ভাঙড়ে ফের কেন সব্যসাচী, বিক্ষোভ

ভাঙড়-কাণ্ডে ‘বহিরাগত তত্ত্ব’ যেন ব্যুমেরাং হয়ে ফিরল প্রশাসনের কাছে! পাওয়ার গ্রিড নিয়ে ভাঙড়ে অশান্তির দায় প্রথম থেকেই ‘বহিরাগত’দের উপর চাপাচ্ছে প্রশাসন। সেই অশান্তিতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে নকশাল সংগঠন সিপিআই (এমএল) রেড স্টারের নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরীকে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

ভাঙড় শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:৩৩
Share:

বকডোবায় বিক্ষুব্ধদের হুমকি দিচ্ছেন সব্যসাচী দত্ত।ফাইল চিত্র

ভাঙড়-কাণ্ডে ‘বহিরাগত তত্ত্ব’ যেন ব্যুমেরাং হয়ে ফিরল প্রশাসনের কাছে!

Advertisement

পাওয়ার গ্রিড নিয়ে ভাঙড়ে অশান্তির দায় প্রথম থেকেই ‘বহিরাগত’দের উপর চাপাচ্ছে প্রশাসন। সেই অশান্তিতে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে নকশাল সংগঠন সিপিআই (এমএল) রেড স্টারের নেত্রী শর্মিষ্ঠা চৌধুরীকে। কিন্তু সব্যসাচী দত্তকে কেন গ্রেফতার করা হবে না, এই প্রশ্ন তুলে শুক্রবার ভাঙড়ের মাছিভাঙা থেকে লাউহাটি পর্যন্ত মিছিল করলেন আন্দোলনকারীরা। মাছিভাঙায় আন্দোলনকারীরা রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের নবম ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডান্ট কঙ্করপ্রসাদ বারুইকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। আগের দিনই ভাঙড়ে দলবল নিয়ে অবরোধ তুলতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হন তিনি।

রাজারহাট-নিউটাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে কেন এত ক্ষোভ? গত বুধবার পুলিশের ‘ভাঙড় দখল’-এর রাতেই গ্রেফতার হন নকশাল নেত্রী শর্মিষ্ঠা। তার পরেই মাছিভাঙা, খামারআইট, বকডোবা, শ্যামনগর-সহ কয়েকটি এলাকায় গাছের গুঁড়ি ফেলে এবং রাস্তা কেটে ফের অবরোধ শুরু হয়। সেই অবরোধ সরাতে বৃহস্পতিবার নিজের দলবল নিয়ে ফের ভাঙড়ে যান সব্যসাচীবাবু। এর আগে, গত মঙ্গলবারও অবরোধ সরাতে গিয়েছিলেন সব্যসাচীবাবু। তখন কোনও গোলমাল না হলেও বৃহস্পতিবার ভাঙড়ের ‘অন্য চেহারা’ দেখেন তিনি। সব্যসাচীবাবুর উপরে চড়াও হওয়ার অভিযোগ ওঠে আন্দোলনকারীদের একাংশের বিরুদ্ধে। ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যান সব্যসাচীবাবু। শুরু হয় ইট-বৃষ্টি। তার মধ্যেই পুলিশ গাড়িতে চাপিয়ে বার করে দেয় বিধায়ককে। এলাকাবাসীর একাংশের অভিযোগ, অবরোধ সরানোর নাম করে গুলি-বোমা ছোড়ে বিধায়কের সঙ্গীরা।

Advertisement

অভিযোগ, চাঁদপুর গ্রামে অবরোধ তোলার সময়ে বিধায়কের দলের এক জন তাঁদের দিকে ইট ছোড়ে। এর পর সব্যসাচীবাবু সদলবল পাওয়ার গ্রিডের দিকে এগিয়ে যান। আন্দোলনকারীদের একাংশের অভিযোগ, তখন বিধায়কের দলবল শূন্যে সাত রাউন্ড গুলি চালায় এবং ফাঁকা জায়গায় গোটা চারেক বোমা মারে। ঠিক এই সময়েই আন্দোলনকারীদের একাংশ দু’দিক থেকে বিধায়ক এবং তাঁর বাহিনীকে ঘিরে ফেলেন। তাঁদের অনেকের মন্তব্য, ‘‘শর্মিষ্ঠাদেবী যদি বহিরাগত হওয়ার অপরাধে গ্রেফতার হন, তা হলে সব্যসাচী ও তাঁর দলবলকেও গ্রেফতার করতে হবে। ওরাও বহিরাগত। ওদের গুন্ডামি সহ্য করা হবে না।’’ ঘটনাচক্রে, পাওয়ার-গ্রিড লাগোয়া চাঁদপুর এলাকাটি সব্যসাচীর বিধানসভা এলাকার মধ্যেই পড়ে। পোলেরহাট, খামারআইট, মাছিভাঙার মতো ভাঙড়ের অন্য ‘উত্তপ্ত’ এলাকাগুলি অবশ্য ভাঙড় বিধানসভার অন্তর্গত।

পুলিশকর্তারা বিধায়ককে মুক্ত করার জন্য বাহিনী নিয়ে পাওয়ার গ্রিডের সামনে পৌঁছন। তখন সব্যসাচীবাবু মোবাইলে আরাবুলের সঙ্গে চিৎকার করে কথা বলছিলেন বলে অনেকের দাবি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আরাবুল সঙ্গীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। কিন্তু আন্দোলনকারীদের রণংদেহী মূর্তি দেখে আরাবুল-বাহিনী আর এগোয়নি। সঙ্গীদের বিরুদ্ধে ওঠা বোমা-গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে সব্যসাচীবাবু পরে বলেন, ‘‘অবরোধ সরাতে গিয়েছিলাম। কিছু স্বার্থান্বেষী লোক শর্মিষ্ঠাদেবীকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে, এই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। তাদের বলেছি, এটা প্রশাসনের বিষয়। প্রশাসনই বলতে পারবে।’’ শর্মিষ্ঠাদেবীর গ্রেফতারি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘রেড, হোয়াইট স্টার যা-ই হোক, অশান্তি পাকালে চুনকাম করে দেব!’’

বৃহস্পতিবার সব্যসাচীর ডাকে আরাবুল নিজের বাহিনী নিয়ে ফের ভাঙড়ে আসায় আন্দোলনকারীদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। আরাবুল বাহিনীর ‘অত্যাচারে’ জমি হারানো মানুষ এতে ফের এককাট্টা হয়ে যান। অবরোধ তুলে নিলেও আরাবুল এবং জমি-মাফিয়া বিরোধী আন্দোলন কলকাতা-সহ অন্যত্র ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

পুলিশকর্তারা মানছেন, ‘‘পুলিশ-প্রশাসনকে না জানিয়েই সব্যসাচীবাবু ভাঙড়ে গিয়েছিলেন। এতে আন্দোলনকারীরাই বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছেন।’’ এ দিনই ইছাপুর ছাইগাদার মাঠে বিজেপির সভায় ছিলেন লকেট। সেখানে তৃণমূল ও মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, ‘‘শাসক দলের দুই নেতার লড়াইয়ে মার খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অথচ স্থানীয় দুই নেতাকে সেখানে (ভাঙড়ে) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মুখ্যমন্ত্রী সব জেনেও শীতের ছুটি কাটাতে উত্তরবঙ্গে চলে গেলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন