দিল্লি পুলিশ করছে ১২ দিনে, অন্ধ্রপ্রদেশ ১৫ দিনে, গোয়া ১৬ দিনে। হায়দরাবাদ পুলিশ তো মাত্র তিন দিনে! আর সেই একই কাজ পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতা পুলিশ করতে লাগাচ্ছে ৭৪ দিন!
পাসপোর্ট পেতে গেলে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট থাকাটা জরুরি। সারা দেশের গড় হিসেব অনুযায়ী ওই রিপোর্ট দেওয়ার জন্য তথ্য যাচাইয়ে সময় লাগছে ৪২ দিন। কিন্তু এ রাজ্যের পুলিশ নিচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি সময়।
পাসপোর্টের তথ্য সংগ্রহ করে জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে হায়দরাবাদ পুলিশ বলতে গেলে বিপ্লব এনে দিয়েছে। সেখানে হাতে আই-প্যাড নিয়ে ঘুরছেন ২৫ জন অফিসার। পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা পড়লেই আবেদনকারীর তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে সেই আই-প্যাডে। এক-এক জন অফিসারকে এক-একটি এলাকার দায়িত্ব দেওয়া রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তিনি পৌঁছে যাচ্ছেন আবেদনকারীর বাড়িতে। তথ্য যাচাই করে আই-প্যাড থেকেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছেন ঊর্ধ্বতন অফিসারের কাছে। তাঁর কাছে আর এক দফা যাচাই হয়ে পাসপোর্ট দফতরে রিপোর্ট পৌঁছতে সময় লাগছে সাকুল্যে তিন দিন।
শনিবার কলকাতায় এসে এ কথা জানিয়েছেন ভারতের মুখ্য পাসপোর্ট অফিসার তথা বিদেশ দফতরের যুগ্মসচিব মুক্তেশ পরদেশি। হায়দরাবাদকে মডেল করে গোটা দেশে একই ব্যবস্থা চালু করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি। মাত্র তিন মাস আগে হায়দরাবাদে এই ব্যবস্থা চালু করে খুবই সুফল মিলেছে। এ দিনই তিনি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং কলকাতা পুলিশের কমিশনারের সঙ্গে।
আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করতে এ রাজ্যে এত বেশি সময় লাগে কেন?
মুক্তেশ পরদেশি এবং কলকাতার রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসার গীতিকা শ্রীবাস্তব জানান, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় একশো শতাংশ আবেদনকারীকেই সন্দেহের চোখে দেখা হয়। মুক্তেশের কথায়, ‘‘এর ফলে প্রায় সবারই হেনস্থা হয়। সন্দেহজনক ব্যক্তিকে আলাদা করে নিয়ে বাকিদের ক্ষেত্রে যাচাইয়ের কাজ দ্রুত সেরে ফেললে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ গীতিকা জানান, বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানিয়ে দিচ্ছে, আবেদনকারীর জন্মস্থান যাচাই করা যায়নি। এমন উদাহরণও রয়েছে, এক বার বিরূপ রিপোর্ট পাঠানোর এক মাসের মধ্যেই আবার একই থানা ব্যক্তিকে ছাড়পত্র দিয়েছে। গীতিকা জানান, আবেদনকারী ভারতীয় কি না, মূলত সেটাই যাচাই করার কথা। এমন উদাহরণও রয়েছে, আবেদনকারীর বাবা-মা ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও, তাঁর জন্মস্থান নিয়ে বিরূপ রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ।
তবে কি বাংলাদেশ লাগোয়া বলেই যাচাইয়ের ক্ষেত্রে পুলিশ অতি সতর্ক? গীতিকা অবশ্য তা মনে করেন না। জানান, বাংলাদেশ লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলায় রিপোর্ট দিতে পুলিশের কিন্তু তুলনায় কম সময় লাগছে। রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেল জি এম পি রেড্ডির কথায়, ‘‘পুলিশের এই যাচাই করার ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজতে সব ধরনের পরামর্শকে স্বাগত জানানো হবে।’’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ জানান, কলকাতা পুলিশের হিসেব মতো তথ্য যাচাই করতে সময় লাগছে গড়ে ৩০ দিন। তাঁর কথায়, ‘‘আরও উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। কী ভাবে, তা নিয়ে মুখ্য পাসপোর্ট অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’