শাঁখ বাজা সেই রাত এখনও মনে আছে

Advertisement

অনল আবেদিন

বহরমপুর শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৪৮
Share:

ভাগীরথীর উপর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুতে শনিবার তাপ্পি দেওয়া চলছে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

জন্মলগ্নেই ভয় ধরিয়ে দিয়েছিল সে!

Advertisement

আঁধার রাতে ভাগীরথীর জলে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছিল নির্মীয়মাণ রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতুর একটা বড় অংশ। বিকট শব্দে চমকে উঠেছিল বহরমপুর, ভূমিকম্প নয় তো! নদীর দু’পাড়ের বহু বাড়িতেই রাত জুড়ে বেজেছিল শাঁখ। বহরমপুরের পুরনো মানুষদের অনেকেরই সে রাত এখনও মনে আছে।

পরের বাহান্ন বছরে ভাগীরথী দিয়েভেসে গিয়েছে অনেক জল। কিন্তু সেই ভয় আজও মাঝে মাঝে নিশ্চুপে হানা দেয়, মাঝেরহাট সেতু-পতনের পরে যা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছে বহরমপুরে। পোস্তা কিংবা মাঝেরহাট— সেতু ভাঙার খবর পেলেই চলকে ওঠে সেই হারানো ভয়। স্থানীয়রা সান্ধ্য আলোচনায় বিড়বিড় করেন, সেতু যে কাঁপে। এ বার কি তা হলে আমাদের রামেন্দ্রসুন্দর...?

Advertisement

এ পাড়ে খাগড়া, সেতু পার হলেই বহরমপুর শহর— মাঝে রামেন্দ্রসুন্দর। সেতুটি দেখভালের দায়িত্বে আছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়া, ডিভিশন ২ (মালদহ বিভাগ)। বুধবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে এনএইচআইয়ের মালদহ বিভাগের ম্যানেজার রাজু কুমার সেতুটি সরেজমিনে পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি, বলেন, ‘‘যে প্রযুক্তিতে ওই সেতুটি তৈরি হয়েছে, তাকে ‘ব্যাল্যান্স ক্যান্টি লিভার’ প্রযুক্তি বলা হয়। ওই প্রযুক্তির ফলে যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটি কাঁপতে থাকাটাই স্বাভাবিক। বরং না কাঁপলেই বুঝতে হবে সেতুর কোনও গন্ডগোল হয়েছে।’’ পাড়ার মোড়ে মোড়ে আড্ডায় তবুও ঢুকে পড়ে— ‘সেতুটা ইদানিং বড় কাঁপছে হে!’

রাজু কুমারের সংযোজন, ‘‘এই সেতুতে ৬টি ‘এক্সপ্যানশন জয়েন্ট’ আছে। সেগুলি পাল্টে নতুন জয়েন্ট দিতে হবে। তার জন্য হপ্তা চারেক সেতু বন্ধ রাখতে হবে।’’ কিন্তু, উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গঙ্গা উজিয়ে যাওয়ার আর তো কোনও সেতু নেই। অগত্যা, আলোচনাতেই থমকে রয়েছে সেই প্রস্তাব। তিনি জানান, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে ‘ফোর লেন’ করার কাজ চলছে কয়েক বছর ধরে। সেই ‘ফোর লেন’ যাবে রামেন্দ্রসুন্দর সেতু থেকে প্রায় ১২-১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে সারগাছি-বলরামপুর এলাকার নির্মীয়মাণ বাইপাস দিয়ে। সেই রাস্তার জন্যও ভাগীরথীর উপরে সেতু নির্মাণ হচ্ছে। ওই বাইপাস চালু হবে ২০২০ সাল নাগাদ। তখন রামেন্দ্রসুন্দর সেতু না হয় মাসখানেক বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু তত দিনে যদি কিছু ঘটে যায়? প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

সেই মুশকিল আসান করতে জেলা প্রশাসনের কাছে রাজু কুমারের প্রস্তাব, ‘‘রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সেতু দিয়ে যেন অতিরিক্ত পণ্য বোঝাই যানবাহন চলাচল না করে।’’

উত্তরবঙ্গ ও উত্তর পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সড়কপথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। বহরমপুরে ভাগীরথীর উপরের ওই সেতুটি নদীর দু’পাড়ের ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ককে সংযুক্ত করেছে। ফলে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যান নিয়ন্ত্রণ করা কি সম্ভব? মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারের কপালে ভাঁজ— ‘‘কড়া নজর তো রেখেছি, দেখা যাক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন