প্রাক্তনদের চান পার্থ, শুরু বিতর্ক

স্কুলে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব। পদে পদে মার খাচ্ছে পঠনপাঠন। নতুন নিয়োগেরও নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থায় অবসরপ্রাপ্তদের দিয়েই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাটতি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০১৬ ০৯:০০
Share:

স্কুলে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব। পদে পদে মার খাচ্ছে পঠনপাঠন। নতুন নিয়োগেরও নিশ্চয়তা নেই। এই অবস্থায় অবসরপ্রাপ্তদের দিয়েই স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকার ঘাটতি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্কুলগুলিতে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হবে বলে বুধবার বিধানসভায় জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু লক্ষ লক্ষ তরতাজা প্রার্থীকে স্থায়ী পদে নিয়োগ না-করে প্রাক্তনদের ডাকা হচ্ছে কেন, সেই প্রশ্ন তুলে বিতর্ক এবং প্রতিবাদও শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

এ দিন বিধানসভার জিরো আওয়ারে কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো জানান, রাজ্যের অনেক বিদ্যালয়কে মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু পরিকাঠামোগত সমস্যা, বিশেষ করে শিক্ষক-সমস্যার ফলে সেই সব বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা যাচ্ছে না। নানান জটিলতায় ফেঁসে রয়েছে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাও। স্কুলে স্কুলে শিক্ষক-ঘাটতির এই দীর্ঘদিনের সমস্যার সুরাহা করতে সরকার কী করছে, শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর কাছে তা জানতে চান নেপালবাবু।

এ রাজ্যে প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা (টেট) হয়ে গিয়েছে দীর্ঘদিন আগে। কিন্তু নিয়োগে বাদ সেধেছে বিভিন্ন মামলা। শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলার জেরে বারে বারেই আটকে যাচ্ছে শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া। বিলম্বিত হচ্ছে নিয়োগ পরীক্ষার ফলপ্রকাশ।

Advertisement

পরিস্থিতির মোকাবিলায় শিক্ষা দফতর অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অতিথি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করে আপাতত পঠনপাঠনের বাধা কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে শিক্ষামন্ত্রী এ দিন জানান।

সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির প্রাক্তন সভাপতি দীপক দাস বলেন, ‘‘বিষয়টি নতুন নয়। ৬১ থেকে ৬৪ বছর বয়সের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ফের স্কুলে নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১০ সালেই। তাঁরা ক’টি ক্লাস নেবেন, তাঁদের বেতন-কাঠামো কী হবে— সবই তখন ঠিক করা হয়েছিল। নিয়োগও হয়েছিল বেশ কিছু।’’ কিন্তু তার পরে অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষকদের নিয়োগেও ভাটার টান আসে। এ রাজ্যে শিক্ষকের ঘাটতির সমস্যা স্কুল থেকে শুরু করে কলেজ পর্যন্ত সব স্তরেই। অধিকাংশ কলেজেই অতিথি শিক্ষক দিয়ে বেশির ভাগ ক্লাস নেওয়া হয়। তাঁদের উপযুক্ত সম্মান ও সাম্মানিক দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলে তাঁরা মাঝেমধ্যেই রাস্তায় নামছেন। কলেজ স্তরেও সমস্যা মেটাতে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের কথা ভাবা হচ্ছে না।

স্কুলেও অতিথি শিক্ষক হিসেবে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ আদতে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের অন্তরায় বলেই মনে করছে শিক্ষা শিবির। ‘‘শিক্ষার মানোন্নয়ন ঘটাতে গেলে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এটা সেই সমস্যা সমাধানের পথ নয়,’’ বলছেন প্রধান শিক্ষক সমিতির সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরী।

টেট পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা দিন গুনতে গুনতে হতাশ হয়ে পড়ছেন। টেট দিয়ে ফলের আশায় বসে আছেন অসংখ্য শিক্ষকপদ-প্রার্থী। কিন্তু গত তিন বছরে কোনও শিক্ষক নিয়োগ করা হয়নি। ২০১২ সালের পর থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশন বা এসএসসি-র মাধ্যমেও কোনও শিক্ষক নেওয়া হয়নি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে। সেখানেও গেরো সেই মামলা। অর্থাৎ মামলার পর মামলায় প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত স্কুলশিক্ষার সর্বস্তরে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ। এই অবস্থায় বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের কথা না-ভেবে, স্কুলশিক্ষায় তাজা প্রার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা না-চালিয়ে সরকার কেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ফের কাজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষাবিদদের একটি বড় অংশ।

‘‘যাঁরা এত বছর পড়িয়ে এসেছেন, তাঁদের সসম্মান অবসর যাপন করতে দেওয়াই ভাল। বহু নতুন ছেলেমেয়ে চাকরির প্রত্যাশী। পার্থবাবুর উচিত ছিল তাঁদের কথা আগে ভাবা,’’ বলছেন শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার।

বছর পাঁচ-ছয় আগে প্রাক্তন শিক্ষকদের ফেরানোর উদ্যোগ পর্বে সরকারের দাবি ছিল, অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগ করলে তাঁদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে স্কুলপড়ুয়ারা উপকৃত হবেন। কিন্তু এই সময়ে দাঁড়িয়ে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ফিরিয়ে আনার চিন্তাকে সরকারের ‘নঞ্‌র্থক মানসিকতা’ হিসেবেই দেখছেন বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য আনন্দদেব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষায় নতুন নতুন চিন্তার উন্মেষ ঘটাতে হলে নতুন যোগ্য ছেলেমেয়েদের নিয়োগ করতেই হবে। অবসরপ্রাপ্তদের দিয়ে কাজ চালানো যেতে পারে। কিন্তু এ ভাবে কোনও ক্রমে কাজ চালিয়ে নেওয়ার মানসিকতা আসলে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের পথে বড় কাঁটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন