আইডি-র মেঝেতে মৃত্যু, রোগ অধরাই

গত রবিবার থেকে জ্বর ও পেটের সমস্যায় ভুগছিলেন মিকাইল। বাড়ির লোকেরা ডেঙ্গি সন্দেহ করেছিলেন। বুধবার ছোট জাগুলিয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষাও হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছিলেন ডেঙ্গি নয়, ডায়রিয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩০
Share:

মিকাইল মণ্ডল

গায়ে জ্বর। পেটে অসহ্য যন্ত্রণা। শুক্রবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছিলেন মিকাইল মণ্ডল (৩৫)। তাঁকে ভর্তি করাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন স্ত্রী সাকিরা বিবি। ঘণ্টা দুয়েক পরে ভর্তির প্রক্রিয়া যখন শেষ হয়, তখন আর চিকিৎসার তেমন প্রয়োজন ছিল না উত্তর চব্বিশ পরগনার ছোট জাগুলিয়ার বাসিন্দা মিকাইলের। হাসপাতালের মেঝেতেই মারা গিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, মিকাইল ডায়রিয়ার রোগী ছিলেন।

Advertisement

গত রবিবার থেকে জ্বর ও পেটের সমস্যায় ভুগছিলেন মিকাইল। বাড়ির লোকেরা ডেঙ্গি সন্দেহ করেছিলেন। বুধবার ছোট জাগুলিয়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রক্ত পরীক্ষাও হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জানিয়েছিলেন ডেঙ্গি নয়, ডায়রিয়া হয়েছে। ওষুধ দিয়ে বা়ড়ি পাঠানো হয় মিকাইলকে। কিন্তু এ দিন ভোরে ফের তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কর্তব্যরত চিকিৎসক লালু দত্তের বক্তব্য, ‘‘ডায়রিয়ার চিকিৎসার শয্যা এবং পর্যাপ্ত পরিকাঠামো এখানে রয়েছে। কিন্তু রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।’’ অভিযোগ, এ দিন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্যালাইন দেওয়ার চেষ্টা হলেও কর্মীরা নাকি মিকাইলের শিরাই খুঁজে পাননি। বারাসত জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয় তাঁকে। লালুবাবুর দাবি, সেটা উন্নত চিকিৎসার জন্যই।

কিন্তু জেলা হাসপাতাল মিকাইলকে কলকাতায় রেফার করে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, ডেঙ্গিতে লিভার অকেজো হওয়ার ঘটনা আকছার ঘটছে। তেমনই কিছু কি সন্দেহ করেছিলেন ডাক্তারেরা? মিকাইলের পরিবারের দাবি, রক্ত পরীক্ষার কোনও রিপোর্ট তাঁরা পাননি। ফলে অসুখটা নিয়ে তাঁদেরও ধন্দ রয়েছে। বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ দিন প্রথমে জানান, রোগীর আত্মীয়দের চাপেই তাঁরা রেফার করেছিলেন। যদিও পরে শোনা যায় অন্য কথা। সুপার সুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘আশঙ্কাজনক অবস্থায় অ্যাকিউট গ্যাস্ট্রোএন্টারাইটিস আক্রান্ত ওই রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়। কিন্তু রোগীর পরিবার কলকাতায় নিয়ে যেতে চাইছিলেন। তাই বন্ডে সই করিয়ে রোগীকে পাঠানো হয়।’’

Advertisement

সকাল ১০টায় বেলেঘাটা আইডি-তে পৌঁছেও কেন দু’ঘণ্টা বিনা চিকিৎসায় পড়ে রইলেন মিকাইল? প্রশ্ন তুলতেই তা উড়িয়ে অধ্যক্ষ উচ্ছল ভদ্রের দাবি, ‘‘ভর্তির পঞ্চান্ন মিনিট পরে মারা গিয়েছেন মিকাইল। তত ক্ষণ চিকিৎসার কোনও ত্রুটি হয়নি।’’ তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ডায়রিয়া আক্রান্তকে কেন রবিবার থেকে কার্যত বিনা চিকিৎসায় রাখা হল সেটা বোধগম্য হচ্ছে না।’’

দায় নিচ্ছে না কেউই। শোকার্ত সাকিরা বলছেন, ‘‘কোথাও গিয়ে চিকিৎসা পেলাম না! ডাক্তারবাবুরা একটু দায়িত্ব নিয়ে দেখলে ও হয়তো বেঁচে যেত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন