আমরা-ওরার অভিযোগ জেলার রাস্তা সারানোতেও

রাস্তা মেরামতির কাজ চলতে চলতে সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত এলাকায় এসে তা থমকে যাওয়ায় এমনই অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৮ ০২:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

ভাই-ভাই ঠাঁই-ঠাঁইয়ের সংসারে ভাগের মায়ের ভাগ্যে অনেক সময়েই গঙ্গা জোটে না। রাজনৈতিক ভাগাভাগির আকচা-আকচিতে কি জখম রাস্তার ভাগ্যেও পিচ-পাথরকুচি জুটবে না? বঞ্চনা-বৈষম্যেই কি বাদ পড়ে যাবে সাড়ে তিন কিলোমিটার!

Advertisement

রাস্তা মেরামতির কাজ চলতে চলতে সিপিএম পরিচালিত পঞ্চায়েত এলাকায় এসে তা থমকে যাওয়ায় এমনই অভিযোগ উঠেছে।

২০১৫ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর-১ এবং বারুইপুর ব্লকের ঘাটুর মোড় থেকে কল্যাণপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত রাস্তা মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু করার বরাত পায় এক ঠিকাদার সংস্থা। ‘ওয়ার্ক অর্ডার’-এ পাঁচ বছরের জন্য রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা উল্লেখ করা হয়। আর মেরামতির কাজ তিন মাসের মধ্যে শেষ করার কথা ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সাড়ে তিন কিলোমিটার বাকি রেখেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থমকে গিয়েছে রাস্তা সারানোর কাজ।

Advertisement

রাস্তার কিছু অংশে মেরামতি আটকে থাকার ব্যাপারে বাসিন্দাদের বক্তব্যের সমর্থন মিলেছে ঠিকাদার সংস্থার কাছে। তাদের বক্তব্য, রাস্তার একটি অংশে ১২০০ মিটার ‘পাইলিং’ করা হয়েছে। টাকা শেষ হয়ে যাওয়ায় মাঝপথেই কাজ থমকে গিয়েছে। ফলে ওই এলাকার রামকৃষ্ণপুর, মহেশপুর, সোনাগাছি, গোপালপুর, কালিকাপুর-সহ বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা সমস্যায় পড়েছেন। কারণ, সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। রাস্তার কাজ কেন বাকি, তা নিয়ে সিপিএম এবং তৃণমূলের চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। কাজে ফাঁকির অভিযোগ তুলে এলাকায় ফ্লেক্স-লিখন চলছে। বিলি করা হচ্ছে প্রচারপত্রও।

ঘাটুর মোড় থেকে কল্যাণপুর রেল স্টেশন পর্যন্ত রাস্তাটি পড়ে তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে। আর ভাণ্ডারিয়া, শিখরবালি-২ এবং রসখালি— তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতই সিপিএম পরিচালিত। সেই জন্যই বাসিন্দাদের বঞ্চিত করা হল বলে রসখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মঙ্গল নস্করের অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘২০১৫-’১৬ সালের কাজ ২০১৮ সালে করার পরেও বাকি রাখা হল সাড়ে তিন কিলোমিটার। এবং এটা করা হল রাজনীতির জন্য।’’

২০১৬ সালে ওই রাস্তা মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের তথ্য বিষ্ণুপুরের তৃণমূল বিধায়ক দিলীপ মণ্ডলের উন্নয়ন সংক্রান্ত তথ্য সংবলিত বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছিল। এমনকী এই রাস্তা নির্মাণের প্রসঙ্গ ডায়মন্ড হারবারের তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ বইয়েও ঠাঁই পেয়েছে। রাস্তাটি তৈরি হয়েছিল ১৫-১৬ বছর আগে।

রাস্তা সারানোর মতো সামাজিক কাজেও আমরা-ওরা কেন?

সিপিএমের এমন অভিযোগ মানতে রাজি নন বিষ্ণুপুরের তৃণমূল বিধায়ক দিলীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পাইলিংয়ের জন্য টাকা খরচ করা হয়েছিল। সেই জন্য আপাতত ১০ কিলোমিটার রাস্তা করা গিয়েছে। বৈষম্যই যদি হবে, ভাণ্ডারিয়ায় কাজ করা হল কেন? ওটাও তো সিপিএমের পঞ্চায়েত। বৈষম্য নয়। আমরা সকলের উন্নয়নে বিশ্বাসী।’’ আর ঠিকাদার সংস্থার তরফে রহমতুল্লা মল্লিকের বক্তব্য, রাস্তার একটা অংশ খারাপ ছিল, তাই ইঞ্জিনিয়ারেরা পাইলিং করতে বলেছিলেন। সেই জন্য ১২০০ মিটারে কাজ করা হয়েছিল। বাকি সাড়ে কিলোমিটার করা যায়নি। ঠিকাদার সংস্থা জানাচ্ছে, কয়েক দিনের মধ্যে বাকি রাস্তা মেরামতির প্রক্রিয়া ফের শুরু হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন