ভর্তি অনলাইনে, ক্লাস শুরুর আগে কলেজে নয়

প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগে পড়ুয়ারা কোনও পরিস্থিতিতেই কলেজে যাবেন না। হাজিরার বিষয়ে পড়ুয়াদের অনেক আগে সচেতন করতে হবে কলেজ-কর্তৃপক্ষকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলেজে কলেজে অনলাইনে ভর্তির ব্যবস্থা করা সত্ত্বেও টাকা লেনদেন নিয়ে গত বছরেও ব্যাপক গোলমাল হয়েছে। তাই এ বার ক্লাস শুরুর আগে ছাত্রছাত্রীদের যাতে কলেজে যেতে না-হয়, সেই বন্দোবস্ত করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মঙ্গলবার উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানান, অনলাইনেই ভর্তি হবে। এবং প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর আগে পড়ুয়ারা কোনও পরিস্থিতিতেই কলেজে যাবেন না। হাজিরার বিষয়ে পড়ুয়াদের অনেক আগে সচেতন করতে হবে কলেজ-কর্তৃপক্ষকে।

Advertisement

এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে স্নাতকোত্তরে ভর্তির ক্ষেত্রে আসন পুনর্বিন্যাসের ভাবনার কথাও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেছেন, অবিলম্বে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শূন্য শিক্ষকপদ পূর্ণ করতে হবে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্রস্তুতি-ছুটি তুলে দেওয়ার বিষয়টিও তাঁদের ভাবনায় আছে।

বৈঠকের পরে পার্থবাবু বলেন, ‘‘অনলাইনে ভর্তির আবেদনের পরে টাকা জমা দিতে হবে ব্যাঙ্কে। প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরুর সময় যাবতীয় তথ্য যাচাই হবে।’’ ভর্তি ঘিরে তোলাবাজির ক্ষেত্রে নাম জড়িয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতাদের। গ্রেফতারও হয়েছে কেউ কেউ। এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তাই এ বার ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর আগেই মন্ত্রী কড়া হতে বললেন উপাচার্যদের।

Advertisement

রাজ্যে সব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) বা পছন্দসই মিশ্র পাঠ চালু হয়ে গিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় পড়ুয়াদের হাজিরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। হাজিরার উপরে নম্বর আছে। ন্যূনতম হাজিরা না-থাকলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু সম্প্রতি ন্যূনতম হাজিরা না-থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষায় বসতে দেওয়ার দাবিতে কলেজে কলেজে বিক্ষোভ দেখান এক শ্রেণির পড়ুয়া। শিক্ষামন্ত্রী তখনই বলেছিলেন, এই বিষয়ে কলেজ-কর্তৃপক্ষের খামতি আছে। তিনি এ দিন উপাচার্যের জানিয়ে দেন, হাজিরা যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেটা প্রথমেই বোঝাতে হবে পড়ুয়াদের।

শিক্ষামন্ত্রী একই সঙ্গে উপাচার্যদের জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শূন্য শিক্ষকপদ ছ’মাসের মধ্যে পূরণ করতে হবে। নইলে সরকার বিভিন্ন পদের যে-অনুমোদন দিয়েছে, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। দু’বছর আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে শিক্ষা সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছিলেন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্য পদ পূরণ করতে হবে ছ’মাসের মধ্যে। এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ পালিত হয়নি। তিনি জানান, শিক্ষক নিয়োগ না-হলে শুধু পড়ুয়াদের উপস্থিতি দিয়ে তো হবে না। এ দিনের বৈঠকে উপাচার্যেরা জানান, মূলত সংরক্ষিত পদে যোগ্য প্রার্থী না-পাওয়ায় সব পদ পূরণ করা যাচ্ছে না।

রাজ্যে এখন স্নাতকোত্তরে ভর্তিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য ৬০% আসন সংরক্ষিত। বাকি ৪০% পদে ভর্তি হতে পারেন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা যায় কি না, বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষকে তা দেখতে বলেছি। আমরা চাই, আমাদের মেধা আমাদের রাজ্যেই থাকুক।’’ মন্ত্রী বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন, কলেজ-শিক্ষকদের অবসরের বয়স ৬২ থেকে ৬৫ করা হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকেরা পড়ুয়াদের কী দিচ্ছেন? শিক্ষকদেরও কিছুটা দায়িত্ব নিতে হবে। পার্থবাবু পরে বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের বেশি সময় না-দিলে, বিশেষ করে প্রথম সিমেস্টারে তাঁদের অসুবিধা হয়। তাই পড়ুয়াদের সময় দিতে হবে শিক্ষকদের।’’ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা প্রস্তুতি-ছুটি পান। মন্ত্রী চান না, এই ছুটি চালু থাকুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন