পার্থ চট্টোপাধ্যায়
কলেজে ভর্তির নামে টাকা তোলা এবং অরাজকতার অভিযোগ উঠছে এ বারও। কিন্তু কলেজে অনলাইন ভর্তির কথা বললেও কেন্দ্রীয় ভাবে তা চালু করার পক্ষপাতী নন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ওই ব্যবস্থায় গ্রামাঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা ভর্তির সুযোগ নিতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থায় টাকার লেনদেন বন্ধ হওয়ার গ্যারান্টি আছে বলেও মনে করেন না তিনি।
দীর্ঘদিন ধরেই কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়ায় ছাত্র সংসদের একচ্ছত্র দাদাগিরির অভিযোগ আছে। ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন সেই দাদাগিরির নেপথ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বিরাট অঙ্কের টাকার লেনদেন রয়েছে বলে অভিযোগ। জেলায় তো বটেই, কলকাতা শহরেও বহু কলেজে ভর্তির জন্য হাজার হাজার টাকা দাবি করা হচ্ছে। তাতে শাসকদের একাংশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। দু’দিন আগেই বিদ্যাসাগর কলেজে ভূগোল স্নাতকে ভর্তির জন্য তালিকায় নাম থাকা এক ছাত্রকে টাকার দাবিতে আটকে রাখার অভিযোগ এসেছে। এমতাবস্থায় শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষা প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন ভর্তি চালু হলে দাদাগিরিতে রাশ টানা যাবে।
কলেজে অনলাইন ভর্তির কথা বলা হলে কেন্দ্রীয় ভাবে তা চালু করতে কিসের আপত্তি? শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ‘‘কেউ কেউ একটা ব্যবস্থা চাপিয়ে দিতে চাইছেন। কিন্তু সরকারকে শুধু একটি অংশের কথা ভাবলে চলে না। গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর কথা ভাবতে হয়। তাঁদের সাইবার কাফের সুবিধা আছে কি না, তা দেখতে হবে।’’ যা শুনে ওয়েবকুটার সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ বলছেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। হয় উনি বুঝছেন না অথবা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন!’’ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা চালু করলে ‘প্রত্যক্ষ তোলাবাজি’ বন্ধ হবে।
ছাত্রভর্তি নিয়ে টাকার লেনদেনের অভিযোগ আসছে তৃণমূলের নেতা-বিধায়কদের কাছেও। এক প্রাক্তন ছাত্রনেতার কথায়, ‘‘শুধু মুখে বলে এই অনিয়ম বন্ধ করা যাবে না। আমরা কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে পারিনি।’’ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘উড়ো কথা বললে হবে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে দিন। পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’’ তাঁর আরও যুক্তি, ‘‘কেন্দ্রীয় ভাবে অনলাইন করলেই টাকা লেনদেন বন্ধ হবে না। সংশ্লিষ্ট সকলকে বলে দিয়েছি, আপস করব না।’’
সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সরকার আরও একটি সমস্যার কথা বলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এখন সিবিসিএস চালু হয়েছে। কোনও পড়ুয়া এক কলেজে কিছু দিন থেকে আবার অন্য কলেজে সুযোগ পেয়ে চলে গেলে সারা বছরই প্রায় ভর্তি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়! তাতে সিমেস্টার পদ্ধতিতে অসুবিধা হয়।’’ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীয় অনলাইন ব্যবস্থা এই সমস্যার সুরাহা করতে পারে বলে শিক্ষকদের একাংশের মত।