অনশন তুলতে আর্জি পার্থের, প্রার্থীরা রাজভবনে

প্রথম দিন তাঁর দেখা পাননি অনশনরত কর্মপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে ফের রাজভবনে গিয়েও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন না তাঁরা। তবে আন্দোলনকারীরা জানান, যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হবে বলে রাজভবনের তরফে আশ্বাস মিলেছে। এ দিনই অনশনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন জানালেও তাঁর সাফ কথা, চাকরির দাবি মানা যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:২৬
Share:

প্রথম দিন তাঁর দেখা পাননি অনশনরত কর্মপ্রার্থীরা। মঙ্গলবার দুপুরে ফের রাজভবনে গিয়েও রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেলেন না তাঁরা। তবে আন্দোলনকারীরা জানান, যত দ্রুত সম্ভব রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দেওয়া হবে বলে রাজভবনের তরফে আশ্বাস মিলেছে। এ দিনই অনশনকারীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। অনশন তুলে নেওয়ার আবেদন জানালেও তাঁর সাফ কথা, চাকরির দাবি মানা যাবে না।

Advertisement

চাকরির দাবিতে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর দফতরে এক দল প্রার্থীর অনশন মঙ্গলবার আট দিনে পড়ল। অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁদের কয়েক জনকে ইতিমধ্যে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনের পরেও প্রার্থীরা জানিয়ে দিয়েছেন, চাকরির দাবি না-মানা পর্যন্ত তাঁদের অনশন-আন্দোলন চলবে।

অনশনকারীদের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু এ দিন বিবেকের কথা তুলেছেন। তিনি বলেন, “আমরা চিন্তিত ওই প্রার্থীদের স্বাস্থ্য নিয়ে। আমি আবেদন করছি, তাঁরা অনশন প্রত্যাহার করুন। প্রার্থীদের বলছি, আগামী দিনে তাঁরা নিশ্চয়ই শিক্ষকতার সুযোগ পাবেন। কিন্তু আইন না-মেনে তো কিছু করা যাবে না। আমাদেরও বিবেক আছে। কিন্তু বিবেক দিয়ে তো আর আইন লঙ্ঘন করা যায় না!”

Advertisement

নিয়ম মেনে যে আন্দোলনকারী প্রার্থীদের চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়, পার্থবাবু বারে বারেই তা জানিয়ে দিয়েছেন। গত সোমবারেও তিনি বলেছিলেন, যোগ্য প্রার্থীরাই চাকরি পাবেন। এ দিন পার্থবাবু বলেন, “আন্দোলনকারী প্রার্থীদের ৯০ শতাংশের বিএড প্রশিক্ষণ নেই। এসএসসি-র মাধ্যমে চাকরি হয় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। সেই নিয়মে যাঁরা এগিয়ে, তাঁরাই চাকরি পেয়েছেন। প্রার্থীদের তো এটুকু বুঝতে হবে যে, বেআইনি ভাবে কিছু করা যায় না।” শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য, ওই প্রার্থীরা আবেগতাড়িত হয়ে অনশন করছেন।

স্কুলশিক্ষকের চাকরির দাবিতে এসএসসি-র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বেশ কিছু প্রার্থী দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন। ২৭ জানুয়ারি এক দল প্রার্থী ১৪৪ ধারা ভেঙে সল্টলেকে এসএসসি-র অফিসে ঢুকে খোদ চেয়ারম্যানের দফতরের সামনে অনশনে বসে পড়েন। তাঁরা ২০১২ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। অভিযোগ, চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ওই প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত। মেধা-তালিকায় তাঁদের পিছনে নাম থাকা প্রার্থীরা চাকরি পেয়ে গেলেও তাঁরা কাউন্সেলিংয়ে ডাক পর্যন্ত পাননি।

কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও এখন তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে কী ভাবে?

আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, তাঁরা যখন নিয়োগ পরীক্ষায় বসেছিলেন, তখন বিএড প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল না। অথচ বিএড না-থাকায় এখন তাঁদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। এই যুক্তি দিয়ে তাঁদের অযোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন অনশনরত প্রার্থীরা।

আর কমিশনের দাবি, আদালতের রায় মেনেই ২০১২ সালের পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রশিক্ষিতদের অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে। চাকরির সুপারিশের ক্ষেত্রে কাউকে বঞ্চিত করা হয়নি। নিয়মবিধি মেনেই সব করা হয়েছে।

এসএসসি-র চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য জানান, আন্দোলনকারীরা যে-সব বিষয়ে শিক্ষকতার আবেদন জানিয়েছেন, সেগুলোর প্রায় সব পদই ভরে গিয়েছে। তাই তাঁঁদের চাকরির সুযোগ নেই। চেয়ারম্যান বলেন, “এসএসসি-তে নিয়োগ হয় বিষয়, লিঙ্গ, অঞ্চল, শ্রেণি সংক্রান্ত নির্দিষ্ট শর্ত মেনে। এই সব দিক বিচার করে কমিশনের নিয়ম মেনেই আন্দোলনকারী প্রার্থীদের নিয়োগপত্র দেওয়া সম্ভব নয়।” কমিশন সূত্রের ব্যাখ্যা, এসএসসি-র চূড়ান্ত মেধা-তালিকায় একটি পদের জন্য দেড় জনের নাম প্রকাশ করা হয়। অর্থাত্‌ ১০০টি পদের জন্য বেরোয় ১৫০ জনের নাম। সে-দিক থেকে বিচার করলেও মেধা-তালিকায় ঠাঁই পাওয়া সকলের চাকরি হওয়ার কথা নয়।

কমিশনের চেয়ারম্যান এ দিন পরিসংখ্যান দিয়ে জানান, ৪৬ হাজার ৪১৬টি পদের জন্য পরীক্ষা হয়েছিল। মেধা-তালিকায় নাম ছিল ৩৬ হাজার ১৪০ জনের। চার দফায় কাউন্সেলিং করে তাঁদের মধ্যে প্রায় ২৯ হাজার প্রার্থীর চাকরির সুপারিশ করা হয়েছে।” ফাঁকা পদগুলি মূলত গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের বলে দাবি সুবীরেশবাবুর। আর আন্দোলনকারীরা মূলত বাংলা, ইংরেজি, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোলের মতো কলা শাখার বিভিন্ন বিষয়ের প্রার্থী বলে তাঁরাই জানিয়েছেন। তবে বিজ্ঞানেরও কিছু প্রার্থী আন্দোলনে যুক্ত আছেন। কিন্তু সে-ক্ষেত্রে আবার অন্য শর্তগুলি পূরণ হচ্ছে না বলে কমিশনের দাবি।

যদিও আন্দোলনকারীরা এই ব্যাখ্যা মানতে রাজি নন। কমিশন দুর্নীতি করে প্রাপ্য সুযোগ থেকে তাঁদের বঞ্চিত করছে বলেই প্রার্থীদের অভিযোগ। অনশনকারীদের ব্যাপারে তিনি সরকারের সঙ্গে কথা বলতে পারেন বলে রবিবার আশ্বাস দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। প্রার্থীদের দাবি, এ দিন রাজভবন থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, ত্রিপাঠী শীঘ্রই তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন