জোর আন্দোলনে

গৌতম দেবের বদলে দায়িত্ব বাড়ল সুজনের

বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনে বিরাট কোনও পরিবর্তন আনল না আলিমুদ্দিন। তবু তার মধ্যেই দলে গুরুত্ব বাড়ল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৫ ০৩:৩৬
Share:

বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলের রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনে বিরাট কোনও পরিবর্তন আনল না আলিমুদ্দিন। তবু তার মধ্যেই দলে গুরুত্ব বাড়ল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর। ভবিষ্যতে দল চালানোর ভার কাদের হাতে যেতে চলেছে, সুজনের দায়িত্ব বৃদ্ধিতে তারই ইঙ্গিত আছে বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।

Advertisement

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে এত দিন ছাত্র শাখা দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন গৌতম দেব। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলনের জন্য দু’দিন আগেও বারুইপুরে গিয়ে সাধারণ সভা করে এসেছেন তিনি। যুব ফ্রন্টের দায়িত্ব ছিল মহম্মদ সেলিমের কাঁধে। কিন্তু গৌতমবাবু এখন পূর্ণ সুস্থ নন। উত্তর ২৪ পরগনার মতো বড় জেলার দায়িত্ব সামলে তাঁর পক্ষে দলের অন্যান্য কাজে পুরোপুরি সময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর সেলিম এখন পলিটব্যুরো সদস্য। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে তাঁকে আরও বড় ভূমিকায় নামতে হতে পারে। এ সব বিবেচনা করেই এ বার ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজনকে। সিপিএমের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে সুজন এখন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আস্থাভাজন। তাঁকে একই সঙ্গে ছাত্র ও যুব ফ্রন্টের দায়িত্বে এনে ভবিষ্যতের দল তৈরির কাজ অনেকটা হাতে তুলে দিতে চেয়েছেন সূর্যবাবুরা।

তবে এই রদবদলের সঙ্গে গৌতমবাবুর সাম্প্রতিক কংগ্রেস-সম্পর্কিত মন্তব্যের কোনও যোগ নেই বলেই আলিমুদ্দিন সূত্রের বক্তব্য। কারণ, সোম ও মঙ্গলবার দু’দিনের রাজ্য কমিটিতে অনুমোদনের আগে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে গৌতমবাবুর ওই মন্তব্যের আগেই। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে গৌতমবাবু এখন নিজের জেলাই দেখবেন। পলিটব্যুরোর সদস্য সেলিম ভার পেয়েছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার। যে জেলা থেকে তিনি এখন নির্বাচিত সাংসদ। সঙ্গে যৌথ দায়িত্ব হিসেবে থাকছে মালদহ ও কলকাতা জেলা। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘যে কোনও বিষয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে গেলে ছাত্র ও যুবদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দিনে আন্দোলনের কাজ জোরদার করার সুবিধার জন্যই এক জনের হাতে দু’টি শাখার দায়িত্ব এক সঙ্গে দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক বছরে সারদা-সহ নানা বিষয়ে রাস্তায় নেমে সবাইকে নিয়ে ধারাবাহিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সুজন।’’ দলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে সুজন বা গৌতমবাবু প্রকাশ্যে মুখ খোলেননি।

Advertisement

রাজ্য সম্পাদক হিসেবে বিমান বসু কিছু নির্দিষ্ট জেলার দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু গোটা রাজ্যে দল সামলানোয় নজর দিতে চেয়ে সূর্যবাবু এ বার নিজের হাতে কোনও জেলা একক ভাবে রাখেননি। তিনি যৌথ ভাবে দার্জিলিং এবং কলকাতার দায়িত্ব অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেবেন। সেই সঙ্গেই তিনি দেখবেন রাজ্য কমিটির তাত্ত্বিক মুখপত্রের কাজও। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধবাবু শারীরিক অসুস্থতার জন্যই এখন শহর থেকে বেশি দূরে যান না। তিনি এ বার দায়িত্ব নিয়েছেন কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার। তবে অন্য নেতাদের সঙ্গে। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে শ্রমিক ফ্রন্টে বর্ষীয়ান নেতা শ্যামল চক্রবর্তী, কৃষক ফ্রন্টে মদন ঘোষ ও মহিলা শাখায় সম্পাদকমণ্ডলীর নতুন সদস্য মিনতি ঘোষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলার মুখ্য দায়িত্ব শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের।

রাজ্য নেতৃত্বে দায়িত্বের রদবদলের পাশাপাশিই রাজ্য কমিটির শূন্য পদে এ বার আরও কিছু নতুন মুখ এনেছেন সূর্যবাবুরা। সুজনের জেলা থেকে প্রাক্তন বিধায়ক রাহুল ঘোষ ও কলকাতার নেতা কল্লোল মজুমদার রাজ্য কমিটির সদস্য হয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেই রাজ্য কমিটিতে স্থায়ী আমন্ত্রিত হিসেবে আনা হয়েছে প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, এসএফআই নেত্রী মধুজা সেন রায় এবং পুরুলিয়ার যুব নেতা প্রদীপ রায়কে। দলের প্রতি রাজ্য সম্পাদকের নির্দেশ, বিধানসভা ভোটের আগে স্থানীয় স্তরে আন্দোলন জোরালো করতে সিপিএমের বাইরে থেকেও নানা শ্রেণির মানুষকে নিয়ে বুথ সংগ্রাম কমিটি গড়ে ফেলতে হবে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন