ফাইল চিত্র।
কলকাতার ছবি স্বাভাবিক। কিন্তু কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা পরিবহণ ধর্মঘটের আংশিক প্রভাব পড়ল জেলায়। নদিয়া, পশ্চিম বর্ধমান, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া বা হুগলির ধনেখালি, পান্ডুয়া জিরাট, দাদপুর— এমন নানা জায়গাতেই মঙ্গলবার স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম ছিল বাস বা অন্যান্য পরিবহণ। উত্তরবঙ্গে মালদহ থেকে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার পর্যন্ত নানা জায়গায় বেসরকারি বাস-ট্রেকার প্রায় ছিল না। হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছিতেও ধর্মঘটের প্রভাব চোখে পড়েছে ভালই।
মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত নতুন পরিবহণ আইনের প্রতিবাদেই দেশ জুড়ে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল সিটু-সহ নানা শ্রমিক সংগঠন। যাতে সামিল ছিল না তৃণমূল এবং বিজেপির সংগঠন। সিটু বা অন্য কোনও সংগঠনই ধর্মঘট সফল করতে সক্রিয় ভাবে রাস্তায় নামেনি। তা সত্ত্বেও আংশিক ভাবে কেন প্রভাব ফেলল ধর্মঘট? তৃণমূল নেতাদের একাংশই একান্ত আলোচনায় স্বীকার করছেন, পুলিশি জুলুম এবং কিছু ক্ষেত্রে শাসক দলের সংগঠনের ‘জবরদস্তি’র বিরুদ্ধে পরিবহণ শ্রমিকদের একজোট করতে কিছুটা সফল হয়েছে সিটু।
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী সোমবারই দাবি করেছিলেন, ধর্মঘটের কোনও প্রভাব বাংলায় পড়বে না। ধর্মঘটের পরে এ দিনও তিনি বলেছেন, ‘‘গোটা রাজ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। পরিবহণ সচল রাখতে আমরা সফল। ধর্মঘটের জন্য কোথাও রাস্তায় বেরিয়ে গন্তব্যে যেতে পারেননি, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘যারা ধর্মঘট ডেকেছিল, তাদের কোথাও দেখা যায়নি! শুধু মালদহে সিটুর একটা মিছিল হয়েছে শুনেছি।’’
মন্ত্রী এমন কথা বললেও কার্যক্ষেত্রে আসানসোল, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, পুরুলিয়া বা সাঁতরাগাছিতে রাস্তায় নেমে বাস পাননি বহু যাত্রী। গোটা নদিয়া জেলা জুড়েই রাস্তায় বেসরকারি বাসের দেখা মেলেনি। এই সুযোগে কোথাও অটো, কোথাও টোটো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেছে বলে নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ। সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও কী ভাবে প্রভাব ফেলল ধর্মঘট? তৃণমূলের নদিয়া জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বক্তব্য, ‘‘কেন এমনটা হল, তা ট্রেড ইউনিয়নকে দেখতে বলা হয়েছে।’’ পুরুলিয়ায় আইএনটিটিইউসি নেতা প্রফুল্ল মাহাতোর যুক্তি, ধর্মঘটে তাঁরা কাজ করার জন্য কাউকে জোর করেননি। আবার পশ্চিম বর্ধমান তৃণমূল জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের ব্যাখ্যা, ‘‘জেলায় বাসকর্মী সংগঠন এখনও তৈরি করে উঠতে পারিনি। তাই এমন পরিস্থিতি হয়েছে।’’ আর হাওড়ার মন্ত্রী অরূপ রায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা না গেলেও জেলার এক নেতার মন্তব্য, ‘‘পুলিশি জুলুমের অভিযোগ নিয়ে সিটু নেতারা পরিবহণ কর্মীদের অনেকটাই এককাট্টা করতে পেরেছেন। এই জায়গায় আমাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার ছিল।’’
সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায় অবশ্য মনে করেন, ‘‘ভীতির পরিবেশ উপেক্ষা করেই অনেক জায়গায় পরিবহণ কর্মীরা ধর্মঘটে সাড়া দিয়েছেন।’’ নদিয়ার সিটু নেতা এস এম সাদির দাবি, ‘‘বাস শ্রমিকেরা প্রতিবাদে নেমে ধর্মঘটে সামিল হয়েছেন।’’
শিলিগুড়ি বা জলপাইগুড়়ি অবশ্য প্রায় স্বাভাবিক ছিল। উত্তরবঙ্গের এক ট্যুর অপারেটর সম্রাট সান্যালের বক্তব্য, ‘‘এই সময়ে পর্যটক তুলনায় কম। তবু বিমানবন্দর বা এনজেপি-তে গাড়ি থাকা নিশ্চিত করতে পুলিশ এবং স্থানীয় পরিবহণ সংগঠনের কিছু নেতাকে দেখা গিয়েছে।’’