ফাটলে পেম্বা, নেমেও তুলতে পারেননি দাদা

নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এসে পাসাং বললেন, ‘‘ওই বরফের ফাটলে একটা বাঁক ছিল। আমি যখন দড়ি বেয়ে সেই বাঁকের কাছাকাছি নেমেছি, উপর থেকে চেঁচিয়ে আমার ভাগ্নে পেম্বা শিরিং বলতে থাকে, ‘আর নেমো না। তা হলে তোমাকেও তুলতে পারব না।’ বাধ্য হয়ে আমায় উঠে আসতে হয়।’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৪
Share:

পেম্বা শেরপা। ফাইল ছবি

জম্মু ও কাশ্মীরে সাসের কাংরি-৪ শৃঙ্গ অভিযানে গিয়ে আর ফিরতে পারেননি পেম্বা শেরপা। দুই অভিযাত্রীর শৃঙ্গজয়ের পরে নামার সময়ে তিনি বরফের ফাটলে পড়ে গিয়েছিলেন। দড়ি বেয়ে নেমেও তাঁকে তুলতে পারেননি দাদা পাসাং শেরপা।

Advertisement

শুক্রবার নদিয়ার কৃষ্ণনগরে এসে পাসাং বললেন, ‘‘ওই বরফের ফাটলে একটা বাঁক ছিল। আমি যখন দড়ি বেয়ে সেই বাঁকের কাছাকাছি নেমেছি, উপর থেকে চেঁচিয়ে আমার ভাগ্নে পেম্বা শিরিং বলতে থাকে, ‘আর নেমো না। তা হলে তোমাকেও তুলতে পারব না।’ বাধ্য হয়ে আমায় উঠে আসতে হয়।’’ ১২ জুলাই সকাল ৮টা নাগাদ ৭৪১৬ মিটার উঁচু শৃঙ্গে পৌঁছয় দলটি। অভিযাত্রী দলে ছিলেন মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কৃষ্ণনগরের (ম্যাক) সদস্য বিশ্বনাথ সাহা এবং পুণের অনিল রেটেয়ারি। তিন অভিজ্ঞ শেরপা পেম্বা, শিরিং আর লাকপা শেরপাকে নিয়ে তাঁরা শৃঙ্গে ওঠেন। পরের দিন সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ তাঁরা দু’নম্বর ক্যাম্প থেকে এক নম্বরের দিকে নামছিলেন। প্রথম ছিলেন দুই অভিযাত্রী। ক্যাম্প গুছিয়ে পিছনেই আসছিলেন তিন শেরপা।

নীচে বেসক্যাম্পে অপেক্ষায় ছিলেন ম্যাকেরই সদস্য, এভারেস্ট-জয়ী বসন্ত সিংহরায়। কৃষ্ণনগরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি জানান, এক নম্বর ক্যাম্পের কাছেই এক জায়গায় এসে পেম্বার সন্দেহ হয়, বরফের নীচে ফাটল আছে। তা পরখ করতে যেতেই বরফ ধসে ফাটলের মধ্যে পড়ে যান তিনি। বিপদ বুঝে বাকি দুই শেরপা অভিযাত্রীদের নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে আবার ফিরে যান। তাঁরা পেম্বাকে তুলতে পারেননি। ওই দিনই দলটির বেসক্যাম্পে নেমে আসার কথা ছিল। অভিযাত্রীরা খুব ক্লান্ত থাকায় পাসাংকে দিয়ে কিছু খাবার এক নম্বর ক্যাম্পে পাঠান বসন্ত। দুই শেরপা তাঁকে সব জানায়। ক্যাম্প থেকে নাইলনের দড়ি নিয়ে তিন জন ফের যান ফাটলের মুখে। দড়ি বেয়ে নামেন পাসাং। তাঁর কথায়, ‘‘মনে হল, যেন কিছুটা নীচে বাঁকের কাছে ওর স্যাকটা এক বার দেখলাম। কিন্তু আর নামার উপায় ছিল না।’’

Advertisement

পরে বেসক্যাম্প থেকে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই পাঁচ জন শেরপা ফাটলে নামার চেষ্টা করেন। কিন্তু পেম্বার খোঁজ মেলেনি। বসন্ত বলেন, ‘‘ও ছিল আমার দশ বছরের ছোট। ’৯৯ সাল থেকে কত অভিযানে গিয়েছি। ও নেই, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন