই দুর্নীতির মোক্ষম দাওয়াই। কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা স্নাতকোত্তরে চালু করা হচ্ছে। কলেজে নয় কেন?

সরাসরি জবাব এড়িয়ে পার্থবাবুর বক্তব্য, কেন্দ্রীয় অনলাইন চালু হলেও ‘এগুলো’ (দুর্নীতি) আটকানো যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন